ধর্মান্ধ শ্বশুর বাড়ির ইন্ধনেই জঙ্গি সংগঠনে চিকিৎসক দম্পতি
নিজস্ব প্রতিবেদক, সিরাজগঞ্জ : চাঞ্চল্যকর মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় নিষিদ্ধ জঙ্গী সংগঠন ‘ইমাম মাহামুদের কাফেলা’ এর ১০ সদস্য আটকের ঘটনায় সিরাজগঞ্জের চিকিৎসক দম্পতি সম্পৃক্তের ঘটনায় জেলা জুড়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। সিরাজগঞ্জের বাসিন্দা চিকিৎসক ডাঃ সোহেল তানজিম রানার স্ত্রী আয়শা ইসলাম হাফসা আটক ও তিনি পলাতক রয়েছেন।
এ ঘটনায় তার পরিবার ও কর্মক্ষেত্র চৌহালী উপজেলার এনায়েতপুর খাজা ইউনুস আলী মেডিকেল কলেজ এন্ড হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বিব্রত। তার বাবা সিরাজগঞ্জ সদরের পোড়াবাড়ি গ্রামের সাবেক মেম্বর হেলাল উদ্দিন একমাত্র ছেলের অপরাধের শাস্তি চেয়ে, তাদের অমতে নাটোরে বিয়ে করা ধর্মীয় গোড়ামীপনা শ্বশুর বাড়ির ইন্ধনেই এই পথে ধাবিত হতে পারে বলে আশংকা করেছে। এদিকে তাকে এলাকার মানুষ নিরহ ও শান্ত স্বভাবের বলে দাবি করেছে।
ডাঃ সোহেল তানজিম রানা তার ৩ ভাই বোনের মধ্যে সবার বড়। ছোট বেলা থেকেই মেধাবী ও শান্ত স্বভাবের হওয়ায় সবার আদরে বড় হয়েছেন তিনি। গ্রামের স্কুল ও হাইস্কুলে লেখাপড়া শেষ করে জেলার অন্যতম মেধাবী বিদ্যাপিঠ উল্লাপাড়া মোমেনা আলী বিজ্ঞান স্কুল এন্ড কলেজ থেকে এইচএসসিতে কৃতিত্বের সাথে পাশ করে ২০১৫ সালে রাজশাহী মেডিকেল কলেজে ভর্তি হন। সেখান থেকে এমবিবিএস পাশ করে গত ২০২২ সালের ৪ নভেম্বর সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর খাজা ইউনুস আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউ বিভাগে চাকুরীতে যোগদান করেন।
এরপর গত ১২ মে তিনি পরিবারের অমতে নাটোর সদরের চাঁদপুর বাজারে ধর্মান্ধ সাইদুল ইসলাম প্রামানিক (দুলাল) এর মেয়ে মাইশা ইসলাম হাফসাকে বিয়ে করেন। পরে কর্মস্থল সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুরে বাসা ভাড়া করে থাকতেন। হঠাৎ গত ২৫ জুলাই তারা নিখোঁজ হলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে পিতা হেলাল উদ্দিন থানায় ৩১ জুলাই জিডি করেন। এরপর শুক্রবার মৌলভীবাজারের কুলাউড়ার টাট্রিউলি গ্রামের পাহাড়ে জঙ্গি সংগঠন ‘ইমাম মাহামুদের কাফেলা’ এর প্রশিক্ষনের আস্তানায় বিশেষ অভিযান চালিয়ে বিষ্ফোরক দ্রব্য সহ ১০ জনকে আটক করে পুলিশ। বাকি সহযোগীরা পালিয়ে যায়।
এর মধ্যে চিকিৎসক ডাঃ তানজিম সোহেল রানার স্ত্রী মাইশা ইসলাম হাফসাও ছিল। তাদের আটকের খবর ছড়িয়ে পড়লে জেলা জুড়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। তাদের পোড়াবাড়ির বাড়িতে চলছে সানছুন নিরাবতা। পিতা হেলাল উদ্দিন ছেলের জঙ্গি সংশ্লিষ্টতা গুরুতর দেশ বিরোধী অপরাধ হিসেবেই দেখছেন। তবে এ কাজে জড়ানোর জন্য ধর্মান্ধ শ্বশুর বাড়ির ইন্ধনকে দায়ী করছেন তিনি। হেলাল উদ্দিন জানান, গত ২৫ মার্চ ছেলে ডাঃ সোহেল তানজিম রানার সাথে নাটোরের চাঁদপুর বাজার গ্রামের মাইশা ইসলাম আফসার সাথে স্যোসাল মিডিয়ায় প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠার সুবাদে শ্বশুর সাইদুল ইসলাম প্রামানিক (দুলাল) আমার বাড়িতে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আসে।
আপ্যায়নের পর তিনি বলেন, আপনারা আমার বাড়িতে যাবেন। তবে কথা আছে, আমার মেয়েকে দেখাবো না। সে পর্দা করে। শুধু কি তাই বাড়িতেও নেয়া যাবেনা। আপ্যায়ন করা হবে বাড়ির বাহিরে। কেউ আয়েশ করতে চাইলে মসজিদের ভিতরে বিছানা দেয়া হবে। এমন কথা শুনে হতভাগ হয়ে হেলাল উদ্দিন বলেন, আপনারা কি মুসলিম না বিধর্মী? এমন বিয়ে আয়োজনের কথা কখনো শুনিনি। এমন বিয়েতে আমার মত নেই। কোন ভাবেই যেন আমার ছেলের সাথে আপনার মেয়েকে যেন বিয়ে না দেয়া হয়। তার পরও কৌশলে আমাদের অমতে ডেকে নিয়ে বিয়ে দেয় দুলাল। এরপর থেকে আমার ছেলে ও তারা কোন যোগাযোগ করেনি।
এতে মনে হয়েছে ধর্মান্ধ শ্বশুর ও তার মেয়ের প্ররোচনায় আমার ছেলেকে জঙ্গি সংশ্লিষ্টায় আনা হয়েছে বলে তিনি অভিযোগ করেন। স্থানীয়রাও এ বিষয়ে একমত পোষন করলেন।
এছাড়া হেলাল উদ্দিন, তার ছেলের এমন দেশ বিরোধী কান্ডের শাস্তি দাবী করে বলেন। এমন পরিস্থিতি কোন পরিবার যাতে না পড়ে সেজন্য সবার দৃষ্টি রাখার আহবানও জানান ডাঃ সোহেলের বাবার।
এ ব্যাপারে মাইশা ইসলাম হাফসার বড় ভাই ওমর ফারুক জানান, আমরা ইসলামের অনুসারী বাড়ির সবাই পর্দা করে। তাই বিয়ে আয়োজন ঐভাবে প্রস্তাব দিয়ে ছিলাম। তবে আমরা কোন ভাবেই জঙ্গি সংশ্লিষ্টায় জড়িত না। আমরাও বুঝে উঠতে পারছিনা, কিভাবে তারা ঐ সংগঠনের সাথে যুক্ত হলো।
এদিকে ডাঃ সোহেল তানজিম রানার এলাকায় শান্ত স্বভাবের বলে পরিচিত। হঠাৎ স্ত্রী সহ তার জঙ্গি সংশ্লিষ্টতায় বিব্রত পরিবার সহ গ্রামবাসী। এজন্য প্রতিবেশী সিরাজুল ইসলাম, নজরুল ইসলাম শ্বশুর বাড়ির সম্পৃক্ততাকে দায়ী করেছেন।
বিষয়টি নিয়ে ডাঃ সোহেল তানজিম রানার কর্মস্থল খাজা ইউনুস আলী মেডিকেল কলেজ এন্ড হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ হতভাগ ও মর্মাহত। একজন চিকিৎসক কিভাবে জঙ্গি সংগঠনের সাথে যুক্ত হতে পারে? বললেন হাসপাতালের জনপ্রশাসন বিভাগের ডিপুটি ম্যানেজার কৌশিক আহমেদ।
তিনি জানান, গত ৯ মাস আগে আমাদের হাসপাতালের আইসিইউতে যোগদান করে তার কর্মজীবন পরিচালিত হচ্ছিল। হঠাৎ করে তিনি কাজে যোগদান না করলে তার বাবাকে অবহিত করি। পরে তার স্ত্রীরও হদিস না মেলায় বাবা হেলাল উদ্দিনকে ডেকে নিয়ে আমাদের মাধ্যমে থানায় জিডি করা হয়। পরে জানতে পারি তার স্ত্রী জঙ্গি সংশ্লিষ্টতায় আটক হয়েছেন। তিনিও পলাতক রয়েছেন। বিষয়টি শুনে আমরা চরম ভাবে বিব্রত ও মর্মামত হয়েছি।
এদিকে এনায়েতপুর থানার ওসি আনিছুর রহমান জানান, জিডি হবার পর থেকে আমরা চিকিৎসক পরিবারের সন্ধান পেতে নানা তৎপরতা চালাচ্ছি। এরমধ্যে একজন শুনেছি মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় জঙ্গি আস্তানা হতে আটক হয়েছে। বাকি ডাঃ সোহেলকে উদ্ধারেও পুলিশ তৎপরতা চালাচ্ছে।