ধর্ষণের পর হত্যা : সুষ্ঠ তদন্ত ও অপরাধীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন

প্রকাশিত: জানুয়ারি ২, ২০২০; সময়: ১১:২৬ অপরাহ্ণ |
ধর্ষণের পর হত্যা : সুষ্ঠ তদন্ত ও অপরাধীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন

নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজশাহীর পবা উপজেলার বারইপাড়া এলাকায় শিশু ধর্ষণের পর গলা কেটে হত্যার ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলার সুষ্ঠ তদন্ত ও প্রকৃত অপরাধীদের গ্রেফতার করে কঠোর শাস্তির দাবিতে রাজশাহী মহানগরীতে সংবাদ সম্মেলন করেছে ভুক্তভোগী পরিবার। বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে রাজশাহীর সিটি প্রেসক্লাবে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে ভুক্তভোগীর পরিবারের পক্ষ থেকে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন, মামলার বাদী ও নিহত স্কুলছাত্রী হাসিনা খাতুনের বাবা হোসেন আলী।

লিখিত বক্তব্যে তিনি অভিযোগ করে বলেন, কর্ণহার থানার বারইপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেণীতে আমার মেয়ে পড়াশোনা করতো। আমার ও শ্বশুর বাড়ি পাশাপাশি গ্রামে। শ্বশুর বাড়ি পবা উপজেলার কর্ণহার থানার বারইপাড়া গ্রামে। গত ২০১৮ সালের ডিসেম্বর মাসের ১৪ ও ১৫ তারিখে বারইপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মাদারের গান শোনার জন্য আমার মেয়ে তার নানা আকবরের বাড়িতে বেড়াতে যায়। ১৫ তারিখ রাত আনুমানিক ৮টার দিকে আমার শ্বশুর আকবর ও শাশুড়ি শাবানুর বেগম দু’জন হাসিনাকে বাড়িতে একা রেখে মেইন গেটে তালা লাগিয়ে মাদারের গান শুনতে যায়। তারা গান শুনে রাত আনুমানিক পৌনে ১২ টার দিকে নিজ বাড়িতে ফিরে দেখতে পান যে, কে বা কারা আমার মেয়ে হাসিনাকে ধর্ষণ করে গলা কেটে হত্যা করে ফেলে রেখেছে। ওই দিন রাতেই বিষয়টি আমাকে জানানো হয়। এ ঘটনায় আমি কর্ণহার থানায় অজ্ঞাতনামাদের আসামী করে একটি ধর্ষণ ও হত্যা মামলা দায়ের করি। মামলাটি দায়েরের কয়েকদিনের মধ্যেই সেটি পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিকেশন (পিবিআই) তে স্থানান্তর করা হয়। পিবিআই এর তৎকালীন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মহিদুল ইসলাম ২০১৯ সালের মার্র্চ মাসের ১৩ তারিখে আসামীদের না ধরে উল্টো আমার শ্বশুর আকবর আলীকে গ্রেফতার করে। এ ঘটনায় আমরা হতবাক হয়ে যায। শ্বশুর ৪ মাস ১২ দিন কারাগারে ছিলেন।

এরপর জুলাই মাসে হাসিনার নিজের মামা অর্থ্যাৎ আমার শ্যালক নাজমুল হক বাচ্চুকেও গ্রেফতার করে পিবিআই’র এসআই মহিদুল ইসলাম। আটকের আমার শ্যালক বাচ্চুকে পুলিশ স্বীকারোক্তি আদায়ের জন্য নির্যাতন করে বলে আমার শ্যালক জানিয়েছে।

পরে উচ্চ আদালত থেকে আমি নিজেই তাদের জামিনের ব্যবস্থা করি। অথচ ঘটনার দিন আমার শ্যালক বাড়িতে ছিলো না। ঘটনার আগে থেকে ৪ দিন ধরে তার বড় বোন রেবেকা সুলতানার বাড়িতে ছিলো। বিষয়টি প্রতিবেশী ও স্থানীয়রা সবাই জানেন। ঘটনার রাতেও আমার শ^শুর ও শাশুড়ি মাদারের গান শুনেছিল তার সাক্ষী প্রায় পুরো গ্রামের মানুষ। পুলিশকেও বিষয়টি একাধিকবার জানানো হয়েছে। অজ্ঞাত কারণে পিবিআই’র এসআই আমার শ^শুর ও শ্যালককে গ্রেফতার করে। মামলার বাদী হিসেবে আমি পিবিআই’র এসআই মহিদুলকে সন্দেহভাজন দুইজন আসামীর নাম বলি। সন্দেহভাজন দুইজনই প্রভাবশালী হওয়ায় পুলিশ আমাদের কথা কর্ণপাত করেনি। বরং কিছু বলতে গেলে আমাকেই হুমকি দিয়েছে।

তিনি আরো অভিযোগ করে বলেন, পিবিআই’র তৎকালীন তদন্তকারী কর্মকর্তা প্রকৃত অপরাধীদের আড়াল করার জন্য আমর নির্দোষ শ^শুর ও শ্যালককে দোষারোপ করছে। আমার শ্বশুর ও শ্যালক এ ঘটনার সাথে কোনভাবেই জড়িত নয় বলে আমরা বিশ্বাস করি। কারণ আমার মেয়ে ছোট থেকে সে বাড়িতে মানুষ হয়েছে।

এদিকে, ঘটনাস্থল থেকে পিবিআই আলামত সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য ঢাকায় পাঠায়। সেই আলামত পরীক্ষার রিপোর্ট ভালো দেয়ার নাম করে আমার শ্বশুর আকবর আলীকে দিলীপ কুমার সাহা নামে পরিচয় দিয়ে গত ২০১৯ সালের আগস্ট মাসের ৮ তারিখে ০১৪০৪-৪৫৮১৬৯ নম্বর থেকে কল দিয়ে ঘুষ চাওয়া হয়। ঘুষ চেয়ে বলেন, যে আলামত পাওয়া গেছে সেটি ফরেনসিক বিভাগ থেকে পরীক্ষা করা হবে। রিপোর্ট আপনাদের পক্ষ দিতে হলে খরচ দিতে হবে। টাকা বিকাশে পাঠিয়ে দেন অথবা ঢাকায় নিয়ে আসেন। আমরা ওই কথোপকথন রেকর্ড করে রেখে পিবিআইকে দিলেও তারা কোন ব্যবস্থা নেয়নি। উক্ত নম্বরের কোন অস্তিত্ব নেই বলে এসআই মহিদুল আমাদেরকে জানিয়েছে।

কোর্ট এপিডেভিটের মাধ্যমে মামলার বাদী হিসেবে আমি আমার শ্বশুর ও শ্যালক নির্দোষ বলে ঘোষণা দিয়েছি। তারপরও পুলিশ কথা শুনছেনা। শ্বশুর ও শ্যালকের ব্যাপারে আমার কোন অভিযোগ নেই। এ অবস্থায় আমরা খুব সমস্যার মধ্যে আছি। মামলাটি সুষ্ঠ তদন্ত করা প্রয়োজন। বর্তমানে মামলাটি তদন্ত করছেন পিবিআই’র এসআই গৌতম।

এ বিষয়ে মামলার আগের তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মহিদুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আসামীদের সাথে ডিএনএ ম্যাচ করায় ও বাদীর শ্বশুরের চলাফেরা আচরণ সন্দেহজনক হওয়ার কারণে তাদের গ্রেফতার করা হয়। নানাকে গ্রেফতারের ৪ মাস পর শ্যালককে কেন গ্রেফতার করলেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নানার মাধ্যমেই কোন ক্লু পাওয়া যায় কিনা তাই গ্রেফতার করা হয়েছিল। পরে বাদীর শ্যালককে সন্দেহ হওয়ায় তাকে গ্রেফতার করা হয়। বাদী পক্ষ যাদের সন্দেহভাজন বলে আপনাদের জানিয়েছে তাদের কেন জিজ্ঞাসাবাদ করেননি এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিষয়টি আমার কাছে বিশ্বাসযোগ্য মনে হয়নি তাই করেনি। আমার বিরুদ্ধে উঠা অভিযোগ সত্য নয়। আমি সুষ্ঠ তদন্তের চেষ্টা করেছি।

বর্তমান মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই গৌতমের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, মামলা তদন্তরে স্বার্থে আমি কোন মন্তব্য করতে চাচ্ছি না।

সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন, বাদীর স্ত্রী নাজমা বেগম, জেসস রেবেকা সুলতানা, জেসসের শাশুড়ি মৃত মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী অমেলা বেওয়া, আব্দুল মান্নান, শিলা বেগম, বাদীর শ্বশুর আকবর আলী ও শ্যালক নাজমুল হক বাচ্চু।

পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে