ফের দুশ’র দিকে পেঁয়াজের দাম, অজুহাত বৃষ্টি
পদ্মাটাইমস ডেস্ক : বছরের শুরুতেই আবারও অস্থির পেঁয়াজের বাজার। গত তিন দিনে লাফিয়ে লাফিয়ে পেঁয়াজের দাম কেজিতে বেড়েছে ৭০-৮০ টাকা। ফলে খুচরা বাজারে আবারও ডাবল সেঞ্চুরির পথে পেঁয়াজের দাম। ব্যবসায়ীদের এবারের অজুহাত বৃষ্টি।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ভারতের রফতানি বন্ধ। চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম থাকাসহ নানা কারণে গত বছরের শেষভাগে পেঁয়াজের বাজার অস্থির ছিল। পরে সরকারের নানামুখী পদক্ষেপ আর নতুন পেঁয়াজ বাজারে আসায় কিছুটা নিম্নমুখী ছিল নিত্যপ্রয়োজনীয় এ পণ্যের দাম। কিন্তু কয়েক দিন ধরে দেশের বিভিন্ন জায়গায় গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। সঙ্গে তীব্র শীতও রয়েছে। যে কারণে ক্ষেত থেকে পেঁয়াজ উঠাতে পারছেন না কৃষক। ফলে সরবরাহ কমায় আবার বেড়েছে দাম।
শনিবার (৪ জানুয়ারি) রাজধানীর বিভিন্ন খুচরা ও পাইকারি বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নতুন বছরের প্রথম দিন থেকেই বাজারে পেঁয়াজের দাম বাড়তে থাকে। গত তিন দিনে পাইকারি বাজারে দেশি পেঁয়াজের কেজিপ্রতি দাম বেড়েছে ৪০-৫০ টাকা আর খুচরায় ৭০-৮০ টাকা।
এদিন সকালে খুচরা বাজারে ভালো মানের দেশি পেঁয়াজ কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ১৬০-১৯০ টাকায়, যা এক সপ্তাহ আগেও ছিল ১০০-১২০ টাকা। চীন-মিসরের বড় পেঁয়াজ প্রতি কেজি ৮০-১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এক সপ্তাহ আগে যা ছিল ৫০-৬০ টাকা।
পুরান ঢাকার শ্যামবাজারের পাইকারি পেঁয়াজ ব্যবসায়ী মেসার্স আলী ট্রেডার্সের পরিচালক মো. সামসুর রহমান জানান, গত তিন দিন পেঁয়াজের সরবরাহ কম থাকায় শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত বাজার চড়া ছিল। গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি আর তীব্র শীতের কারণে কৃষক ক্ষেত থেকে পেঁয়াজ ওঠাতে পারেননি। এ কারণে বাজারে পেঁয়াজ কম এসেছে। ফলে দাম বেড়েছে। আজ (শনিবার) বাজার একটু কমতির দিকে। আগামী দু-তিন দিনে দাম আরও কমে যাবে। আবহাওয়া ভালো থাকলে কৃষক ক্ষেত থেকে পেঁয়াজ ওঠাতে পারবেন। বাজার স্বাভাবিক হবে।
তিনি জানান, আজ পাইকারি বাজারে মুড়িকাটা জাতের দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয় ১৩০-১৪০ টাকায়। আমদানি করা মিসরের পেঁয়াজ বিক্রি হয় ৭৫-৮০ টাকা, পাকিস্তানি পেঁয়াজ ১২৫-১৩০ এবং চায়না ৬০-৬৫ টাকা।
বাজার নিয়ন্ত্রণকারী সরকারি সংস্থাগুলোকে সতর্ক করে এ ব্যবসায়ী বলেন, ‘বাজারে আমদানি পেঁয়াজের পাশাপাশি বড় চাহিদা মেটাচ্ছে দেশি মুড়িকাটা পেঁয়াজ। আগামী ২০-২৫ দিনে মুড়িকাটা পেঁয়াজ উঠবে। এরপর দেশি পেঁয়াজ যেটা সারা বছর বিক্রি করি, ওইটা বাজারে আসবে। মুড়িকাটা ওঠানোর ২০-৩০ দিনের মধ্যে দেশি পেঁয়াজ উঠানো শুরু হয়। ওই সময় যেন আমদানি পেঁয়াজের সরবরাহ বাজারে পর্যাপ্ত থাকে তা নিশ্চিত করতে হবে।’ তাহলেই পেঁয়াজের বাজার স্বাভাবিক থাকবে বলে জানান এ ব্যবসায়ী।
কারওয়ান বাজারের পেঁয়াজ ব্যবসায়ী আশরাফ জানান, বৃষ্টির কারণে কয়েক দিন ধরে দাম বাড়ছে। আড়তে পেঁয়াজ সরবরাহ কম। আমরা পাবনা থেকে পেঁয়াজ আনি। সেখানে পেঁয়াজের কেজি পড়েছে ১৬০-১৭০ টাকা। মুড়িকাটা কিং পেঁয়াজ যেটা বিদেশি বিজ কিন্তু দেশে উৎপাদন হয় ওই পেঁয়াজ পাইকারি বিক্রি হচ্ছে ১৪০-১৫০ টাকা। এক সপ্তাহ আগেও এ পেঁয়াজ পাইকারি ৮০-৯০ টাকা বিক্রি হয়েছে।
তিনি জানান, বাজারে পেঁয়াজের দাম কমের দিকেই ছিল। বৃষ্টির কারণে দাম বাড়ছে। তবে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি আর আবহাওয়া স্বাভাবিক হলে দাম কমে যাবে বলে মনে করেন তিনি।
এদিকে গত ২৯ সেপ্টেম্বর ভারত রফতানি বন্ধ করে দেয়ায় দেশের বাজারে অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যায় পেঁয়াজের দাম। রেকর্ড ২৫০ টাকায় পেঁয়াজের কেজি পৌঁছে যায়। তবে নতুন দেশি পেঁয়াজ বাজারে আসার পর দাম কিছুটা কমে। এতে গত কয়েক সপ্তাহজুড়ে রাজধানীর বাজারগুলোতে নতুন দেশি পেঁয়াজের কেজি বিক্রি হচ্ছিল ১০০-১২০ টাকা। কিন্তু এখন ওই পেঁয়াজের দাম ১৮০-১৯০ টাকা।
উল্লেখ্য, দেশের একটি অঞ্চল বাদে শুক্রবার (৩ জানুয়ারি) সারাদেশেই বৃষ্টি হয়েছে। শনিবারও (৪ ডিসেম্বর) সকাল থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টি হচ্ছে। দিনের বাকি সময়েও বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে। তবে আগামীকাল রোববার থেকে বৃষ্টি প্রায় বন্ধ হয়ে যেতে পারে। বৃষ্টি শেষ হওয়ার পরপরই দেশে শৈত্যপ্রবাহ শুরু হতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস।