পারমাণবিক চুক্তি থেকে সরে কোন পথে হাঁটছে ইরান

প্রকাশিত: জানুয়ারি ৬, ২০২০; সময়: ৪:৫১ অপরাহ্ণ |
পারমাণবিক চুক্তি থেকে সরে কোন পথে হাঁটছে ইরান

পদ্মাটাইমস ডেস্ক : আমেরিকার হামলায় ইরানের অভিজাত বাহিনী কুদস ফোর্সের কমান্ডার কাসেম সোলাইমানি নিহত হওয়ার পর মধ্যপ্রাচ্যসহ সারাবিশ্বে প্রতিদিনই বাড়ছে উত্তেজনার পারদ। এরই মধ্যে ২০১৫ সালের ঐতিহাসিক পরমাণু চুক্তি থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে ইরান। ইরানের এ ঘোষণায় আমেরিকাসহ বিশ্বের প্রভাবশালী দেশগুলো নড়েচড়ে উঠেছে। খবর বিবিসি।

এক বিবৃতিতে ইরান জানিয়েছে, তারা আর তাদের পারমাণবিক কর্মসূচিতে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ, মজুদ, গবেষণা বা উন্নয়ন সীমিত রাখার শর্ত মেনে চলবে না।

গত শুক্রবার (৩ জানুয়ারি) বাগদাদের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সংলগ্ন এলাকায় বিমান হামলা চালিয়ে জেনারেল সোলাইমানিকে হত্যা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এ হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন আরো কয়েকজন। সোলাইমানিকে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির পর সবচেয়ে ক্ষমতাধর মনে করা হতো। কুদস ফোর্সের কমান্ডারের এ হত্যাকাণ্ডের কঠোর প্রতিশোধ নেয়ার হুমকি দিয়েছে ইরান।

এদিকে টুইটারে একের পর এক পাল্টা হুমকি দিয়েই যাচ্ছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প । তিনি বলেছেন, ইরান কোনো ধরনের হামলা চালালে তাদের ৫২টি স্থাপনা গুঁড়িয়ে দেয়া হবে।

এরই পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, ফ্রান্স, রাশিয়া ও চীনের সঙ্গে হওয়া ঐতিহাসিক এই চুক্তি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিল ইরান। তবে এর আগেই গেল বছর এই চুক্তিকে ‘ত্রুটিপূর্ণ ও একপেশে’ আখ্যা দিয়ে বেরিয়ে যায় যুক্তরাষ্ট্র। এবার ইরানের ঘোষণায় চুক্তিটি ভেস্তে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। তাতে চুক্তিবদ্ধ অন্য দেশগুলো হতাশা প্রকাশ করেছে। ইরানের ঘোষণার পরে জার্মানির চ্যান্সেলর আঙ্গেলা মেরকেল, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ এবং ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন একটি যৌথ বিবৃতি দিয়েছেন। বিবৃতিতে ইরানকে এ ঘোষণা থেকে সরে আসার আহ্বান জানানো হয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘সৃষ্ঠ উত্তেজনা কমাতে ও আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে আমরা সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করতে প্রস্তুত।’

অবশ্য পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের এই টানাপোড়েন দীর্ঘদিনের। যুক্তরাষ্ট্র ও তার বন্ধু রাষ্ট্রদের দীর্ঘদিনের অভিযোগ ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির চেষ্টা করছে। এই অভিযোগে ইরানের ওপর অর্থনৈতিক অবরোধও চলছিল। অবশ্য এই অভিযোগ বরাবরই অস্বীকার করে আসছে ইরান।ইরানের দাবি, তারা শুধু বেসামরিক কাজে ব্যবহারের উদ্দেশ্যে এ কর্মসূচি এগিয়ে নিচ্ছে।

একপর্যায়ে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার উদ্যোগে পারমাণবিক চুক্তি হয়। চুক্তির শর্তে বলা হয়, ইরান তাদের পরমাণু কর্মসূচিতে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচি সীমিত রাখবে এবং যে কোনো স্থাপনায় যে কোনো সময় আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি কমিশনের প্রতিনিধিদের পরিদর্শন করতে দেবে। এই চুক্তির ফলে ইরানের ওপর আরোপিত অর্থনৈতিক অবরোধ তুলে নেয়া হয়। এর ঠিক আগে আগে আইএস বিরোধী যুদ্ধে দীর্ঘদিনের শত্রুতা ভুলে একজোট হয় যুক্তরাষ্ট্র ও ইরান। ২০১৪ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত মার্কিন সেনাদের সঙ্গে মিলে এ যুদ্ধে অংশও নেয় ইরান।

ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর থেকে পাল্টে যেতে থাকে প্রেক্ষাপট। ২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের বেরিয়ে যাওয়াতেই সেই চুক্তির অনেকটা ইতি ঘটেছে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। বিবিসি বলছে, ট্রাম্প প্রশাসন চুক্তি থেকে সরে যাওয়ার পরে ঐতিহাসিক পারমাণবিক চুক্তি লাইফ সাপোর্টে চলে গিয়েছিল। এখন ইরানের ঘোষণায় তার মৃত্যু ঘটল।

পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে