আবারও আসাম সফর বাতিল করলেন নরেন্দ্র মোদি

প্রকাশিত: জানুয়ারি ৯, ২০২০; সময়: ৭:০৭ অপরাহ্ণ |
আবারও আসাম সফর বাতিল করলেন নরেন্দ্র মোদি

পদ্মাটাইমস ডেস্ক : ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য আসামে ১০ই জানুয়ারি একটি জাতীয় স্তরের ক্রীড়া প্রতিযোগিতার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে হাজির থাকার কথা ছিল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির। কেন্দ্রীয় সরকারের একটি সূত্র বিবিসি বাংলাকে নিশ্চিত করেছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আসাম সফরে যাচ্ছেন না।

সে অনুষ্ঠানে যোগ দিতে আসাম গেলে কালো পতাকা নিয়ে ব্যাপক বিক্ষোভ দেখানো হবে বলে ঘোষণা করেছিল নাগরিকত্ব আইন বিরোধী আন্দোলনকারী সংগঠনগুলো।

সেই বিক্ষোভ এড়াতেই প্রধানমন্ত্রী শেষমেশ আসামে যাচ্ছেন না বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

নাগরিকত্ব আইন পাশ হওয়ার পরে এনিয়ে গত একমাসে দুবার আসাম সফর বাতিল করলেন মি. মোদি।

অন্যদিকে মি. মোদির কলকাতায় দুদিনের সরকারি সফরে আসার কথা ১১ই জানুয়ারি। সেখানেও তার বিরুদ্ধে ব্যাপক বিক্ষোভের পরিকল্পনা করেছে নাগরিকত্ব আইন বিরোধী আন্দোলনকারীরা।

১০ জানুয়ারি আসামের গুয়াহাটিতে ক্রীড়া প্রতিযোগিতার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যারা হাজির থাকবেন বলে সংবাদ বিবৃতি জারি করেছে কেন্দ্রীয় প্রেস ইনফরমেশন ব্যুরো বা পিআইবি, সেখানে প্রধানমন্ত্রীর নাম নেই।

যদিও আসাম বিজেপি বলছে প্রধানমন্ত্রী যে আসবেন না, সেটা এখনও নিশ্চিত করেনি তার দপ্তর।

দলের আসাম রাজ্য সভাপতি রঞ্জিত দাশ বিবিসিকে বলছিলেন, “প্রধানমন্ত্রী যে এই ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় আসবেন, সেটাও নিশ্চিত করা হয়নি। এটা আমাদের আশা ছিল যে তিনি এলে এই প্রতিযোগিতার মর্যাদা আরও বাড়বে। আর এখনও তিনি যে উদ্বোধনের দিন আসবেন না, সেটাও নিশ্চিতভাবে জানায়নি তার দপ্তর। এই প্রতিযোগিতা চলবে ২২ তারিখ পর্যন্ত। তার মধ্যে তিনি আসতেও পারেন।”

কিন্তু যে অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী আসার কথা, সে অনুষ্ঠানের সূচীতে আসামের মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোওয়াল, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কিরেন রিজিজু ও আসামের অ্যাথলিট হিমা দাসের নাম থাকলেও প্রধানমন্ত্রীর নাম যখন নেই, তখন ধরেই নেওয়া যেতে পারে তিনি আসামে যাচ্ছেন না।

আসামের লেখিকা ও পত্রিকা সম্পাদক অনুরাধা শর্মা পূজারী বলছিলেন, “খেলো ইন্ডিয়া প্রতিযোগিতা উদ্বোধনের যে কর্মসূচী আমি দেখেছি, সেখানে প্রধানমন্ত্রীর নাম নেই, অথচ আগে সংবাদ সম্মেলন করে জানানো হয়েছিল যে তিনি হাজির থাকবেন ১০ তারিখ। আসু এবং অন্যান্য সিএএ [সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন] বিরোধী আন্দোলন চালাচ্ছে যে সংগঠনগুলি, তারা তো বলেছিল যে খেলা বন্ধ হবে না কিন্তু প্রধানমন্ত্রী এলে তাকে কালো পতাকা দেখিয়ে বিক্ষোভ হবেই। আমার মনে হচ্ছে, ওই পরিস্থিতি এড়িয়ে যেতেই তিনি আসছেন না।”

তবে বিজেপি নেতা রঞ্জিত দাশের মতে, “এইসব কথা অমূলক। দেশের প্রধানমন্ত্রী কোনও অনুষ্ঠানে আসবেন না বিক্ষোভ হবে, এসব বলার কোনও অর্থ হয় না। আর যে আন্দোলনের কথা বলা হচ্ছে, তাতে কত মানুষের সমর্থন আছে?

মি: দাশ বলেন, “আমরা প্রতিদিন নানা জেলায় যেসব সভা সমাবেশ করছি, বিশেষ করে অসমীয়া এলাকায়, তাতে হাজার হাজার মানুষ আসছেন। এতেই বোঝা যায় যে আন্দোলনের পেছনে খুব বেশি সমর্থন নেই। তারা আবার প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে কী বিক্ষোভ করবে?”

আসামের আরেক সিনিয়র সাংবাদিক ও সম্পাদক অজিত ভুঁইয়া মনে করিয়ে দিলেন, “এটাই কিন্তু প্রথম নয়। নাগরিকত্ব আইন পাশ হওয়ার পরে মি. মোদী একমাসে দ্বিতীয়বার আসাম সফর বাতিল করলেন। গতমাসে জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিঞ্জো আবের সঙ্গে গুয়াহাটিতেই শীর্ষ বৈঠক হওয়ার কথা ছিল মি. মোদির। সেজন্য সব প্রস্তুতি হয়ে গিয়েছিল এবং শহর সাজানো হয়েছিল।”

“কিন্তু নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে যে ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু হয়, সেটা দেখে আর আসামে আসেননি মি. মোদি। এবারেও আন্দোলনকারীরা সব জায়গায় কালো পতাকা নিয়ে বিক্ষোভের ডাক দিয়ে রেখেছিল। সম্ভবত সেজন্যই আসাম সফর বাতিল করলেন মি. মোদী। ”

এদিকে ১১ এবং ১২ই জানুয়ারি কলকাতায় দুদিনের সরকারি সফরে আসার কথা মি. মোদির। বেশ কয়েকটি অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন। তবে কলকাতায় তাকে ঢুকতেই বাধা দেওয়া হবে বলে পরিকল্পনা করেছে নাগরিকত্ব আইন বিরোধী আন্দোলনকারীরা।

কলকাতা বিমানবন্দর এবং ধর্মতলায় বহু মানুষকে কালো পতাকা হাতে জমায়েত হওয়ার জন্য ফেসবুক আর হোয়াটসঅ্যাপে আহ্বান জানাচ্ছেন আন্দোলনকারীরা।

‘নো এন আর সি মুভমেন্ট’-এর তরফে সুতপা চক্রবর্তী বলছিলেন, “আমরা কোনও মতেই প্রধানমন্ত্রীকে শহরে ঢুকতে দেব না। বিমানবন্দরের কাছে কৈখালিতে বহু মানুষ জড়ো হব দুপুর থেকে। আর তার যেহেতু রাজভবনে থাকার কথা, তাই একই সময়ে ধর্মতলা এলাকাতেও বড় জমায়েত হবে।”

“তার সরকার এনআরসি এবং নাগরিকত্ব আইন নিয়ে তো এসেছে, তবে তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদগুলোকে যেভাবে তার সরকার দমন করছে নানা বিশ্ববিদ্যালয়ে, তার প্রেক্ষিতে বাংলায় কোনোভাবে উনাকে ঢুকতে দেব না। এ ব্যাপারে আমরা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ,” বলছিলেন সুতপা চক্রবর্তী।

অন্যান্য কিছু সংগঠনও ১১ তারিখ সকাল থেকেই ধর্মতলায় জড়ো হওয়ার কথা বলছে।

পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে