রাজশাহীতে ধারের নামে তিন লাখ টাকা হাতিয়ে প্রতারণা

প্রকাশিত: জানুয়ারি ১০, ২০২০; সময়: ৩:১৪ অপরাহ্ণ |
রাজশাহীতে ধারের নামে তিন লাখ টাকা হাতিয়ে প্রতারণা

নিজস্ব প্রতিবেদক : পূর্ব পরিচয়ের সূত্র ধরে ক্ষুদ্র উদ্যেক্তা এক নারীকে ভূল বুঝিয়ে তিন লাখ টাকা হাতিয়ে এখন চরম প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছে রাজশাহীর শেখ ফরিদ নামের এক ‘প্রতারক’। এখন ধার দেওয়া টাকা চাওয়ায় টাকা তো দুরের কথা ওই নারীকে অব্যাহত হুমকি-ধামকি দিচ্ছে ওই প্রতারক। কখনো স্থানীয় এমপির লোক তো কখনো উপজেলা চেয়ারম্যানের লোক পরিচয় দিয়ে নানা অপকর্ম করে চলেছে ফরিদ হোসেন নামের ওই ব্যক্তি।

এ নিয়ে রাজশাহী-৩ আসনের এমপি আয়েন উদ্দিন ও পবা উপজেলা চেয়ারম্যান মনসুর রহমানও শেখ ফরিদের ওপর চরম ক্ষিপ্ত। তারাও চেষ্টা করে আদায়ে ব্যার্থ হয়ে আইনের মাধ্যমে টাকা আদায়ের পরামর্শ দিয়েছেন প্রতারণার শিকার নারীকে।

প্রতারণার শিকার নারীর নাম ফাহমিদা মাহবুব কেয়া। তিনি রাজশাহী নগরীর রানীবাজার বাটারগলি এলাকার বাসিন্দা। তার বাবার নাম এমএম ওয়ালিউল মাহবুব। আর প্রতারক শেখ ফরিদের বাড়ি নগরীর রাজপাড়া থানাধীন ভেড়িপাড়া এলাকায়। পবা উপজেলায় তার একটি ফিলিং স্টেশন রয়েছে। প্রায় তেলশূণ্য এ ফিলিং স্টেশনের মালিক সেজে সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে চলেছে এই শেখ ফরিদ।

এ নিয়ে রাজশাহীর বোয়ালিয়া থানায় তার বিরুদ্ধে একাধিক ডায়েরি করা হলেও অদৃশ্য খুটির জোরে বহাল তবিয়তে রয়েছেন। তার প্রতারণা ও মিথ্যা ষড়যন্ত্রে ক্ষিপ্ত নগরীর বোয়ালিয়া থানার ওসি নিবারণ চন্দ্র। তিনি জানান, বিষয়টি সুরাহা করার জন্য তাকে একাধিকবার থানায় তলব করা হলেও শুধু কালক্ষেপন করে চলেছে। অবশেষে থানার ওসিও ওই নারীকে আইনের আশ্রয় নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।

অবশেষে বাধ্য হয়ে প্রতারণার শিকার ফাহমিদা মাহবুব কেয়া টাকা ফেরত পেতে প্রতারক শেখ ফরিদের (৪০) বিরুদ্ধে প্রথমে সাধারণ ডায়েরী (জিডি) ও পরে লিগ্যাল নোটিস পাঠিয়েছেন। গত ১১ ডিসেম্বর রাজশাহীর বোয়ালিয়া মডেল থানায় জিডি এবং ৫ জানুয়ারিতে নোটারী পাবলিক ও রাজশাহী জর্জ কোর্টের আইনজীবি এ্যাডভোকেট শাহীন কবিরের মাধ্যমে দুইটি পৃথক লিগ্যাল নোটিস পাঠানো হয়। এরপরও সাড়া না দিলে তার দেওয়া তিনলাখ টাকা চেকের বিপরীতে আদালতে মামলা করবেন বলে জানিয়েছেন ফাহমিদা মাহবুব কেয়া।

কেয়া জানান, গত বছরের ৬ জুলাই আনুমানিক দুপুর দেড়টার দিকে পূর্ব পরিচিত শেখ ফরিদকে ব্যবসায়িক কাজের জন্য প্রথমে ২ লাখ টাকা প্রদান করেন কেয়া। এর দুই মাস পরে ১ আগস্ট আরো ১ লাখ টাকা ফরিদকে প্রদান করেন তিনি। এ সময় শেখ ফরিদ তাকে দুইটি চেক প্রদান করেন। চেক দুইটির নম্বর যথাক্রমে ০৯৮৭৪২৬ ও ০৯৮৪৯১৭।

এদিকে দীর্ঘদিন অতিক্রান্ত হওয়ার পরে শেখ ফরিদের কাছে টাকা ফেরত চান কেয়া। কিন্তু টাকা ফেরত না দিয়ে কালক্ষেপন করতে থাকেন সে। একসময় যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। পরে শেখ ফরিদের দেয়া চেক দুইটি নিয়ে উত্তরা ব্যাংকে নগদায়ন করতে যান কেয়া। কিন্তু ফরিদের এ্যাকাউন্টে কোন টাকা নেই বলে সর্টিফিকেট দেয় ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। এরপরে ফরিদের সঙ্গে দেখা করে টাকা ফেরত চান তিনি। কিন্তু ফরিদ কোন টাকা নেয়নি এবং ফেরত দিতে পারবে না বলে সাফ জানিয়ে দেয়। এছাড়াও তার কাছে পুনরায় টাকা চায়তে নিষেধ করে সে। টাকা চাইলে পাওনাদার কেয়ার বড় ধরণের ক্ষতি করার হুমকি দেয় প্রতারক ফরিদ।

এতে বিপাকে পড়েন কেয়া। তিনি বলেন, চেক ডিজঅনারের মামলার প্রক্রিয়া হিসেবে তারন নামে জিডি করা হলে চতুর শেখ ফরিদ তা বুঝতে পেরে তার দুটি চেকস হারিয়ে গেছে বলে উল্টো আদালতে মামলা দায়ের করেন কেয়ার বিরুদ্ধে। অথচ সেখানেই গড়মিল পাকায় শেখ ফরিদ। তার আগেও যে কেয়া থানায় সাধারণ ডায়েরি করে রেখেছিলেন তা না জেনেই নিজে বাচতে মামলা করে কেয়াকে ফাদে ফেলার চেষ্টা করেন। যদিও আগামী ৫ ফেব্রুয়ারি এ মামলার শুনানীর তারিখ নির্ধারিত রয়েছে।

এ ঘটনার বিষয়ে অবগত মোছা. পারভিন নামের একজনকে (৩৮) সাক্ষী করে গত ১১ ডিসেম্বর নগরীর বোয়ালিয়া থানায় জিডি করেন কেয়া। কেয়া বলেন, তার কস্টের টাকা তিনি বিশ্বাস করে ফরিদের হাতে টাকা তুলে দিয়ে চরম প্রতারণার শিকার হয়েছেন। তিনি বলেন, লিগ্যাল নোটিশের জবাব না দিয়ে আদালতের মাধ্যমে তার পাওয়া টাকাস আদায় করা হবে।

এদিকে এলাকাবাসী ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এলাকায় প্রতারক হিসেবে পরিচিত শেখ ফরিদ। রাজনৈতিক নেতাদের নাম ভাঙিয়ে সাধারণ মানুষকে সমানে ঠকিয়ে চলেছে। পবা ফিলিং স্টেশন নামের একটি পেট্টোলপাম্প স্থাপন করে সেটি দেখিয়ে মানুষের কাছে কখনো ধার, কখনো সুদের উপর টাকাস নিয়ে প্রতারণা করে আসছে। তার কাছে অনেক মানুষ প্রতারণার শিকার হয়েছে।

রাজশাহী-৩ (পবা-মোহনপুর) আসনের এমপি আয়েন উদ্দিন বলেন, প্রায় সাধারণ মানুষ শেখ ফরিদের বিরুদ্ধে নালিশ দেয়। তার নানা অপকর্মের কারনে তিনি তার কাছে ফরিদকে ভিড়তেও বারণ করে দিয়েছেন।

এ ব্যাপারে মোবাইল ফোনে যোগযোগ করা হলে শেখ ফরিদ প্রথমে টাকা নেওয়ার কথা অস্বীকার করলেও পরে বিষয়টি মিমাংশা হয়ে যাবে বলে জানান। সাংবাদিক পরিচয় পাওয়ার পর বলেন, এটি আদালতের মাধ্যমে সুরাহা হবে বলেই ফোন কেটে দেন। পরে আর ফোন রিসিভ করেন নি।

পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে