বাগমারায় সম্প্রীতির অঙ্গীকারের পরের দিনেই হামলা, ভাংচুর
নিজস্ব প্রতিবেদক : কোনো অপ্রীতিকর ঘটানায় জড়াবেন না, হানাহানি বা সংঘর্ষেও জড়াবেন না এমন অঙ্গীকারের পরের দিনেই সংঘর্ষ এবং ভাংচুরের জড়িয়েছেন রাজশাহীর বাগমারার কনোপাড়া গ্রামের বিবাদমান দুই পক্ষ। এসময় চারজন আহতসহ বাড়িঘর ভাংচুরের ঘটনা ঘটে। পুলিশ এসব অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে পাঁচজনকে আটক করে। সম্ভাব্য হামলার আশংকায় এলাকায় পুলিশ টহল বাড়ানো হয়েছে।
পুলিশ ও এলাকার লোকজন সূত্রে জানা যায়, উপজেলা গোয়ালকান্দি ইউনিয়নের আলোচিত সবশার দিঘির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে স্থানীয় ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি মকছেদ আলীর সঙ্গে বিএনপি নেতা ইসমাইল হোসেন ও নজবুল ইসলামের বিরোধ চলে আসছে। এই বিরোধের জের ধরে আওয়ামী লীগ নেতার নিয়ন্ত্রণে থাকা দিঘিতে গত ৫ ডিসেম্বর ভোরে বিষ প্রয়োগে এক কোটি ২০ লাখ টাকার মাছ মেরে ফেলে প্রতিপক্ষরা। এ নিয়ে ইসমাইল হোসেনের লোকজনদের বিরুদ্ধে মামলা হয়।
এই ঘটনার জের ধরে ১৬ ডিসেম্বর উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে আওয়ামী লীগের পক্ষে ১৫ জন আহত হন। এই ঘটনায় উভয় পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি তিনটি মামলা হয়। পুলিশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করে। পরে উভয় পক্ষের আসামিরা জামিনে আসে। এসব ঘটনায় এলাকায় ছোট-খাটো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে স্থানীয় কনোপাড়া বাজারের চায়ের দোকানগুলো বন্ধ রাখে। সপ্তাহ খানের পর সেগুলো আবার খুলে দেওয়া হয় পুলিশের পক্ষে। এর পরেও উভয় পক্ষের মধ্যে কয়েক দফা ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।
পুলিশ জানান, এলাকায় শান্তি ফিরিয়ে আনতে উভয় পক্ষের স্থানীয় প্রবীণ ব্যক্তিদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখে পুলিশ। তাঁদের সমন্বয়ে উভয় পক্ষ এলাকায় শান্তি ফিরিয়ে আনতে এবং সংঘর্ষ থেকে বিরত থাকার বিষয়ে একমত পোষণ করেন। সে মোতাবেক গত মঙ্গলবার (৭ জানুয়ারি) বিকেলে রাজশাহীর সদর সার্কেলের দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুমন দেব উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অনিল কুমার সরকারসহ স্থানীয় প্রবীণ ব্যক্তি ও উভয় পক্ষের লোকজনদের থানায় ডেকে আনেন।
তিনি উভয় পক্ষের লোকজনের কথা শোনেন। সংঘর্ষ ও হানাহানির পরিনাম এবং মামলা মোকদ্দমার বিষয়ে তিনি তাঁদের জানান। এক পর্যায়ে উভয় পক্ষ নিজেদের মধ্যে সমঝোতায় পৌঁছে। এলাকায় শান্তি ফিরিয়ে আনতে আর কোনো সংঘর্ষ ও হানাহানিতে জড়াবেন না বলে একমত পোষণ করেন। তাঁরা সম্প্রীতি বজায় রাখারও ঘোষণা দেন। পরে উভয় পক্ষের নেতা, প্রবীণ ব্যক্তি ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপারসহ অন্যান্য কর্মকর্তাদের সাথে একটি ছবি তোলেন।
এদিকে এই অঙ্গীকারের পরের দিন গত বুধবার (৮ জানুয়ারি) রাতে উভয় পক্ষ আবারো সংঘর্ষ ও ভাংচুরের জড়িয়ে পড়েন। পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্যমতে, বুধবার রাতে আওয়ামী লীগের নেতা মকছেদ আলী স্থানীয় গাঙ্গোপাড়া বাজারে গেলে প্রতিপক্ষের লোকজন তাঁকে আক্রমনের চেষ্টা করে। পরে তিনি পালিয়ে নিজ এলাকায় পৌঁছালে প্রতিপক্ষের চারজন যুবক হাতুড়ি, চাপাতি নিয়ে হামলার চেষ্টা করেন। এসময় তাঁর চিৎকারে আওয়ামী লীগ নেতার অনুসারীরা ছুটে এসে তিনজনকে আটক করে এবং বেধড়ক পিটুনি দেয়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছালে হাতুড়ি ও চাপাতিসহ তাদের পুলিশে দেওয়া হয়।
এসময় পুলিশ সুজন (২৮), আশরাফ হোসেন (৩০), রকি হোসেন (২৯) ও রানা হোসেনকে (৩১) আটক করে। এরা সবাই আওয়ামী লীগ নেতার অনুসারী। তাদের কৌশলে ডেকে নিয়ে পুলিশ আটক করে। এই সুযোগে এই ঘটনার ৩০ মিনিট পরেই প্রতিপক্ষ বিএনপির নেতার লোকজনরা আওয়ামী লীগ নেতার পক্ষের তিন-চারজনের বাড়িতে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাংচুর করে।
আওয়ামী লীগ নেতা মকছেদ আলী অভিযোগ করেন, প্রতিপক্ষরা সমঝোতার পরেও তাঁর ওপর ধারাল অস্ত্র নিয়ে হামলাম চেষ্টা করেছেন। তাঁদের বাড়িঘরে হামলা চালিয়ে ভাংচুর করা হয়। থানা পুলিশের সহযোগিতা চেয়েও পাওয়া যায়নি।
বাগমারা থানার ওসি আতাউর রহমান বলেন, তারা শান্তি প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার করার পরের দিনেই আবারো সংঘর্ষ ও অপ্রীতিকর ঘটনায় জড়িয়েছেন। পুলিশ পাঁচজনকে আটক করেছে তাদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠিয়েছে। পরিস্থিতি শান্ত রাখতে এলাকায় পুলিশ টহল বাড়ানো হয়েছে।