নন্দীগ্রামে শিক্ষার আলো ছড়াতে পাগলা সোলাইমানের ভূমিকা
নিজস্ব প্রতিবেদক, নন্দীগ্রাম : ”শিক্ষার আলো ঘরে ঘরে জ্বালো” এ স্লোগানকে বুকে ধারন করে শিক্ষার আলো ছড়াতে বগুড়ার নন্দীগ্রামে মানসিক ভারসাম্যহীন (পাগলা) সোলাইমান (৫৫) দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে যাচ্ছে। সে উপজেলার রণবাঘা উচ্চ বিদ্যালয়ে নিয়ম শৃংখলা রক্ষা ও পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা রাখায় স্বেচ্ছায় দায়িত্ব পালন করে।
সোলাইমান অনেক আগে নাটোর জেলার সিংড়া উপজেলার বিলদহর গ্রাম হতে পরিবারের সাথে নন্দীগ্রামের রণবাঘা এসে বসবাস শুরু করে। তার পিতা মৃত ফরু প্ররামানিক। পরিবারে দুই ভাই এক বোনর মধ্যে সে দ্বিতীয়। অনেক আগে পিতার মৃত্যু হলেও বছর খানেক আগে তার মা মারা যায়।
এলাকাবাসী তাকে সোলাইমান পাগলা নামে চিনে। সে পাগলা হলেও শিক্ষা ও শিক্ষিত ব্যক্তিদের মর্যাদা দিতে কোন ভুল করে না। তার দৃষ্টিতে কোন ভদ্র ও শিক্ষিত লোকোর সাথে দেখা হলে সে দাড়িয়ে স্যালুট জানায় ও করমর্দনের জন্য এগিয়ে আসে।
দীর্ঘদিন ধরে রণবাঘা বিদ্যালয়কে ঘিরেই চলে তার দিন-রাত্রীর জীবন যাত্রা। সে সকালে বিদ্যালয়ের মুল ফটকে বাদামী টুল পেতে লাঠি হাতে বসে। এভাবেই শুরু হয় তার ডিইটি। তার কথা ভালো বোঝা যায় না তবু সে চেষ্ট করে ছাত্র-ছাত্রীদের সু-শৃংখল ভাবে চলাফেরা করার জন্য।
আবার বিদ্যালয়ের কোথাও কোন ময়লা আবর্জনা পরে থাকলে তা পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করতে সে তৎপর। বাড়িতে না থেকে রাতে সে বিদ্যালয়ের কোন ঘরে আবার কখনও বারান্দায় ঘুমিয়ে পরে। কেউ ডেকে খাবারের জন্য টাকা দিলে বা খাবার দিলে তার খাবার জোটে আর না দিলে অনাহারে থাকতে হয় তাকে।
সোলাইমানের বড় ভাই আব্দুল করিম বলেন, আমার ভাই ছোট বেলা হতে মানসিক ভারসাম্যহীন। আমরা তাকে বাড়িতে রাখার চেষ্টা করি কিন্তু সে থাকে না। সুযোগ পেলেই সে বাড়ি থেকে পালিয়ে স্কুলে চলে যায়।
রণবাঘা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আজমেরী জামান বকুল বলেন, সোলাইমান স্কুলকে খুব ভালোবাসে। সে শিক্ষক ও ছাত্র-ছাত্রীদের কাজে সহযোগিতা করে। বিদ্যালয় পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে সে কাজ করে। আমরা প্রতি মাসে তার পোষাক ও খাবারের জন্য ৩-৪ হাজার টাকা ব্যয় করি।
স্থানীয় সাংবাদিক টিপু সুলতান জানান, সোলাইমানকে এলাকার সবাই ভালোবাসে। বিদ্যালয়ের প্রতি তার যে ভালোবাসা তা সত্যিই সকলের জন্য শিক্ষার প্রতি অনুপ্রেরণা যোগায়।