‘আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা, ঘটনার দিন আমার ছেলে রাজশাহীতে ছিল’
পদ্মাটাইমস ডেস্ক : বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যার আসামি মোর্শেদ অমত্য ইসলামের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। এ আদেশ শুনে আদালতের ভেতরেই কান্নায় ভেঙে পড়েন মোর্শেদের বাবা মুক্তিযোদ্ধা রবিউল ইসলাম।
তিনি বলেন, ‘আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা। ঘটনার দিন আমার ছেলে রাজশাহীতে ছিল। সে নির্দোষ। বড় আশা করে তাকে বুয়েটে ভর্তি করিয়ে ছিলাম। আমি আদালতের কাছে ন্যায়বিচার প্রত্যাশা করছি।’
মোর্শেদের বাবার এমন দাবির প্রেক্ষিতে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী হেমায়েত উদ্দিন হিরোন বলেন, এ মামলাটি চাঞ্চল্যকর ও স্পর্শকাতর। আসামি মোর্শেদ এজাহারভুক্ত ১৭ নম্বর আসামি। এতোদিন ধরে নিতি পলাতক ছিলেন। পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেয়ার পর রোববার নিজেকে আদালতে সমর্পণ করেন তিনি। আবরার হত্যা ঘটনায় মোর্শেদ জড়িত। তাই তার জামিন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
আজ রোববার ঢাকা মহানগর হাকিম বেগম ইয়াসমিন আরার আদালতে আত্মসমর্পণ করে আইনজীবীর মাধ্যমে জামিনের আবেদন করেন মোর্শেদ।
শুনানি শেষে আদালত তার জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
এর আগে গত ৫ জানুয়ারি চার পলাতক শিক্ষার্থীকে আদালতে হাজির হওয়ার জন্য পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেন আদালত। ঢাকার অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম মো. কায়সারুল ইসলাম এ আদেশ দেন।
মোর্শেদ অমত্য ইসলাম বাদে পলাতক বাকি তিন আসামি হলো- বুয়েট শিক্ষার্থী মোর্শেদুজ্জামান জিসান, এহতেশামুল রাব্বি তানিম ও মোস্তবা রাফিদ। এদের মধ্যে রাফিদ এজহারভুক্ত আসামি নন; তদন্তে আগত।
গত ৬ জানুয়ারি রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি হেমায়েত উদ্দিন খান হিরণ বলেছিলেন, আবরার হত্যা মামলায় পলাতক চার আসামির বিরুদ্ধে আগেই গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত। পুলিশ তাদের গ্রেফতার করতে পারেনি বলে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে।
এ পরিপ্রেক্ষিতে ৩ ডিসেম্বর আদালত পলাতকদের সম্পদ ক্রোকের আদেশ দেন। একই সঙ্গে তাদের বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি করেন। তবে আসামিদের ব্যক্তিগত কোনো সম্পদ না থাকায় সম্পত্তি ক্রোক করা যায়নি। এর পর আদালত আসামিদের হাজির হতে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তির এ আদেশ দেন। একই সঙ্গে ১৩ জানুয়ারি মামলার পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করেন।
আদালত সূত্র জানায়, এর আগে ১৮ নভেম্বর আদালত মামলার চার্জশিট (অভিযোগপত্র) গ্রহণ করে ওই চার আসামির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন। এরও আগে ১৩ নভেম্বর আদালতে এ মামলার চার্জশিট দাখিল করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। ২৫ জনকে অভিযুক্ত করে এ চার্জশিট দেয়া হয়।
এর মধ্যে ১১ আসামি সরাসরি হত্যাকাণ্ডে অংশ নেয়। বাকি ১৪ জন বিভিন্নভাবে সম্পৃক্ততার কারণে চার্জশিটে অন্তর্ভুক্ত হয়। চার্জশিটে বলা হয়- আসামিরা মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন অভিযোগ এনে নির্মমভাবে আবরারকে পিটিয়ে হত্যা করে।
এ ঘটনায় আবরারের বাবা মো. বরকত উল্লাহ বাদী হয়ে ৭ অক্টোবর রাজধানীর চকবাজার থানায় মামলা করেন। চার্জশিটে অভিযুক্ত ২৫ জনের মধ্যে এজাহারভুক্ত ১৯ জন এবং তদন্তে আগত ৬ জন রয়েছে। এজাহারভুক্ত ১৯ জনের মধ্যে ১৬ জনকে এবং তদন্তে আগত ৬ জনের মধ্যে ৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত ফেসবুকে ভারতবিরোধী স্ট্যাটাস দেয়ায় গত ৬ অক্টোবর বুয়েটের ছাত্র আবরার ফাহাদকে শেরেবাংলা হলে পিটিয়ে হত্যা করে ছাত্রলীগের একদল নেতাকর্মী।
এর পর শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে ২১ নভেম্বর আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ২৬ শিক্ষার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্থায়ী বহিষ্কার এবং ৬ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে শাস্তি দেয়া হয়েছে।
এ মামলায় গত ৫ জানুয়ারি চার পলাতক শিক্ষার্থীকে আদালতে হাজির হওয়ার জন্য পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন আদালত। ১৩ জানুয়ারি এ বিষয়ে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য দিন ধার্য রয়েছে।