বিভিন্ন দাবিতে রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের স্মারকলিপি প্রদান

প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৫, ২০২০; সময়: ৪:০২ অপরাহ্ণ |
বিভিন্ন দাবিতে রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের স্মারকলিপি প্রদান

নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজশাহী থেকে ডুয়েলগেজ রেলপথে সারাদেশের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন ও রেলযাত্রী সেবার মানোন্নয়নের দাবি জানিয়েছে সামাজিক সংগঠন রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদ। একই দাবিতে পশ্চিম রেলের ব্যবস্থাপকের সঙ্গে মতবিনিময় সভাও করেন পরিষদের নেতৃবৃন্দ। পরে রেলওয়ের মহাপরিচাক বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করা হয়। স্মারকলিপির অনুলিপি রেলপথ মন্ত্রী, রাজশাহী সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন ও সংশ্লিষ্ট দফতরেও পাঠানো হয়েছে।

বুধবার রাজশাহীস্থ পশ্চিম রেলেও সদর দফতরের কনফারেন্স কক্ষে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের নেতবৃন্দ রেলপথ সম্প্রসারন ও রেলযাত্রীদের সেবার মানোন্নয়নে বিভিন্ন দাবি তুলে ধরেন। এ সময় পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের ব্যবস্থাপক মিহির কান্তি গুহ ছাড়াও রেলওয়ের বিভিন্ন বিভাগের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

পরে তার মাধ্যমেই মহাপরিচালক বরাবর স্মারকলিপি তুলে দেন রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি লিয়াকত আলী, সাধারণ সম্পাদক জামাত খান, সাংগাঠনিক সম্পাদক দেবাশিষ প্রমাণিক দেবু ও পরিষদের নেতৃবৃন্দ। পরে রেলের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন পরিষদের নেতৃবৃন্দ।

রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের নেতৃবৃন্দ বলেন, পশ্চিমাঞ্চলীয় রেলপথ সদর দফতর রাজশাহী শিক্ষানগরীর আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটে হতে পারে একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠান যদি বর্তমান সমস্যাগুলি দুর করণের তড়িৎ পদক্ষেপ নেয়া হয়। তাছাড়া পশ্চিমাঞ্চলের রেলপথের সংস্কার এবং নতুন কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করলে রাজশাহী এলাকায় গড়ে উঠবে কৃষি অর্থনীতির প্রেক্ষাপটে শিল্পাঞ্চল। মতবিনিময় সভায় পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের ব্যবস্থাপক মিহির কান্তি গুহ বলেন, বর্তমান সরকার রেলেও উন্নয়নে বহুমূখি পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। রাজশাহীসহ উত্তরবঙ্গের রেল সম্প্রসারণের বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহন করা হয়েছে। অচিরেই রাজশাহীর সঙ্গে সারাদেশের রেলওয়ে যোগাযোগ সহজতর হবে। এমনকি রাজশাহী-কলকাতা রেল যোগাযোগের বিষয়টিও অনেকটা এগিয়েছে। শিগশিগরই এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন হবে।

এর আগে মহাপরিচালক বরাবর দেওয়া স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়, রাজশাহী বাংলাদেশের প্রাচীন শহর। তদানিন্তন বৃটিশ শাসনামল থেকে রাজশাহী একটি বিভাগীয় শহর। সেই সময় থেকে এই শহরে গড়ে উঠে বহু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। তাই বাংলাদেশের অন্যতম শিক্ষা নগরী হিসাবে রাজশাহী খ্যাত। এই নগরীতে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষা অনুষদের আওতায় প্রায় দুই লক্ষাধিক শিক্ষার্থী অধ্যায়নরত। তবে অনুন্নত যোগাযোগের কারণে এখানে কোন শিল্প কলকারখানা গড়ে উঠেনি। তাই শিক্ষার বিভিন্ন স্তরের অধ্যায়নরত শিক্ষার্থীদের ইন্টার্নশীপ করতে প্রয়োজনীয় প্রতিষ্ঠান পায় না, ফলে শিক্ষা কার্যক্রম চালানোর বিষয়েও সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়।

রাজশাহী থেকে সরাসরি ডুয়েলগেজ রেলপথের মাধ্যমে চট্রগ্রাম ও সিলেটের সঙ্গে রেল যোগাযোগ চালু করতে পারলে রাজশাহীতে পোশাক শিল্প, চা, বিখ্যাত চুনাপাথর ইত্যাদিসহ দ্রুত বিকাশ করা সম্ভব। ডুয়েলগেজ রেলপথের মাধ্যমে এখান থেকে কন্টেইনারের মাধ্যমে পণ্য পরিবহণের ব্যবস্থা করা হলে পোশাক শিল্পের উদ্যোক্তারাই রাজশাহীতে পোশাক কারখানা গড়ে তুলবেন, কারণ ঢাকার আশে পাশে যেমন ময়মনসিংহের ভালুকা, গাজীপুরের কালিয়াকৈর এই সকল স্থান থেকে যানযট পেরিয়ে তৈরী পোশাক পণ্য কমলাপুর কন্টেইনার ডিপোতে আসতে যে সময় লাগে তার চেয়ে কম সময়ে রাজশাহী থেকে পণ্য ঢাকা হয়ে চট্রগ্রাম পৌঁছে যেতে পারবে। তাই রাজশাহীর সাথে রেল পথে সমুদ্র বন্দর চট্রগ্রামের সরাসরি যোগাযোগ করতে পারলে শিল্পের যেমন বিকেন্দ্রীকরণ হবে ঠিক তেমনি বেকারত্বের প্রকটতা হ্রাস পাবে। সেই সঙ্গে সারা দেশের অর্থের তারল্য প্রবাহ অর্থনীতির গতিময়তা সুষমভাবে প্রবাহিত হবে।

স্মারকলিপিতে রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের বিভিন্ন দাবি তুলে ধরা হয়। এগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো, রাজশাহী বিভাগীয় শহর এবং এখানে একটি আধুনিক মানের স্টেশন আছে। আব্দুলপুর থেকে রাজশাহী পর্যন্ত ডুয়েলগেজ হলে রাজশাহী স্টেশনে কমপক্ষে আরও অনেক নতুন ট্রেন চলাচল করবে এবং এই স্টেশনের আয় দ্বিগুনেরও বেশি হবে। প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা রাজশাহী তথা উত্তরবঙ্গে বেশ কিছু আন্তঃনগর ও বিরতীহীন ট্রেন উপহার দিয়েছেন। এমনকি রেলপথ মন্ত্রণালয়কে যাত্রীসেবার মান উন্নয়নের জন্য অনেক অর্থ বরাদ্দ দিয়েছেন।

আব্দুলপুর থেকে রাজশাহী মাত্র ৪০ কিলোমিটার রেলপথে ডুয়েলগেজ বসানো হলে রাজশাহী থেকেও দু’ধরণের ট্রেন চলতে পারবে। সেক্ষেত্রে রাজশাহী থেকে সান্তাহার হয়ে বগুড়া, লালমনিরহাট, পাটগ্রাম পর্যন্ত আবার পার্বতীপুর থেকে একদিকে রংপুর অন্যদিকে দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁ হয়ে পঞ্চগড় সরাসরি ট্রেন যেতে পারবে। আব্দুলপুর থেকে রাজশাহী পর্যন্ত ডুয়েল গেজ না থাকায় রাজশাহী থেকে বগুড়া, রংপুর, লালমনিরহাট,কুড়িগ্রাম, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁ, পঞ্চগড় শহরের সাথে কোন রেলযোগাযোগ নেই।

আব্দুলপুর থেকে রাজশাহী পর্যন্ত ডুয়েল গেজ হলে রাজশাহী থেকে জামালপুর-ময়মনসিংহ হয়ে অথবা টঙ্গী হয়ে চট্রগ্রাম এবং সিলেট পর্যন্ত রাজশাহীর ট্রেন যোগাযোগ স্থাপিত হবে। পন্য পরিবহণেও এই স্টেশন বড় ভূমিকা রাখবে কারণ সিলেট থেকে কয়লা ও পাথর, চট্রগ্রাম বন্দর থেকে বিভিন্ন পন্য, পাটগ্রাম-বুড়িমারী সীমান্ত থেকে কয়লা, পঞ্চগড় সীমান্ত থেকে ডোমার বালু ও পাথর এবং অন্যান্য পন্য রাজশাহীতে সহজেই আসতে পারবে। এছাড়া আব্দুলপুর-রাজশাহী পর্যন্ত ডাবল লাইন হলে এ সকল বাড়তি ট্রেনের ক্রসিংয়ে কোন সমস্যা থাকবে না এবং এতে করে ট্রেনের সিডিউল বিপর্যয়ও থাকবে না।

স্মারকলিপিতে আরো উল্লেখ করা হয়, রাজশাহী থেকে ছেড়ে যাওয়া ট্রেনগুলির যাত্রী সেবার মান এখনও শতভাগ হয়ে উঠে নি। ট্রেনের বাথরুমগুলিতে পর্যাপ্ত পানি, টিস্যু, সাবান এর ব্যবস্থা থাকে না। যাত্রীদের শোচকার্যাদি সম্পন্ন করতে সমস্যায় পড়তে হয়। চেয়ারগুলির অধিকাংশই হাতল ভাঙ্গা, কিছু কিছু চেয়ারের হেলান দেওয়ার জায়গাটা এমনভাবে হেলে মেঝেতে পড়ে যায় যা পিছনের বসা যাত্রীদের সমস্যার কারণ হয়ে দাড়ায়। একই স্মারকলিপিকে উল্লেখ করা হয়, সাগরদাড়ি ট্রেনে রোগীদের জন্য আসনসংখ্যা ও দর্শনা স্টেশনে বিশ্রামাগার সম্প্রসারনক করা জরুরি।

তাই এ ধরনের অব্যবস্থা দূর করা প্রয়োজন। রাজশাহী রেল স্টেশন বাদে সারা পশ্চিমাঞ্চলে যাত্রী বিশ্রামাগারগুলির মান খুবই অনুন্নত। বিশ্রামাগার ও শৌচাগার সবসময় খোলা থাকে না, রাজশাহী স্টেশনে যাত্রীদের জন্য যে শৌচাগার রয়েছে সেখানে মাঝে মাঝে পর্যাপ্ত পানি থাকে না। সারা বছর ধরে অপরিচ্ছন্ন অবস্থায় পড়ে থাকে নাক, মুখ বন্ধ করেও সেখানে প্রাকৃতিক কাজ করা সম্ভব নয়।

আলোচনাসভায় অন্যদের মধ্যে আরো উপস্থিত ছিলেন, পশ্চিমাঞ্চল রেলের প্রধান প্রকৌশলী, আল ফাত্তাহ মো. মাসউদুর রহমান, সিএসটিই সুনীল কুমার হালদার, সিসিএম মো. আহসান উল্লাহ ভূইয়া, রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের সহসভাপতি ডা. আবদুল মান্নান, বিএফইজে’র সহসভাপতি মামুন-অর-রশিদ, এডভোকেট তৌফিক আহমেদ টিটু, ওলিউর রহমান বাবু, নারী নেত্রী সেলিনা বেগম, কেএম জুবায়েদ হোসেন, জাহিদ হাসান জিতু, আনসার আলী বাবু ও মো.ইয়াহিয়া হোসেন প্রমুখ।

পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে