আদালতের নিষেধাজ্ঞাতেও বন্ধ হয়নি অবৈধ বালু উত্তোলন

প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৫, ২০২০; সময়: ৯:১৩ অপরাহ্ণ |
আদালতের নিষেধাজ্ঞাতেও বন্ধ হয়নি অবৈধ বালু উত্তোলন

নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজশাহীতে আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে একজন বালু ব্যবসায়ী পদ্মা নদীর তীরের কাছাকাছি এলাকা থেকে বালু উত্তোলন অব্যাহত রেখেছেন। এতে রাজশাহী শহরসহ নির্মানাধীন বঙ্গবন্ধু হাইকেট পার্ক রক্ষা বাঁধের ক্ষতির আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসী। ইতোমধ্যেই নতুন নির্মিত এ বাঁধের দুইটি অংশ ক্ষতিগ্রস্থ হয় অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের কারণে।

এই বালু ব্যবসায়ী নাম আনোয়ার হোসেন। তার বাড়ি নগরের বুলনপুর এলাকায়। তিনি নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহসভাপতি। জেলার পবা উপজেলার হরিপুর ইউনিয়নের মদনপুর, কসবা ও চারহরিপুর মৌজার বালুমহাল তিনি ইজারা নিয়েছেন। কিন্তু ইজারার শর্ত ভঙ্গ করে তিনি নদীর তীরের নিকটবর্তী এলাকা থেকে বালু উত্তোলন করছেন। শর্ত ভেঙ্গে বালুমহালের বাইরে গিয়ে সোনাইকান্দি এলাকায় নতুন নির্মিত পদ্মার তীর রক্ষা বাঁধের পাশ থেকে বালু উত্তোলন করে। এ কারনে নতুন বাঁধের দুইটি স্থানে ক্ষতিগ্রস্ত হলে বালু উত্তোলন বন্ধ করতে পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে চিঠি দেয়া হয়। এর পরও সেখান থেকে বালু উত্তোলন অব্যাহত রেখেছে এই বালুকারবারি।

রাজশাহী জেলা প্রশাসকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ইজারার নিয়ম অনুযায়ী নদীর তীরের দেড় কিলোমিটারের বাইরে গিয়ে বালু উত্তোলন করার শর্তে তাদের বালুমহাল ইজারা দেওয়া হয়েছিল। অথচ আনোয়ার হোসেন নদীরের তীরের এক কিলোমিটারের ভেতরেই বালু উত্তোলন করছেন। অভিযোগ পেয়ে মঙ্গলবার বিকেলে পবা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আবুল হায়াত বালুমহালে অভিযান চালান। ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে তিনি আনোয়ার হোসেনের ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেন। সেই সঙ্গে ওই এলাকা থেকে বালু উত্তোলন বন্ধ করার নির্দেশ দেন। একই অভিযোগে রজব আলী নামের নবগঙ্গা ও হাড়ুপুর বালুমহালের আরেক বালু ব্যবসায়ীকে একই দন্ড দেওয়া হয়। তবে তিনি রাতে বালু উত্তোলন করলেও বুধবার সকাল থেকে বন্ধ রাখেন।

হরিপুর ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য সাইদুর রহমান বাদল বলেন, ভ্রাম্যমাণ আদালতের কর্মকর্তারা চলে আসার পর মঙ্গলবার দিবাগত রাত থেকেই আনোয়ার হোসেন সোনাইকান্দি এলাকায় পদ্মার তীর রক্ষা নতুন বাঁধের নিজ থেকে বালু উত্তোলন শুরু করেন। বুধবার বিকেলের দিকে ওই বালুমহালের কাছে গিয়ে দেখা যায়, আগের স্থান থেকেই চারটি খননযন্ত্র দিয়ে বালু তোলা হচ্ছে। আগের মতোই নতুন বাঁধের নিজ থেকে বালু নিয়ে কিছুক্ষণ পরপর বালুভর্তি ট্রাক রাস্তায় উঠে আসছে।

হরিপুর ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য মাহফুজ আলী বলেন, তার ওয়ার্ডের সীমান্ত বর্তি এলাকা থেকে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। এতদিন ধরে তারা একই জায়গা থেকে বালু তুলছেন। এভাবে নদীর পাড়ের এত কাছে থেকে বালু তোলা হলে এলাকার ভাঙনের হুমকিতে পড়বে বলে আশঙ্কা করছেন তিনি।

মাহফুজ বলেন, গত মঙ্গলবার অভিযান চালিয়ে বালু তোলা বন্ধ করে দেওয়া হলেও খনন যন্ত্রগুলোর যেখানে ছিল সেখানেই রেখে দেওয়া হয়। ওই জায়গা থেকে বালু উত্তোলন বন্ধ করে দেওয়া হলে খনন যন্ত্রগুলো কেন তুলে নেওয়া হলো না। যন্ত্র না তোলা পর্যন্ত তাদের কাজ বন্ধ করা যাবে না। প্রশাসনকে এই বিষয়টি বুঝতে হবে।

ভ্রাম্যমাণ আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ফের একই জায়গা থেকে বালু তোলার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন রাজশাহী পরিবেশ আন্দোলন ঐক্য পরিষদের উপদেষ্টা ডাক্তার মাহফুজুর রহমান।

তিনি বলেন, নিয়ম অনুযায়ী ব্যবসায়ীরা নির্ধারিত জায়গা থেকে বালু উত্তোলন করুক এ ব্যাপারে তাদের কোনো আপত্তি নেই। তবে যেখান থেকে বালু তোলা হচ্ছে তাতে রাজশাহী শহররক্ষা বাঁধের ক্ষতি হবে বলে তারা আশঙ্কা করছেন। তিনি বলেন, অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধ না হলে তারা রাজশাহীর মানুষকে সঙ্গে করে কঠোর আন্দোলন গড়ে তুলবেন।

পবা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আবুল হায়াতের বলেন, ‘‘ঘটনাটি আমিও শুনেছি। পবায় কৃষিজমিতে পুকুর খনন বন্ধের একটি অভিযান চালানোর কারণে বুধবার বালুমহালে যেতে পারিনি। তবে সেখানেও অভিযান চালানো হবে।’’

পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে