শাহ মখদুম বিমান বন্দরকে আন্তর্জাতিক এবং রাজশাহীতে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের দাবি

প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৬, ২০২০; সময়: ৬:০৬ অপরাহ্ণ |
শাহ মখদুম বিমান বন্দরকে আন্তর্জাতিক এবং রাজশাহীতে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের দাবি

নিজস্ব প্রতিবেদক, বাগমারা : রাজশাহী-৪(বাগমারা) আসনের সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হক বুধবার রাতে একাদশ জাতীয় সংসদের চলতি অধিবেশনে মহামান্য রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ঐতিহাসিক ভাষণের উপর ধন্যবাদ প্রস্তাবের আলোচনায় বক্তৃতাকালে বলেন, জাতির জনকের কন্যার নেতৃত্বে বাংলাদেশের উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। জাতির জনকের কন্যা বাংলাদেশকে বিশ্বে উচ্চ আসরে পরিচিতি করার জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। রাষ্ট্রপতির ভাষণে দেশের উন্নয়নের চিত্র ফুটে উঠেছে। এনামুল হক বর্তমান সরকারের সময়ে দেশের উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে বলেছেন, দেশের অর্থনীতির উন্নয়ন হয়েছে। এছাড়াও এ সরকারের মেয়াদে দেশের বেশির ভাগ এলাকায় বিদ্যুৎ পৌঁছেছে। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যেই বাগমারার শতভাগ বাড়িতে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে তৃতীয় বারের মতো মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁকে মনোনয়ন দেয়ায় এবং সংসদ সদস্য নির্বাচিত করায় বাগমারাবাসীকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন তিনি ।

এনামুল হক দেশের প্রযুক্তি খাতের উন্নয়নের দিক উল্লেখ করে বলেছেন, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎখেপনসহ গ্রামাঞ্চলে ডিজিটাল বাংলাদেশের ছোঁয়া লেগেছে। এখন গ্রামের লোকজন বাড়িতে বসে চাকরির আবেদন, বিদ্যুৎ বিল পরিশোধসহ বিভিন্ন ধরণের কাজ করতে পারছে। আইটি সেক্টরে সরকার সফল। এনামুল হক বলেন, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর বাংলাদেশ ডিজিটাল বাংলাদেশে রূপান্তর হয়েছে। সারা বিশ্বকে তাকলাগিয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বাংলাদেকে উন্নয়নের রুল মডেল হিসাবে দাঁড় করিয়েছেন । এছাড়া সারা বাংলাদেশে বড় বড় উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে । নিজস্ব অর্থায়নে তৈরি করা হচ্ছে পদ্মা সেতু।
ডিজিটাল বাংলাদেশ এখন আর কথার কথা না। ডিজিটাল বাংলাদেশের সুবিধা এখন প্রত্যন্ত গ্রামের মানুষের কাছে পৌঁছে গেছে। ফাইবার অপটিকস দিয়ে ইউনিয়ন পরিষদ ও পৌরসভায় সংযোগ দেয়া হচ্ছে।

তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভূয়সী প্রশংসা করে বলেছেন, আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়নের ছোঁয়া বাড়িতে বাড়িতে পৌঁছে যাচ্ছে। তিনি মাতৃত্বকালীন ভাতাসহ বিভিন্ন ভাতার চালু করে প্রায় ৬২ হাজার মানুষের মুখে হাসি ফুটিয়েছেন। তিনি বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলাদেশ গড়ার জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। ডিজিটাল পদ্ধিতিতে শিশুদের মায়ের মোবাইলে উপবৃত্তির টাকা পৌঁছে যাচ্ছে।

এনামুল হক আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে বাগমারা ও উত্তরাঞ্চলের উন্নয়নের বিভিন্ন তুলে ধরে বলেছেন, ২০০৮ সালের আগে বাগমারায় পাকা রাস্তা ছিল মাত্র ৬০ কিলোমিটার। আ’লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর উপজেলায় পাকারাস্তার পরিমান দাঁড়িয়েছে ৩০০ কিলোমিটার। এছাড়া শিক্ষা, চিকিৎসাসহ সকল ক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নয়ন সাধিত হয়েছে ।

এনামুল হক রাজশাহীতে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন এবং হাইটেক পার্কের কার্যক্রম দ্রুত শুরু করার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, হাইটেক পার্কের ফলে ্এ অঞ্চলে ব্যাপক কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে ।

সাংসদ বিগত চারদলীয় জোট সরকারের সমালোচনা করে বলেন, তারা বাংলা ভাই নামক দানব তৈরি করে আওয়ামী লীগ ও মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের লোকজনকে উল্টো করে ঝুলিয়ে মেরেছে। বাগমারা পরিনত হয়েছিল রক্তাক্ত জনপদে। এক সময় বাগমারার নাম শুনলে লোকজন ভয় পেতো। তবে ২০০৮ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর আর কোনো হত্যাযজ্ঞ নেই। কোনো রাজনীতিক হত্যাকাণ্ডও সংঘটিত হয়নি। আওয়ামী লীগ সরকার বাগমারাকে শান্তির জনপদে পরিণত করেছে।

এনামুল হক বলেছেন, বর্তমান সরকারের সময়ে এলাকার বিভিন্ন ক্ষেত্রের উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরেছেন। তিনি এলাকার বিদ্যুৎ ব্যবস্থার উন্নয়নের দিক তুলে ধরেছেন। শেখ হাসিনার সরকারের জন্যই এই উন্নয়ন সম্ভব হয়েছে। তিনি শিক্ষা, চিকিৎসা ও বাণিজ্যিক ক্ষেত্রের বিভিন্ন উন্নয়নের দিক উল্লেখ করেন ।

তিনি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জাতীয় চারনেতা ও মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের স্মরণ করে তিনি বক্তব্য শুরু করেন। সাংসদ রাষ্ট্রপতির দীর্ঘ ভাষণকে মাইল ফলক হিসাবে উল্লেখ করে বলেন, এই বয়সেও তিনি যে দীর্ঘ বক্তব্য দিয়েছেন তা প্রশংসার দাবিদার। তাঁর ভাষণের মধ্য দিয়ে জননেত্রী শেখ হাসিনার দেশের সার্বিক উন্নয়নের চিত্র ফুটে উঠেছে।

সংসদ সদস্য শিক্ষা বিভাগের উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে বলেন, এ সরকারের আমলে বাগমারায় এক শত ছয়টি প্রাথমিক বিদ্যালয় সরকারী করন, তিনটি ডিগ্রি কলেজ এবং দুইটি কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে রূপান্তর করা হয়েছে। তিনি বলেছেন, বর্তমান সরকারের সময়ে ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের হার কমেছে। প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষানীতির ফলে আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে দেশে অক্ষরজ্ঞানহীন লোক খুঁজে পাওয়া যাবে না।
এনামুল হক কৃষি ক্ষেত্রে বর্তমান সরকারের সাফল্য তুলে ধরে বলেছেন, এ সময়ে কৃষির ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। কৃষিপণ্য উৎপাদন বেড়েছে। দেশের চাহিদা মেটানোর পর বিদেশে রপ্তানী করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা হয়েছে।

এনামুল হক বাগমারা ছাড়াও জেলার উন্নয়নেরও দাবি জানিয়েছেন। বক্তৃতায় তিনি হযরত শাহমখমুদ বিমান বন্দরকে আর্ন্তজাতিক মানের বিমান বন্দরে উন্নীত এবং কার্গোসার্ভিস চালুর দাবি জানান। তিনি বলেছেন, বঙ্গবন্ধু সেতু স্থাপনের ফলে উত্তরাঞ্চলের ব্যবসা বাণিজ্যের প্রসার ঘটেছে। স্বতন্ত্র রেল সেত ু স্থাপন করা হলে ব্যবসা বাণিজের আরও প্রসার এবং সুবিধা হবে। এছাড়া উত্তারাঞ্চল কে পৃথক শিল্প নীতি করারও দাবী জানান তিনি ।

এনামুল হক রাজশাহী অঞ্চলকে কৃষি প্রধান অঞ্চল হিসাবে উল্লেখ করে বলেছেন, হযরত শাহমখমুদ বিমান বন্দরে কার্গো সার্ভিস চালু করা হলে কৃষকরা তাদের উৎপাদিত পন্য দেশের বাইরে পাঠিয়ে ভালো দাম পাবেন।

এছাড়াও পুঠিয়া থেকে ভবানীগঞ্জ পর্যন্ত ২৭ কিলোমিটার দীর্ঘ রাস্তাটির উন্নয়নে ১৩০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়ায় প্রধানমন্ত্রী সহ সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। প্রতিটি ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। রুপকল্প ২০২১ বাস্তবায়নের লক্ষে কাজ করছে সরকার। ২০২১ সালে মাধ্যমে আয়ের দেশে রুপান্তরের কথা থাকলেও তার আগে উন্নত দেশের দিকে ধাবিত হয়েছে।

বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে শ্রেষ্ঠ জিডিপি অর্জন করেছে। ৮.২৫ ভাগ প্রবৃদ্ধি লক্ষ্যমাত্র জিডিপিতে অর্জন হচ্ছে। মাথাপিচু ২ হাজার ডলারের কাছে উন্নয়ন হয়েছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৩৩ বিলিয়ন যেটা একটা দেশের সমৃদ্ধিশীল উন্নয়ন সূচক। বর্তমানে বাংলাদেশ ৪০ বিলিয়ন ডলারের বেশি রপ্তানি করে।

সর্বশেষ তিনি গ্রামীণ রাস্তা দ্রুত রক্ষণাবেক্ষনের জন্য উপজেলা পর্যায়ে রক্ষণাবেক্ষণ টিম গঠন করতে মহান সংসদে জোর দাবি উত্থাপন করেন। এরফলে দ্রুত সময়ের মধ্যে অর্থ বরাদ্দ দিয়ে রাস্তার সংস্কার করা সম্ভব হবে। এতেকরে রাস্তা সংস্কার কাজে দীর্ঘ সময়ের প্রয়োজন হবে না।

পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে