রাবির আবু ভাই আর নেই
নিজস্ব প্রতিবেদক, রাবি : রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) সাবেক ও বর্তমান শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের কাছে পরিচিত নাম আবুর ক্যান্টিনের ‘আবু ভাই’ ওরফে আবু আহমেদ (৭৬) আর নেই।
তার ইচ্ছে ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনের মতো আবুর ক্যান্টিনও থাকবে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে। এ দাবি তিনি ২০১৫ সাল থেকেই করে আসছেন। তার সেই ইচ্ছে অধরাই থেকে গেলো। শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে তিনি রাজশাহীর নগরীর মতিহার থানার হনুফার মোড়ে অবস্থিত নিজ বাড়িতে মৃত্যুবরণ করেন।
আবু আহমেদের ছেলে সেলিম আহমেদ বলেন, “শুক্রবার সকালে হঠাৎ করে বাবার শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। তার পাশে গেলে আমাকে তার পা-টিপে দিতে বলেন। এর কিছুক্ষণ পরেই বাবা মারা যান।”
তিনি বলেন, তিনি দীর্ঘদিন ধরে ডায়াবেটিস, অ্যাজমা, হাইপ্রেসার, কিডনির অসুখে ভোগ ছিলেন। মৃত্যুর একদিন আগে হাসপাতাল থেকে বাড়িতে ফেরেন তিনি। তার দাবি, তার বাবার শেষ উচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যেন পূরণ করে দেয়।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭০, ৮০ ও ৯০ দশকের নানা আন্দোলনের সাক্ষী ছিলেন আবু। চোখের সামনে বিশ্ববিদ্যালয়ের নানা আন্দোলনের উত্থান ও পতন দেখেছেন। শুধু আড্ডাই নয়, শিক্ষার্থীদের রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক আলাপ-আলোচনা ও পরিকল্পনার অন্যতম কেন্দ্র ছিল ‘আবুর ক্যান্টিন’। ২০১৫ সালে তার সেই ক্যান্টিনটি বন্ধ হয়ে যায়।
শুক্রবার বাদ আছর আবুর জানাযা শেষে রাজশাহী নগরীর মির্জাপুর পশ্চিমপাড়া কবরস্থানে তাকে শায়িত করা হয়। তার মৃত্যুতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক-বর্তমান শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। অনেক শিক্ষক-শিক্ষার্থী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার সঙ্গে কাটানো সময়ের স্মৃতিকথা জানিয়ে স্ট্যাটাস দিয়েছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যাটেরিয়ালস সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক জি এম শফিউর রহমান বলেন, “৭০-এর দশক থেকে আবু ভাই এ বিশ্ববিদ্যালয়ে খাবার ক্যান্টিন চালিয়ে আসছেন। ৯০-এর দশক পর্যন্ত এই ক্যান্টিন ছিল সায়েন্স ওয়ার্কশপের পুকুরের পশ্চিম পাড়ে। পরে তার ক্যান্টিন সেখান থেকে ভেঙে ফেলা হয়। এর পর তিনি ক্যান্টিন দেন ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া অ্যাকাডেমিক ভবনের পূর্ব পাশে। ২০১৫ সালে এই ক্যান্টিনটি বন্ধ হয়ে যায়।
তিনি বলেন, “আবু ভাইয়ের ক্যান্টিনে সাংস্কৃতিককর্মী, প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনের কর্মী, সাংবাদিক আর ক্লাস ফেরত শিক্ষার্থীদের মিলন মেলা বসত। বাংলাদেশের প্রতিটি সামাজিক, সাংস্কৃতিক আন্দোলনের যে ঢেউ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে তার সূতিকাগার আবুর ক্যান্টিন। আবু ভাইয়ের পছন্দের জায়গায় একটি ক্যান্টিনের অনুমোদন চেয়ে কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হকসহ অনেকেই দাবি জানিয়ে এসেছেন। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাকে আজও জায়গা দেয়নি।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক আনন্দ কুমার সাহা বলেন, “আবু ভাই এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক পুরনো মানুষ। তিনি ক্যাম্পাসের অনেক ঐতিহাসিক ঘটনার সাক্ষ বহন করেন। তার আত্মার শান্তি কামনা করি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন হয়তো তাঁর বিষয়টি বিবেচনা করে দেখবে।”