মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় অনেক অমুক্তিযোদ্ধা
পদ্মাটাইমস ডেস্ক : প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা কারা তা নিয়ে দীর্ঘ বিতর্কের পর স্বাধীনতার ৪৮ বছরের মাথায় এবার আগামী ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার তালিকা প্রকাশ করতে যাচ্ছে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়। তবে এই তালিকা নির্ভুল হবে কি না তা নিয়ে ইতিমধ্যেই প্রশ্ন উঠেছে। উপজেলা ও জেলা এবং জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের (জামুকা) মাধ্যমে যাচাই-বাছাইসহ বিভিন্ন বিষয় বিবেচনা করে যোগ্যদের নাম অন্তর্ভুক্তি চলছে।
সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র মতে, মুক্তিযোদ্ধাদের নানা সুবিধায় আকৃষ্ট হয়ে অনেক অমুক্তিযোদ্ধা তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্ত করিয়েছেন এবং করাচ্ছেন। এ তালিকায় রয়েছে বর্তমান সংসদ সদস্যের নামও। মন্ত্রণালয়ে এমন অসংখ্য অভিযোগ পড়েছে এবং তা সংশ্লিষ্ট সূত্র স্বীকারও করেছে।
সূত্র এমনও বলছে, ক্ষেত্র বিশেষ নগদ লেনদেনসহ নানা প্রভাব খাটিয়েও অনেকে মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় নাম ঢুকিয়েছেন। যদিও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলছেন, বিদ্যমান নিয়মের বাইরে অমুক্তিযোদ্ধা কারো মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হওয়া সম্ভব নয়।
স্বাধীনতার পর সরকার বদলের সঙ্গে সঙ্গে পাল্লা দিয়ে মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় হেরফের হয়েছে। এখন সর্বশেষ ২ লাখ ৩১ হাজার মুক্তিযোদ্ধার তালিকা প্রণয়ন করা হয়েছে। এর আগে ২০০১-২০০৬ মেয়াদে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সত্যায়িত সনদে ৪৫ হাজার মুক্তিযোদ্ধার নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ২০০৯ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সত্যায়িত সনদে আরো ১০ হাজার মুক্তিযোদ্ধাকে তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এছাড়া জিয়া-এরশাদের আমলে ১ লাখ ৭৮ হাজার মুক্তিযোদ্ধার তালিকা করা হয়।
আগামী ২৬ মার্চ ঐ ২ লাখ ৩১ হাজার মুক্তিযোদ্ধার তালিকা প্রকাশ করার প্রস্তুতি নিয়েছে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়। ভারতীয় তালিকা, লালমুক্তিবার্তা ও সরকারি গেজেট ও সনদধারী, সেনা-নৌ বিমানবাহিনী, পুলিশের গেজেট, মুজিবনগর গেজেটে, বীরাঙ্গনা গেজেটে যাদের নাম অন্তর্ভুক্ত আছে তাদের নাম গেজেট আকারে একত্রিতভাবে প্রকাশ করা হবে। এর বাইরে সবুজ মুক্তিবার্তা বা শুধু গেজেটে নাম আছে কিন্তু সনদ নেই তাদেরকে মুক্তিযোদ্ধা তালিকার বাইরে রাখা হচ্ছে। তবে জেলা ও উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ থেকে ইউএনও ও জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে জামুকার যাচাই-বাছাইকৃত নাম এবং লাল মুক্তিবার্তায় প্রকাশিত নামের ক্ষেত্রেও কেউ কেউ অভিযোগ তুলছেন।
ইতিমধ্যে অনেক মুক্তিযোদ্ধাকে অমুক্তিযোদ্ধা আবার অনেক অমুক্তিযোদ্ধাকে মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় স্থান দেওয়ায় পালটাপালটি মামলার সংখ্যা এখন ৩১ হাজার। মুক্তিযুদ্ধের পর সেক্টর কমান্ডার ও সাবসেক্টর কমান্ডারদের প্রকাশনা থেকে জানা যায, মুক্তিযুদ্ধে নিয়মিত বাহিনীর সংখ্যা ছিল ২৪ হাজার ৮০০ এবং অনিয়মিত বাহিনীর সংখ্যা ছিল ১ লাখ ৭ হাজার। অর্থাৎ মোট ১ লাখ ৩১ হাজার ৮০০ জন।
সেক্টর থেকে পাওয়া (মুক্তিযুদ্ধকালীন সেক্টর বিলুপ্তির পর এসব দলিল ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্টের প্রশিক্ষণ ও রেকর্ড সংরক্ষণ প্রতিষ্ঠান ইবিআরসিতে স্থানান্তর করা হয়েছে) দলিলে দেখা যায়, মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা ৭০ হাজার ৮৯৬ জন। (১ লাখ ৩১ হাজার ৮০০ ধরা হলে) বাকি ৬০ হাজার ৯০৪ জনের খোঁজ পাওয়া যায় না।
অপরদিকে, ১৯৯৮ সালে বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা ও প্রক্রিয়া অনুসরণ করে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের তৎকালীন ডিজি মমিনউল্লাহ পাটোয়ারির নেতৃত্বে জেলা ও উপজেলা কমান্ডারদের নেতৃত্বে গঠিত যাচাই-বাছাই কমিটির মাধ্যমে একটি তালিকা করে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কার্যালয়ে সংরক্ষণ করা হয়। এটিই এখন লাল বই নামে সমধিক পরিচিতি। এতে ১ লাখ ৫৪ হাজার মুক্তিযোদ্ধার নাম রয়েছে। এই তালিকায় ইবিআরসিতে সংরক্ষিত ৭০ হাজার ৮৯৬ জনের মধ্যে অনেকের নাম ১ লাখ ৫৪ হাজারের মধ্যে নেই।
২০০১ সালে ক্ষমতায় আসে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার। সে সময়ে আগের নীতি বাদ দিয়ে তৎকালীন মন্ত্রিপরিষদ সচিবের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করা হয় যাদের মুক্তিযোদ্ধার সঠিক তালিকা প্রণয়নে সুপারিশ করার কথা। এই কমিটির সুপারিশে মুক্তিযোদ্ধা সংসদকে বাদ রেখে ইউএনও ও ডিসিদের নিয়ে উপজেলা ও জেলা যাচাই-বাছাই কমিটি করা হয়।
তাদের সুপারিশে ২০০৩ ও ২০০৪ সালে মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা করে দুটি গেজেট প্রকাশ করে। এর একটি ছিল বিশেষ গেজেট যেখানে সামরিক বাহিনীর মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা ছিল ৩৯ হাজার জন এবং অপরটি গেজেট নাম অবিহিত করে তাতে সংখ্যা নির্ধারণ করা হয় ১ লাখ ৫৯ হাজার জন। দুটি মিলে তখন মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা দাঁড়ায় ১ লাখ ৯৮ হাজার জন। জোট সরকারের সময় সংখ্যা বাড়ে ৪৫ হাজার। সূত্র- ইত্তেফাক