বঙ্গবন্ধুকে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে শ্রদ্ধা
পদ্মাটাইমস ডেস্ক : ১৯৭৪ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘে ভাষণ দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। জাতির জনকের জন্মশতবার্ষিকীর ক্ষণগণনার ১০ দিনের মাথায় আজ সেই দিনেই ২৫ সেপ্টেম্বরকে ২০২০ সালের জন্য ‘বাংলাদেশী ইমিগ্রান্ট ডে’ রেজ্যুলেশন পাশ করলেন নিউ ইয়র্ক স্টেট-এর গভর্ণর এন্ড্রু ক্যুমো।
মুক্তধারা ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা বিশ্বজিত সাহা গত নভেম্বরে এটি গ্রহণ করার জন্য সিনেটের স্ট্যাভেস্কির কাছে প্রস্তাবনা পাঠালে তা গত ১২ ডিসেম্বর তিনি সিনেটে উপস্থাপন করেন। গত ১৪ জানুয়ারী নিউ ইয়র্ক স্টেট গভর্ণর এন্ড্রু ক্যুমো এটি ঔ২৩৪৬ স্মারকে রেজ্যুলেশন পাশ করেন।
গত ২০ জানুয়ারী নিউ ইয়র্ক স্টেট সেক্রেটারি আলেন্ড্রো এন পলিনো স্বাক্ষরিত মূল রেজ্যুলেশনটি নিউ ইয়র্কস্থ মুক্তধারা ফাউন্ডেশন গ্রহণ করে। পরে এটি বাংলাদেশ সরকারের কাছে হস্তান্তর করা হবে বলে জানান মুক্তধারা ফাউন্ডেশনের নির্বাহী বিশ্বজিত সাহা।
সেই দিনের ঘটনা
জাতিসংঘের সদর দফতরের সামনে পত পত করে উড়ছে লাল সবুজের রক্তমাখা পতাকা। আরেও শতাধিক দেশের পতাকার পাশে বাংলাদেশ ঠাঁই করে নিয়েছে নিজের আসন। ১৯৭৪ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর। নিউইয়র্কে জাতিসংঘের ২৯তম সাধারণ অধিবেশন। অধিবেশন কক্ষে সদস্য দেশগুলোর রাষ্ট্রনায়ক ও সরকার প্রধানরা। অধিবেশনে সভাপতির আসনে আলজেরিয়ার মুক্তি সংগ্রামের নেতা ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী মুক্তিযোদ্ধা আবদেল আজিজ বুতেফ্লিকা।
সভাপতি ‘বাঙালি জাতির মহান নেতা’ হিসেবে পরিচিতি জানিয়ে বক্তৃতা মঞ্চে আহ্বান করেন বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। বাঙালির মহানায়ক বঙ্গবন্ধু সদর্পে বীরোচিত ভঙ্গিমায় আরোহণ করলেন বক্তৃতা মঞ্চে। তিনিই প্রথম এশীয় নেতা, যিনি এই অধিবেশনে সবার আগে ভাষণদান করেন।
দৃপ্ত পায়ে বক্তৃতা মঞ্চে উঠে ডায়াসের সামনে দাঁড়ালেন বঙ্গবন্ধু। মুহুর্মুহু করতালি। বঙ্গবন্ধু বক্তৃতা শুরু করেন মাতৃভাষা বাংলায়। যে ভাষার জন্য ঢাকার রাজপথে বাঙালি বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়েছিল। সেই ভাষায় প্রথম ভাষণ জাতিসংঘে। বঙ্গবন্ধু বাংলা ভাষাকে বিশ্ব দরবারে আবার ঠাঁই করে দিলেন।
এর আগে ১৯১৩ সালে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নোবেল প্রাপ্তির মধ্যদিয়ে বিশ্ববাসী জেনেছিল বাংলা ভাষার অমর অমূল্য আবেদন। এর ষাট বছর পর ১৯৭৪ সালে বঙ্গবন্ধু বাঙালি জাতির পক্ষ থেকে উচ্চারণ করলেন বিশ্বসভায় বাংলা ভাষার অমর শব্দসমূহ। জাতিসংঘে বিশ্বের সকল নেতা নিজ নিজ মাতৃভাষাতেই ভাষণ দিয়ে থাকেন। জাতিসংঘের সরকারি ভাষা ছয়টি। ইংরেজি, ফরাসী, রুশ, চীনা, স্প্যানিশ ও আরবি। এই ৬ ভাষাতেই বক্তৃতা রূপান্তরিত হয়ে থাকে।
এর আটদিন আগে ১৭ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশে জাতিসংঘের ১৩৬তম সদস্য দেশ হিসেবে মর্যাদা লাভ করে। এর আগে ১৯৭২ ও ১৯৭৩ সালে দু’দু’বার চীনের ভেটোর কারণে বাংলাদেশ জাতিসংঘের সদস্যপদ লাভ করতে পারেনি। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ বিরোধিতা করলেও ১৯৭৪ সালে এসে চীন বাংলাদেশের ব্যাপারে অনেকটা নমনীয় হয়। ফলে চীন তার ভেটো ক্ষমতা প্রয়োগ থেকে বিরত থাকে। ১৯৭৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর তুমুল করতালির মধ্যদিয়ে নবীন রাষ্ট্র বাংলাদেশ জাতিসংঘের সদস্যপদ লাভ করে। ওই দিনই জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশন কক্ষে বাঙালির প্রথম প্রবেশ ঘটে। বিশ্ব মানচিত্রে বাংলাদেশ স্থায়ী আসন পেল যেন।
বাংলাদেশের জাতিসংঘ সদস্যভুক্তির পর বিশ্বের অনেক দেশই অভিনন্দন জানিয়ে বক্তব্য রাখে। জাতিসংঘে মার্কিন স্থায়ী রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, ‘বিশ্বের পার্লামেন্টে নতুন দেশ বাংলাদেশকে স্বাগতম’ জাতিসংঘের মহাসচিব তখন ড: কুর্ট ওয়ার্ল্ডহেইম। তিনিও বাংলাদেশকে স্বাগত জানান, তবে প্রচণ্ড উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছিলেন তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জ্যাকব মালিক ও ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শরণ সিং।
আর সে দিনটিকেই বেছে নিলেন মুক্তধারা ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা বিশ্বজিত সাহা বাংলাদেশী ইমিগ্রান্ট ডে হিসেবে পালন করার পরিকল্পনা হিসেবে। তার প্রস্তাবনায় ২০১৯ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্ক স্টেট সিনেটর স্ট্যাভেস্কি এই দিনটিকেই ‘বাংলাদেশ ইমিগ্রান্ট ডে হিসাবে’ রেজ্যুলেশন পাশ করার জন্য সিনেটে উপস্থাপন করেন এবং দীর্ঘ শুনানির পর এটি সর্বসম্মতিক্রমে পাশ হয়।
আগামি ২০২০ জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমানের শততম জন্মবার্ষিকী। তার আগে ২৫ সেপ্টেম্বরকে বাংলাদেশ রাষ্ট্র রাষ্ট্রীয়ভাবে ‘বাংলাদেশ ইমিগ্রান্ট ডে’ ঘোষণা করে জাতির জনককে শ্রদ্ধা জানাবার গৌরবময় অধ্যায় হিসেবে বিবেচিত হবে বলে অভিজ্ঞ মহলের ধারণা। বহির্বিশ্বে বসবাসরত হাজার হাজার বাঙালি ‘বাংলাদেশী অভিবাসী দিবস’ পালনের মধ্য দিয়ে জাতির জনক কর্তৃক বিশ্ব পরিমন্ডলে বাংলাদেশকে তুলে ধরার ঐতিহাসিক দিনটির গুরুত্বও বহন করবে বলে জানান ‘বাংলাদেশ ইমিগ্রান্ট ডে’ এর উদ্ভাবক বিশ্বজিত সাহা।