রাবিতে শিক্ষক নিয়োগে সকালে ভাইভা, সন্ধ্যায় সিন্ডিকেট
নিজস্ব প্রতিবেদক, রাবি : রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ক্রপ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি বিভাগের শিক্ষক নিয়োগের বৈধতা নিয়ে আদালতে দায়ের করা মামলার রায়ের দিন ধার্য করা হয়েছে আগামী ২৭ জানুয়ারি। কিন্তু রায়ের আগেই শিক্ষক নিয়োগ দিতে তোড়জোড় শুরু করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
আগামী ২৬ জানুয়ারি উপাচার্য অধ্যাপক এম আব্দুস সোবহানের বাসভবনে ভাইভা নেওয়ার তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। একই দিন সন্ধ্যায় সিন্ডিকেট বৈঠক ডাকা হয়েছে। বিভাগের কয়েকজন শিক্ষক বলছেন, রায়ের আগে নিয়োগ কার্যক্রম সম্পন্ন করতে তড়িঘড়ি করছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এজন্য সকালে ভাইভা ও সন্ধ্যায় সিন্ডিকেট ডাকা হয়েছে।
২৬ জানুয়ারি ভাইভা বোর্ডের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ক্রপ সায়েন্স বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘২৪ তারিখ শিক্ষক নিয়োগের ভাইভা বোর্ড বসার কথা ছিল, কিন্তু সেটা স্থগিত করা হয়েছে। আগামী ২৬ জানুয়ারি সকাল ৯টা থেকে ভাইভা শুরু হবে বলেও জানান তিনি।’
রায়ের আগের দিন তোড়জোড় করে কেন ভাইভা নেওয়া হচ্ছে- এমন প্রশ্নের জবাবে বিভাগের সভাপতি ও ভাইভা বোর্ডের সদস্য সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি কিছু জানি না। ২৬ জানুয়ারি ভাইভা অনুষ্ঠিত হবে বলে চিঠি পেয়েছি আমি। এর বেশি কিছু আমি জানি না।’
বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ২০১৬ সালের ৬ নভেম্বর সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক মিজানউদ্দীনের আমলে তিনটি পদে শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। সেখানে ৩৮টি দরখাস্ত জমা পড়ে। পরবর্তী সময়ে বর্তমান প্রশাসন চলতি বছরের ৩০ জুলাই বিজ্ঞপ্তি সংশোধন করে পুনরায় প্রকাশ করে এতে ৪৭টি দরখাস্ত জমা পড়ে। নতুন করে প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিতে শিক্ষক নিয়োগের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করেন বিভাগের প্ল্যানিং কমিটির সদস্য অধ্যাপক আলী আসগর।
রিটের পরিপ্রেক্ষিতে গত বছরের ২১ আগস্ট বিভাগটিতে শিক্ষক নিয়োগ বন্ধে রুল জারি করেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে মামলার বিবাদী রাবি উপাচার্য, রেজিস্ট্রার, কৃষি অনুষদের ডিন, ক্রপ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি বিভাগ ও প্ল্যানিং কমিটির সভাপতিকে চার সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে নির্দেশ দেন বিচারক শেখ হাসান আরিফ ও মো. বদরুজ্জামানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ। গত ১৫ জানুয়ারি শুনানি শেষে আদালত ২৭ জানুয়ারি রায় ঘোষণার দিন ধার্য করেন।
মামলার বাদী অধ্যাপক আলী আসগর অভিযোগ করে জানান, ‘রুল জারির তিন মাস না যেতে ফের শিক্ষক নিয়োগ দিতে তোড়জোড় শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক সাইফুল ইসলামের সঙ্গে যোগসাজশে প্ল্যানিং কমিটিকে চিঠি না দিয়ে পরপর তিনটি প্ল্যানিং কমিটির সভা দেখানো হয়েছে। সভায় অনুপস্থিত থাকলেও প্ল্যানিং কমিটির দুই শিক্ষককে উপস্থিত দেখানো হয়। পরবর্তী সময়ে পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট প্ল্যানিং কমিটির তিনজন সংবাদ সম্মেলন করে অভিযোগ করেন, তাদের আমন্ত্রণপত্র দেওয়া হয়নি। বিভাগে কোনও ধরনের প্ল্যানিং কমিটির মিটিং হয়নি।’
এ বিষয়ে বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘আমার বিভাগের শিক্ষক নিয়োগ হয়নি দীর্ঘ দিন। শিক্ষক ছাড়া অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়া অসম্ভব হয়ে পড়েছে। তাই আমি প্ল্যানিং কমিটির তিনবার মিটিং ডেকেছি। কিন্তু কেউ উপস্থিত না হওয়ায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে প্রশাসনকে জানিয়েছি।’ মিটিংয়ে না থেকেও উপস্থিতি দেখানোর বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ভুলক্রমে ওই শিক্ষকদের উপস্থিতি দেখানো হয়েছিল।’
তবে অধ্যাপক আলী আসগর অভিযোগ করেন, ‘মামলার রায় বিপরীতে যেতে পারে এমন আশঙ্কা থেকে প্রশাসন রায়ের আগে নিয়োগ কার্যক্রম সম্পন্ন করতে চায়।’ তিনি আরও অভিযোগ করেন, ‘প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছিল মাস্টার্স পাস শিক্ষার্থীরা আবেদন করতে পারবে। কিন্তু বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের দুই মাস পর মাস্টার্সের ফল প্রকাশিত হয়েছে এমন শিক্ষার্থীকে আবেদনের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। ভাইভা বোর্ডেও তাকে ডাকা হয়েছে।’
মাস্টার্সের ফল প্রকাশিত হয়েছে এমন শিক্ষার্থীকে আবেদনের সুযোগ দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘আবেদনপত্রগুলো বিশ্ববিদ্যালয় প্রশসান যাচাই বাছাই করেছে। এর সঙ্গে বিভাগের সংশ্লিষ্টতা নেই।’
মামলা চলাকালে শিক্ষক নিয়োগের তোড়জোড়ের বিষয়ে জানতে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক এমএ বারী ও উপাচার্য অধ্যাপক এম আব্দুস সোবহানকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তারা কেউ ফোন রিসিভ করেননি।