রাজশাহী বিমানবন্দরে পুকুর ভরাটে ‘পুকুর চুরি’
নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজশাহীর শাহ মখদুম বিমানবন্দরে উন্নয়ন কাজের নামে সরকারি অর্থ লোপাটের অভিযোগ উঠেছে। এর মধ্যে চারটি পুকুর ভরাটে ‘পুকুর চুরি’র করা হয়। প্রায় আট বিঘা আয়তনের চারটি ছোট আকারের পুকুর ভারট কাজেই ব্যয় দেখানো হয়েছে সোয়া পাঁচ কোটি টাকা। বেসমারিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানের কাছে লিখিত অভিযোগে এসব অনিয়ম তুলে ধারা হয়েছে। গত বছরের ২১ জুন এ অভিযোগ পাঠানো হলেও তা ধামাচাপা পড়ে যায়।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহী বিমানবন্দর উন্নয়নের জন্য রানওয়ের পাশে একটি ছোট আকারের পুকুর ভরাট কাজে ব্যয় দেখানো হয়েছে এক কোটি ৭৫ লাখ টাকা। কিন্তু সেখানে ব্যয় হয়েছে সর্বোচ্চ ২০ লাখ টাকা। ওয়িন ছোকের সামনে আরেকটি পুকুর ভরাটের কাজে ব্যয় করা হয়েছে এক কোটি ৪৯ লাখ টাকা। কিন্তু এখানেও সর্বোচ্চ ব্যয় হয়েছে ২০ লাখ টাকা। সেখানে আরেকটি ছোট আকারের পুকুর ভরাট করতে ব্যয় দেখানো হয়েছে এক কোটি টাকা। কিন্তু প্রকৃত ব্যয় হয়েছে মাত্র ১০ লাখ টাকা। গ্যালাক্সি হ্যাঙ্গারের সামনে আরেকটি পুকুর ভরাট করতে ব্যয় করা হয়েছে এক কোটি টাকা। কিন্তু প্রকৃত ব্যয় হয়েছে সর্বোচ্চ ৩০ লাখ টাকা।
যে পুকুরগুলো ভরাট করা হয়েছে তার একটি রয়েছে মাঝারি আকারের। যার আয়তন সর্বোচ্চ ৪ বিঘা। আর অন্যগুলো মিলে হবে সর্বোচ্চ চার বিঘা। চারটি পকুর মিলে আয়তন হবে থেকে আট বিঘা।
এছাড়াও রানওয়ের পাশে বালি দিয়ে ফিলিংয়ের ভরাট কাজটি করতে ব্যয় করা হয়েছে দুই কোটি টাকা। কিন্তু নামমাত্র ভরাট করে সেই কাজটি সম্পন্ন করা হয়েছে। আর রানওয়ে ৩৫ এর পাশে দুই হাজার ৪০০ ফিট ড্রেন নির্মাণকাজের জন্য ব্যয় করা হয় সবমিলিয়ে ৩ কোটি টাকা। এই ড্রেনের মাটি দিয়েই অন্যান্য ভরাটকাজগুলো করে কোটি কোটি টাকা তোছরুপ করা হয়।
এছাড়াও বিমান বন্দরের মসজিদ নির্মাণের জন্য পাইলিংয়ের কাজটি কোনো রকম পরীক্ষা না করেই জাল সনদ দেওয়া হয়েছে। আবার রেস্ট হাউজ নির্মাণ কাজটির পাইলিংয়ের মাত্র একটি পরীক্ষা করা হলেও অন্যগুলো করা হয়নি। সেখানেও চরম অনিয়ম করা হয়েছে।
অভিযোগ সূত্রে আরও জানা গেছে, রাজশাহী বিমানবন্ধন ঢেলে সাজাতে গত তিন বছরে প্রায় ৬৭ কোটি টাকার উন্নয়নকাজ হাতে নেওয়া হয়। কিন্তু এসব উন্নয়নের কাজে নামে লুটপাট করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার ও প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা সিন্ডিকেট করে এসব সরকারি অর্থ লোপাট করা হয়েছৈ।
অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে, শাহ মখদুম বিমানবন্দরের কার পার্কিয়ের যায়গাটি ১২ ইঞ্চি ঢালাই করার কথা থাকলেও সেটি করা হয়েছে মাত্র ৬ ইঞ্চি। এছাড়াও এই ঢালাইয়ের মাঝে ফাঁকা রাখার কথা ছিল ৪ ইঞ্চি। সেখানে করা হয়েছে ১২ ইঞ্চি। এক নম্বর ফটক থেকে সীমানা প্রাচীরটি প্লাস্টার করার কথা থাকলেও সেটি না করেই কাজ শেষ করা হয়েছে।
রানওয়ের ৩ হাজার ৪০০ ফিট সীমানা প্রাচীরটিও রং এবং প্লাস্টার করার কথা ছিল। কিন্তু সেটি না করেই কাজ শেষ করা হয়েছে। এ্যাপরোনের কার্পেটিং করার কথা ছিল ২ দশমিক ৫০ ইঞ্চি। সেখানে করা হয়েছে মাত্র ৫০ ইঞ্চি। বিমান বন্দরের টার্মিনাল ভবনের সেনেটারি ফিটিং ও দরজা নতুন লাগানোর কথা থাকলেও সেটি না করে বিল উত্তোলন করা হয়েছে।
বেসরমারিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানের কাছে লিখিত অভিযোগ শাহ মখদুম বিমানবন্দরের নিরাপত্তা সুপারভাইজার আব্দুল মতিন। কিন্তু অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে কোনো ধরনের ব্যবস্থা না নেওয়ায় বেসমারিক বিমান পরিবহণ ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব মহবুল হকের কাছে তথ্য অধিকার আইনে গত বছরের ১৯ সেপ্টেম্বর আবেদন করেছিলেন আব্দুল মতিন। ওই আবেদনে ভারপ্রাপ্ত সম্পত্তি কর্মকর্তার অনিয়মের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে কি ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তা জানতে চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু ওই অনিয়মেরও এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
উন্নয়নকাজের নামে অর্থ লোপাটের বিষয়ে জানতে চাইলে রাজশাহী শাহ মখুদম বিমানবন্দর উন্নয়নকাজের তদারককারী ও সিভিল এ্যাভিয়েশনের উপ-সহকারী প্রকৌশলী হাসিবুল হক বলেন, ‘অভিযোগ হয়েছে। তবে নিয়ম মেনেই কাজ হয়েছে। কোনো অনিয়ম করা হয়নি। কাজের মান নিয়েও আমাদের কাছে কোনো ছাড় নাই।’
অভিযোগ করার কথা স্বীকার করে আব্দুল মতিন বলেন, ‘অনিয়ম মেনে না নিতে পেরে আমি অভিযোগ করেছি। কিন্তু ওই অভিযোগের এখনো কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। আদৌ কোনো ব্যবস্থা হবে কি না জানি না।’
রাজশাহী শাহ মখুদম বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপক সেতাফুর রহমান বলেন, ‘উন্নয়ন কাজের নামে অনিয়ম হয়েছে এটা সঠিক নয়। নিয়ম অনুযায়ী সব কাজ হয়েছে এবং হচ্ছে। কিন্তু কারা অভিযোগ করেছে বলতে পারবো না। এটি উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষই ভালো বলতে পারবেন।