উহান থেকে দেশের পথে ৩১৪ বাংলাদেশি
পদ্মাটাইমস ডেস্ক : করোনাভাইরাস মহামারি আকার ধারণ করায় চীনের অবরুদ্ধ উহান নগরী থেকে তিন শতাধিক বাংলাদেশিকে দেশে ফেরত আনা হচ্ছে। শনিবার একটি বিশেষ বিমানে করে দেশের পথে রওনা দিয়েছেন ৩১৪ জন যাত্রী।
উহানের তিয়ানহি ইন্টারন্যাশনাল বিমানবন্দরে স্থানীয় সময় শনিবার ভোর পৌনে ৬টায় (বাংলাদেশ সময় সকাল পৌনে ৮টা) তাদের নিয়ে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি বোয়িং ৭৭৭ উড়োজাহাজ ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেয়। ফ্লাইটটির দুপুর ১২টা নাগাদ দেশে পৌঁছানোর কথা রয়েছে।
বাংলাদেশিদের ফেরত আনতে বোয়িং ৭৭৭-৩০০ ইআর বিমান ১৪ জন ক্রু ও চারজন চিকিৎসককে নিয়ে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ছেড়ে যায় শুক্রবার সন্ধ্যা ৬ টা নাগাদ। এটি স্থানীয় সময় রাত সাড়ে দশটায় চীনের উহান পৌঁছায়। তবে এটি নির্দিষ্ট সময়ে উহান ছাড়তে পারেনি। বিমানবন্দরে স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও স্ক্রিনিংসহ নানা আনুষ্ঠানিকতার কারণে এটির চীন ছাড়তে বিলম্ব হয়।
শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কর্তব্যরত স্বাস্থ্য অধিদফতরের সহকারী পরিচালক ডা. শাহরিয়ার সাজ্জাদ জানান, সকল আনুষ্ঠানিকতা শেষে ওহান থেকে বিশেষ বিমানটি ৩১৪ জন বাংলাদেশি নাগরিককে নিয়ে রওনা হয়েছে। বাংলাদেশ সময় বেলা ১১টা ৫০ মিনিটে বিমানটির শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণের কথা রয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) একজন কর্মকর্তা জানান, সকল পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে ৩১৬ জন বাংলাদেশি নাগরিক ফিরে আসার ছাড়পত্র পেলেও শেষ মুহূর্তে দুজন যাত্রীর গায়ে জ্বর থাকায় তাদেরকে অফলোড করা হয়।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. আবুল কালাম আজাদের কাছে ফ্লাইট বিলম্বের কারণ জানতে চাইলে তিনি সঠিক কারণ জানতে পারেনি বলে জানান। বেলা ১১ টা ৫০ মিনিটে ৩১৪ জন যাত্রী নিয়ে বিমানটি ফিরছে-এমন তথ্য শুনেছেন বলে মন্তব্য করেন।
করোনাভাইরাসের কারণে চীন থেকে দেশে ফিরতে ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের তালিকা তৈরির সঙ্গে যুক্ত আছেন গবেষক ড. রেজা সুলতানুজ্জামান। তিনি জানান, উহানের ২২টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ১৮টি থেকে ৩১৪ জন দেশের পথে রওনা দিয়েছেন। তাদের মধ্যে বেশ কয়েকজন শিশুও আছে।
শুক্রবার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এক যৌথ প্রেস ব্রিফিংয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক সাংবাদিকদের বলেন, এখনও পর্যন্ত আমরা জানি উহান থেকে দেশে ফিরে আসতে ইচ্ছুক ৩৬১ জন বাংলাদেশি নিবন্ধনভুক্ত হয়েছে, এর মধ্যে ১৯টি পরিবারের সঙ্গে ২০টি শিশু রয়েছে।’
এর আগে শুক্রবার সকালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন জানান, প্রবাসী বাংলাদেশীদের বিমানবন্দর থেকে সরাসরি আশকোনা হজ ক্যাম্পে পাঠানো হবে। সেখানে পরের ১৪ দিন রাখা হবে। তিনি বলেন, আগতরা অসুস্থ নয়, তবে আমরা কোনও ঝুঁকি নিতে চাই না।
করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশেষত বাংলাদেশী শিক্ষার্থীদের ভাগ্য নিয়ে উদ্বিগ্ন। তিনি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে চীনে অবস্থানরত যারা ‘ফিরে আসতে ইচ্ছুক’তাদেরকে ফিরিয়ে আনার পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দেন।
আব্দুল মোমেন বলেন, ‘এর আগে, চীন সরকার আমাদের বলেছিল, তারা উহান থেকে ১৪ দিনের আগে কাউকে ফেরার অনুমোতি দেবে না। তবে গতরাতে তারা আমাদের জানিয়েছে, তারা আমাদের নাগরিকদের (শুক্রবার রাতে) পাঠানোর একটি বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছে।’
চীনের অনুমোদন পাওয়ার পর পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে তারা বিষয়টি অবহিত করেছেন এবং তখনই তিনি বাংলাদেশী নাগরিক ফিরিয়ে আনার সুযোগটি গ্রহণ করতে বলেছেন।
মোমেন জানান, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ইতিমধ্যে প্রত্যাবর্তনকারীদের পৃথকীকরণ করতে হজ শিবিরে সব ধরণের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। মন্ত্রী বলেন, তারা সেখানে পর্যবেক্ষণে থাকবে এবং তাদেরকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হবে। তারা ভাইরাস মুক্ত হিসেবে সনাক্ত হলে আমরা তাদেরকে ১৪ দিন পরে ছেড়ে দেবো।
মন্ত্রী বলেন, বর্তমানে শুধুমাত্র করোনা ভাইরাসের কেন্দ্রস্থল উহান শহরে যারা আটকে আছে কেবল তাদেরকে ফিরিয়ে আনা হবে। আমরা আশা করি, চীনের অন্য শহরের যে সব বাংলাদেশি আছেন তাদের ফিরিয়ে আনার দরকার নেই।
এদিকে করোনাভাইরাস আতঙ্কে চীন থেকে ফেরত আসা সকল যাত্রীদের জন্য বিমানবন্দরে সর্বোচ্চ সতর্কতার সাথে পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। জানা গেছে, বিমানবন্দরে পৌছার পর সেখান থেকে তাদেরকে রাজধানীর দক্ষিণখানের আশকোনা হজ ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হবে। সেখানে যাত্রীদের পরীক্ষা-নিরীক্ষাসহ প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসেবার জন্য রাত জেগে অপেক্ষায় ছিলেন স্বাস্থ্যকর্মীরা।
চীন থেকে ফেরত আসা যাত্রীদের মধ্যে কারো ১০০ বা ১০০ ডিগ্রি ফারেনহাইটের ওপর জ্বর থাকলে হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসার জন্য কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হবে। আর যাদের জ্বর বা অন্য কোনো উপসর্গ থাকবে না তাদেরকে আশকোনা হজ ক্যাম্পে কোয়ারেন্টাইন করে রাখা হবে।
আশকোনা হজ ক্যাম্পে পুরুষদের জন্য ৫টি ওয়ার্ড ও নারীদের জন্য ১টি ওয়ার্ড প্রস্তুত রাখা হয়েছে। যারা সম্পূর্ণ সুস্থ তাদেরকে এ ৬টি ওয়ার্ডে রাখা হবে। এছাড়া যারা সামান্য জ্বর বা অন্যান্য অসুস্থতায় ভুগছেন তাদের জন্য একটি আইসোলেশন ওয়ার্ড তৈরি করা হয়েছে।