ক্লাস ছেড়ে আন্দোলনে শাহমখদুম মেডিকেলের শিক্ষার্থীরা
নিজস্ব প্রতিবেদক : বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের (বিএমডিসি) অনুমোদন না পাওয়ায় ভবিষ্যত জীবন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে রাজশাহীর বেসরকারী শাহমখদুম মেডিকেল কলেজের প্রায় ২০০ শিক্ষার্থীর। এ নিয়ে চরম ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে অন্যান্য সকল শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মাঝে। ফলে রোববার সকাল থেকে শিক্ষার্থীরা ক্লাস বর্জন কর্মসূচি পালন করছেন। এর আগে শনিবার দুপুরে একটি সভা করেছেন ওই কলেজের বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। সেই সভা থেকে আন্দোলনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় শিক্ষার্থীরা।
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা জানান, গত সাত বছর ধরে এই প্রতিষ্ঠানটিতে অব্যাহতভাবে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হলেও এখন পর্যন্ত মেলেনি বিএমডিসির অনুমোদন। তাদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তারা ক্লাসে ফিরবেন না।
এর আগে ২০১৪ সালেও এই কলেজটির বিরুদ্ধে অবৈধভাবে শিক্ষার্থী ভর্তির অভিযোগ উঠে। মেডিকেল কলেজের অনুমতি না থাকার পরেও ৫০ জন শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়। এ নিয়ে ওইসময় বিক্ষোভ করে শিক্ষার্থীরা। এরপর ২০১৫-১৬ শেসনে অনুমতি ছাড়ায় ৫০ জন শিক্ষার্থী ভর্তি করায় পরীক্ষা কার্যক্রম স্থগিত করে দেয় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। কারণ কলেজটি ওই সময় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভূক্ত ছিল।
শাহমখদুম মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা জানায়, এই কলেজের প্রথম ব্যাচের শিক্ষার্থীদের মধ্যে গত বছর মাত্র চারজন এমবিবিএস পাশ করেন। কিন্তু এমবিবিএস পাশ করেও কলেজটির বিএমডিসির অনুমোদন না থাকায় ওই শিক্ষার্থীরা এক বছর ধরে ইন্টার্নশীপ করতে পারছেন না। এতে করে তাঁরা প্র্যাক্টিস করারও অনুমতি পাচ্ছেন না। এমনকি পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসকও হতে পারছেন না। ওই চার শিক্ষার্থী হলেন, মামুনুর রশিদ, রুমা খাতুন, জিন্নাহ ও মৌ খাতুন।
শিক্ষার্থীরা আরও জানায়, এখন পর্যন্ত মোট সাতটি ব্যাচে প্রায় ২০০ শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয় কলেজটিতে। এর মধ্যে প্রথম ২ ব্যাচ ও চতুর্থ ব্যাচে ২৫ জন করে এবং পরবর্তিতে ৫০ জন করে শিক্ষার্থী ভর্তির অনুমোদন মিলে। তবে কলেজটিতে শুরু থেকেই অনুমোদন না থাকা, শিক্ষক সংকট এবং হাসপাতালে রোগী না থাকায় আসন ফাঁকায় থেকে যায়। ফলে এখন পর্যন্ত প্রায় ২০০ শিক্ষার্থী রয়েছেন কলেজটিতে।
কলেজের এমবিবিএস পাশ করা শিক্ষার্থী মামুনুর রশিদ বলেন, ‘নানা সংকটের মধ্যেও আমি গত বছর ১২ মার্চ এমবিবিএস পাশ করেছি। কিন্তু কেন ইন্টার্নশীপ করতে পারছি না, সেটি জানতে বার বার মেডিকেল কলেজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের কাছে গেছি। কিন্তু তারা আমাকে কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি। উল্টো আমাকেই নানাভাবে হুমকি দেওয়া হয়েছে, যেন আমি বিষয়টি নিয়ে বেশি বাড়াবাড়ি না করি।’
প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মনিরুল ইসলাম স্বাধীন বলেন, ‘বিএমডিসির অনুমোদনের জন্য আবেদন করা হয়েছে। তারা পরিদর্শন করেছে। কিছু শর্ত দিয়েছে। সেগুলো পূরণের চেষ্টা চলছে। হয়তো দ্রুত আমরা অনুমতি পেয়ে যাবো।
তিনি বলেন, কিছু শিক্ষার্থী হয়তো কারো প্ররোচণায় আন্দোলনে গেছে। তারপরেও তারা তাদের ন্যায্য দাবি উত্থাপন করতেই পারে। আমার শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি বোঝানোর চেষ্টা করছি।’
এর আগে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট বিভাগ কলেজে পরিদর্শন শেষে ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষে ২৫ জন শিক্ষার্থী ভর্তি করার অনুমোদন দেয়। কিন্তু সেখানে ৫০জন শিক্ষার্থী ভর্তি করে কলেজ কর্তৃপক্ষ। পরে এই অনিয়ম রাবি কলেজ পরিদর্শকের নজরে আসার পর ২০১৬ সালে সেই সেশনের কার্যক্রম স্থগিত করা করে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়। কিন্তু সদুত্তর না পাওয়ায় সেই সেশনের কার্যক্রম স্থগিত রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়। ওই শিক্ষার্থীরাও নানা ভোগান্তির শিকার হোন। তারা ৬ মাস ধরে শেসনজটে পড়েন।