যেকোন সময় বাংলাদেশেও হানা দিতে পারে করোনা
পদ্মাটাইমস ডেস্ক : বিশ্ব পরিস্থিতি অনুযায়ী যেকোন সময় বাংলাদেশেও করোনার সংক্রমণ হতে পারে বলে জানিয়েছেন জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা।
শনিবার দুপুরে মহাখালীর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে করোনা নিয়ে ব্রিফিংয়ে এ একথা বলেন তিনি। তবে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই বলেও জানান তিনি।
সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, দেশে ১১১ জনকে পরীক্ষা করা হয়েছে, এদের মধ্যে কারো করোনা নেই। যারা করোনাভাইরাস আক্রান্ত দেশ থেকে এসেছেন এবং করোনার উপসর্গ রয়েছে, তাদেরকে গণপরিবহন এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। প্রয়োজনে আইইডিসিআরের হটলাইনে যোগাযোগের পরামর্শ দেন তিনি। সেই সাথে যাদের শ্বাসকষ্ট রয়েছে হাসপাতালে গিয়ে পরীক্ষা করার পরামর্শও দেয়া হয়।
করোনা সন্দেহে ৩ জনকে আইসোলেশনে রাখা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, গত ২১ ফেব্রুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত আমরা ৪৮ জনকে আইসোলেশন রেখে নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করেছি।
ফ্লোরা বলেন, করোনা এখন পর্যন্ত বিশ্বের ৮৯টি দেশে ছড়িয়েছে। আমরা এসব রোগীদের নিয়ে যেসব গবেষণা হয়েছে, সেসব থেকে জেনেছি- করোনা রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর হার বেশি বয়স্কদের। যারা আক্রান্ত হচ্ছেন, বেশিরভাগই সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন।
তিনি বলেন, করোনার মৃত্যুর সংখ্যা বারবার গণমাধ্যমে আসায় জনগণ আতঙ্কিত হচ্ছে। কিন্তু গণমাধ্যমে এটা আসছে না, কী পরিমাণ মানুষ সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরছে। এখন পর্যন্ত ৫৫ হাজার আক্রান্ত রোগী সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছে।
ফ্লোরা জানান, এখন পর্যন্ত ৭ জন প্রবাসী বাংলাদেশি আক্রান্ত হয়েছেন। এদের মধ্যে একজনই ক্রিটিক্যাল অবস্থায় আছেন। তার বয়সও বেশি। তিনি পূর্ব থেকেই শ্বাসজনিত সমস্যায় ভুগতেন।
এই চিকিৎসক বলেন, করোনা আক্রান্ত হলেই যে হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে, বিষয়টা এরকম না। তাকে আলাদা করে রাখতে হবে। চিকিৎসকের সহায়তায় তার চিকিৎসা বাড়িতেই সম্ভব।
গুজবে কান না দিতে সবাইকে সতর্ক করে তিনি বলেন, কোথায় কে কি বলছে, সেসব বিশ্বাস না করে কেবল সরকারের স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে যা বলা হচ্ছে, আমরা যা বলছি, সেটাই বিশ্বাস করবেন।
তিনি আরও বলেন, আমাদের সচেতন হতে হবে। অপরিস্কার হাতে চোখ নাক মুখ দিবেন না। পারতপক্ষে এখন বিদেশ ভ্রমণ করবেন না। কোথাও একান্তই যদি যেতে হয়, ভ্রমণকালীন সতর্কতা অবলম্বন করেন।
এদিকে বিশ্বব্যাপী করোনায় ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে শুক্রবার পর্যন্ত মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৪৯৫ জনে। অপরদিকে ৫৭ হাজার ৬১১ জন চিকিৎসা শেষে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। বিশ্বে মোট আক্রান্তের সংখ্যা লাখ ছাড়িয়েছে।
প্রাণঘাতী এই ভাইরাসে শুধুমাত্র চীনের মূল ভূখণ্ডেই আক্রান্ত হয়েছেন ৮০ হাজার ৬৫১ জন। আর মারা গেছেন ৩ হাজার ৭০ জন। চীনের বাইরে সবচেয়ে বেশি আক্রান্তের সংখ্যা দক্ষিণ কোরিয়ায় এবং সবচেয়ে বেশি মানুষ মারা গেছেন ইতালিতে। দক্ষিণ কোরিয়ায় এখন পর্যন্ত ৬ হাজার ৭৬৭ জন এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন এবং মারা গেছেন ৪৪ জন। ইরানে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ৪ হাজার ৪৪৭ এবং মারা গেছে ১২৪ জন। অপরদিকে ইতালিতে আক্রান্তের সংখ্যা ৪ হাজার ৬৩৬ এবং মৃত্যু হয়েছে ১৯৭ জনের।
এছাড়া ফ্রান্স, জার্মানি, স্পেন, সিঙ্গাপুর, কুয়েত, বাহরাইন, যুক্তরাজ্যে, মালয়েশিয়া, কানাডা, সুইজারল্যান্ডসহ ৮৫টিরও বেশি দেশ ও অঞ্চলে করোনায় আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরে করোনাভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ শনাক্ত করা হয়। নিউমোনিয়ার মত লক্ষণ নিয়ে নতুন এ রোগ ছড়াতে দেখে চীনা কর্তৃপক্ষ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে সতর্ক করে। এরপর ১১ জানুয়ারি প্রথম একজনের মৃত্যু হয়। ঠিক কীভাবে করোনাভাইরাস সংক্রমণ শুরু হয়েছিল- সে বিষয়ে এখনও নিশ্চিত নন বিশেষজ্ঞরা। তবে ধারণা করা হচ্ছে, উহানের একটি সি ফুড মার্কেটে কোনো প্রাণী থেকে এ ভাইরাস প্রথম মানুষের দেহে আসে। তারপর মানুষ থেকে ছড়াতে থাকে মানুষে।
করোনাভাইরাস মূলত শ্বাসতন্ত্রে সংক্রমণ ঘটায়। এর লক্ষণ শুরু হয় জ্বর দিয়ে, সঙ্গে থাকতে পারে সর্দি, শুকনো কাশি, মাথাব্যথা, গলাব্যথা ও শরীর ব্যথা। সপ্তাহখানেকের মধ্যে দেখা দিতে পারে শ্বাসকষ্ট। উপসর্গগুলো হয় অনেকটা নিউমোনিয়ার মত। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভালো হলে এ রোগ কিছুদিন পর এমনিতেই সেরে যেতে পারে। তবে ডায়াবেটিস, কিডনি, হৃদযন্ত্র বা ফুসফুসের পুরোনো রোগীদের ক্ষেত্রে ডেকে আনতে পারে মৃত্যু।
করোনাভাইরাস এর কোনো টিকা বা ভ্যাকসিন এখনো তৈরি হয়নি। ফলে এমন কোনো চিকিৎসা এখনও মানুষের জানা নেই, যা এ রোগ ঠেকাতে পারে। যারা করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন তাদের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলাই আপাতত এই রোগ থেকে বাঁচার একমাত্র উপায়।