বাংলাদেশে তিনজনের দেহে করোনাভাইরাস
পদ্মাটাইমস ডেস্ক : বাংলাদেশে প্রথমবারের মত তিনজনের মধ্যে নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছে বলে জানিয়েছে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান-আইইডিসিআর। আক্রান্তদের মধ্যে দুজন পুরুষ, একজন নারী; তিনজনই বাংলাদেশি। তাদের মধ্যে দুজন ইতালির দুটি শহর থেকে সম্প্রতি দেশে ফিরেছেন। এদের মধ্যে একজনের সংস্পর্শে আসায় পরিবারের আরেক সদস্য আক্রান্ত হয়েছেন।
ইনস্টিটিউটের পরিচালক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা রোববার আইইডিসিআরের নিয়মিত ব্রিফিংয়ে বলেন, “তাদের সবার অবস্থাই স্থিতিশীল। তিনজনকেই হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।”
ওই তিনজনের সংক্রমণের বিষয়ে শনিবার নিশ্চিত হওয়ার কথা জানিয়ে অধ্যাপক ফ্লোরা বলেন, “দুজন দেশে আসার পর তাদের উপসর্গ দেখা দেয়। আমাদের হটলাইনে ফোন দিলে আমরা তাদের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষাগারে পাঠাই। সেখানে দুজনের পজেটিভ আসে।
“তাদের কন্টাক্টে থাকা চারজনকে পরীক্ষা করেছি। একজন পজেটিভ। বাকিরা নেগেটিভ এসেছে।”
করোনাভাইরাসে মৃতের সংখ্যা বাড়ছেই। এখন পর্যন্ত ১ লাখ ৬ হাজার ১৯৫ জন এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। প্রাণঘাতী এই ভাইরাসে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৬শ জনে। এছাড়া এই ভাইরাসে আক্রান্ত ৬০ হাজার ১৯০ জন চিকিৎসা শেষে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছে। বিশ্বব্যাপী ১০৩টি দেশ ও অঞ্চলে এই ভাইরাসের প্রকোপ ছড়িয়ে পড়েছে।
শুধুমাত্র চীনের মূল ভূখণ্ডেই করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ৮০ হাজার ৬৯৬ এবং মৃত্যু হয়েছে ৩ হাজার ৯৭ জনের। চীনের পর করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি দক্ষিণ কোরিয়ায়। দেশটিতে এই ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ৭ হাজার ১৩৪ এবং মৃত্যু হয়েছে ৫০ জনের।
চীনের বাইরে সবচেয়ে বেশি মৃত্যুর ঘটনা ইতালিতে। সেখানে আক্রান্তের সংখ্যা ৫ হাজার ৮৮৩ এবং মৃত্যু হয়েছে ২৩৩ জনের। অপরদিকে, ইরানে এখন পর্যন্ত ৫ হাজার ৮২৩ জন এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে এবং মারা গেছে ১৪৫ জন।
জাপানে নোঙ্গর করা প্রমোদতরী ডায়মন্ড প্রিন্সেসের ৬৯৬ যাত্রী এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে এবং মৃত্যু হয়েছে ছয়জনের। জার্মানিতে এই ভাইরাসে ৮শ জন আক্রান্ত হয়েছে। ফ্রান্সে ৯৪৯ জন আক্রান্ত হয়েছে এবং মারা গেছে ১৬ জন। জাপানে আক্রান্ত হয়েছে ৪৬১ জন এবং মৃত্যু হয়েছে ৬ জনের।
স্পেনে আক্রান্ত ৫২৫ এবং মৃত্যু হয়েছে ১০ জনের, যুক্তরাষ্ট্রে আক্রান্ত ৪৩৮, মৃত্যু ১৯। সুইজারল্যান্ডে আক্রান্ত ২৬৮ এবং মারা গেছে ১ জন, যুক্তরাজ্যে আক্রান্ত ২০৯ মৃত্যু ২। ইরাকে আক্রান্ত ৫৪, মৃত্যু ৪। ভারতে ৩৪ জন আক্রান্ত হয়েছে। তবে দেশটিতে এখন পর্যন্ত এই ভাইরাসে আক্রান্ত কোনো রোগীর প্রাণহানি ঘটেনি।
এছাড়া, সুইডেন আক্রান্ত ১৬১, সিঙ্গাপুরে ১৩৮, নেদারল্যান্ডসে আক্রান্ত ১২৮ এবং মৃত্যু ১, নরওয়েতে আক্রান্ত ১২৭, বেলজিয়ামে ১০৯, হংকংয়ে ১০৮, মালয়েশিয়ায় ৯৩, অস্ট্রিয়ায় ৮১, অস্ট্রেলিয়ায় আক্রান্ত ৭৭, মৃত্যু ৩, বাহরাইনে ৮৫, কুয়েতে ৬১, কানাডায় ৬০, থাইল্যান্ডে ৫০ এবং মৃত্যু ১, তাইওয়ানে আক্রান্ত ৪৫ এবং মৃত্যু ১, গ্রিসে ৬৬, আমিরাতে ৪৫, আইসল্যান্ডে ৫০, সান মারিনোতে ২৬ জন আক্রান্ত এবং মৃত্যু ১, ডেনমার্কে আক্রান্ত ২৭, লেবাননে ২৮, ইসরাইলে ২৫, চেক রিপাবলিকে ২৬, আয়ারল্যান্ডে ১৯, আলজেরিয়াতে ১৯, মিসরে ৪৮ এবং ভিয়েতনামে ১৭ জন এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে।
অপরদিকে, ওমানে ১৬, ফিলিস্তিনে ১৯, মিসরে ১৫, ফিনল্যান্ডে ১৯, ব্রাজিলে ১৯, ইকুয়েডরে ১৪, পর্তুগালে ১৩, রাশিয়াতে ১৫, ক্রোয়েশিয়ায় ১২, কাতারে ১২, ম্যাকাউতে ১০, এস্তোনিয়ায় ১০, জর্জিয়ায় ১৩, রোমানিয়ায় ১৩, আর্জেন্টিনায় ৯, স্লোভেনিয়ায় ১২, আজারবাইজানে ৯, বেলারুশে ৬, মেক্সিকোতে ৭, পাকিস্তানে ৬, ফিলিপাইনে আক্রান্ত ৬ এবং মৃত্যু ১, সৌদি আরবে ৭, চিলিতে ৭, পোল্যান্ডে ৬, স্লোভাকিয়ায় ৩, পেরু ৬, ইন্দোনেশিয়ায় ৪, নিউজিল্যান্ডে ৫, সেনেগালে ৪ ও হাঙ্গেরিতে ৫ জন আক্রান্ত হয়েছেন।
এছাড়া লুক্সেমবার্গে ৩, উত্তর মেসিডোনিয়ায় ৩, বসনিয়ায় ৩, ডোমিনিক প্রজাতন্ত্রে ২, মরক্কোতে ২, আফগানিস্তান ৪, কম্বোডিয়া ২, বুলগেরিয়া ২, ক্যামেরুন ২, মালদ্বীপ ২, দক্ষিণ আফ্রিকা ২ জন এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। অপরদিকে, আন্দোরা, আর্মেনিয়া, জর্ডান, লাটভিয়া, লিথুনিয়া, মোনাকো, নেপাল, নাইজেরিয়া, শ্রীলঙ্কা, তিউনিসিয়া, ইউক্রেন, ভুটান, কোস্টারিকা, ভ্যাটিকান সিটি, গিব্রালটার, সার্বিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা এবং টোগোতে একজন করে এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) এই ভাইরাসের সংক্রমণকে বৈশ্বিক স্বাস্থ্যবিষয়ক জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে। বছরের এই সময়ে অনেকেই বেড়াতে বের হন। ব্যবসা ও পড়াশোনার কাজেও অনেককে দেশের বাইরে যেতে হয়। অনেকে আকাশ পরিবহনে ও বিমানবন্দরে চাকরি করেন। কাজেই করোনাভাইরাস নিয়ে এমন ব্যক্তি ও তাদের পরিবারের উদ্বেগ থাকাটাই স্বাভাবিক।