মহামারির মহাযুদ্ধে অকুতোভয় পুলিশ

প্রকাশিত: মে ২৮, ২০২০; সময়: ৯:১৬ অপরাহ্ণ |
খবর > মতামত
মহামারির মহাযুদ্ধে অকুতোভয় পুলিশ

সরকার দুলাল মাহবুব: আমাদের দেশে জনমত পুলিশের পক্ষে নয়। অভিজ্ঞতার অনেক তিক্ততা থেকে হয়তো জনমনে বহুদিন ধরে প্রতীতির এই বীজটি উপ্ত হয়ে থাকতে পারে। অবশ্য এ বিশ্বাসের উল্টো মতাবলম্বীও যে খুঁজে পাওয়া যাবে না তা নয়। কারণ বিশ্বাসটা হলো অভিজ্ঞতা প্রসূত একটি বিষয়।

যাহোক, পুলিশদের নিয়ে আমাদের উন্নাসিককতা যে খানিকটা বেশি তা অস্বীকার করবার জো নেই। আর, এ কারণে পুলিশের ইতিবাচক দিক নিয়ে কিছু বলতে গেলে অনেকে তা অনেক ভাবে নেবেন সেটাই স্বাভাবিক।

তা সত্বেও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর এই সদ্যদের নিয়ে দু-একটি কথা বলার ইচ্ছা প্রকাশ করি। কারণ বলবার দিন আজ এসেছে বলেই মনে হয়। তা না হলেও অন্ততপক্ষে ‘ভালোকে ভালো, আর মন্দকে মন্দ’ বলবার অভ্যাসটা আমাদের গড়ে তুলতে হবে। কারণ এ দায়টা আমাদের বিশেষ নাগরিক দায়িত্ববোধের মধ্যে পড়ে।

আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর মধ্যে জনগণের সবচেয়ে কাছের বাহিনী বলতে পুলিশ বাহিনীকেই বুঝায়। অন্য দেশের মতো আমাদের দেশেও এটা দৃশ্যমান সত্য। অবশ্য আমাদের দেশে পুলিশের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম, দুর্নীতির অভিযোগ হর-হামেশায় শোনা যায়, জানাও যায়। কিন্তু পুলিশের স্লোগানটা বড় আশ্বাসের, বড় আস্থারও বটে। তা হলো ‘পুলিশ জনগণের বন্ধু’।

বাস্তবে পুলিশ ও জনগণের সম্পর্ক ঠিক উল্টোটাই দেখা যায়। আবার পুলিশের মহানুভবতার গল্পও শোনা যায়। কিন্তু প্রচলিত মত হলো পুলিশ কখনো মহানুভব হতে পারে না। যদি হয় তা হলে গল্পটা হয় অবিশ্বাস্য। কিছুটা আশ্চর্যেরও হয় বটে। পুলিশ কখনো মহানুভব হতে পারে? পুলিশ যখন চোর-বদমাসদের একই সাথে বন্ধু এবং শত্রু। পুলিশ পত্রিকার শিরোনাম হতে পারে, কিন্তু তাকে নিয়ে মহানুভবতার গল্প লেখা চলে না। পুলিশ যদি চোরকে সাহায্য করে, তবে যার চুরি গেছে তার কাছে হবে মহাপাপী, আর যদি চুরির বিপক্ষে অবস্থান নেয়, তবে চোরের কাছে পৃথিবীর সবচেয়ে খারাপ মানুষই হয় পুলিশ।

কিন্তু কয়েকবছর আগে যুক্তরাষ্ট্রের পত্র-পত্রিকায় একজন পুলিশ অফিসারকে মহানুভব হিসেবে চিত্রায়িত করা হয়েছিল। খবরটি ছিল এমনÑ এক মা ক্ষুধার্ত শিশুর জন্য একটি শপিংমল থেকে কিছু দুধসহ অন্যান্য খাবার চুরি করেছিলেন।

শপিংমলে চুরি যাওয়া খাদ্য সামগ্রীর মূল্য প্রদান করে মালিকের কাছে অনুমতি সাপেক্ষে সেই চোর মাকে ছেড়ে দিয়েছিলেন পুলিশ। পাশাপাশি ওই মায়ের কাছে এই মর্মে মুচলেকা নিয়েছিল যে, তিনিও স্বাবলম্বী হয়ে অন্যকে এভাবেই সহায়তা করবেন।
বাংলাদেশের পত্র-পত্রিকাগুলো খবরটা সেদিন ফলাও করে প্রকাশ করেছিল। অবশ্য আমাদের দেশে পুলিশের কোন কাজই পত্র-পত্রিকায় তেমনটা প্রসংশার দাবী রাখেনি। তাতে কী? বিদেশী পুলিশ তো এই মহানুভবতার গল্পটা সেদিন রচনা করেছিলেন। আর দেশী-বিদেশীর কিছুটা তফাৎ আমাদের মনে তো থাকেই। বিদেশী কিছুর প্রতি আমাদের আকর্ষণ আজ খানিকটা সহজাত বলেই মনে হয়। যদিও আমাদের যুগসন্ধিক্ষণের কবি ঈশ্বর চন্দ্র গুপ্ত লিখেছিলেনÑ ‘কতরূপ স্নেহ করি/ দেশের কুকুর ধরি,/ বিদেশের ঠাকুর ফেলিয়া’।

অবশ্য একালের সাথে ঈশ্বর চন্দ্র গুপ্তের কালিক ব্যবধান অনেক বেশি। তাই দীর্ঘ কালচক্রে আমাদের বিশ্বাস-অবিশ্বাস আশা-আকাঙ্খা ও প্রেমের ধরন খানিকটা বদলাবে তাতে বিস্ময়ের আর কী আছে। এখন বিদেশী সব কিছুর প্রতি আমাদের অন্ধ বিশ্বাস, অগাদ ভক্তি। বিদেশী পুলিশের প্রতিও একটা সহজ সহানুভূতি বা সহজাত শ্রদ্ধাও রয়েছে। কিন্তু আমাদের দেশে কোন পুলিশের এমন কাজকে তো ভাল চোখে দেখবোই না, বরং অল্প সংখ্যক পুলিশের কর্মকান্ডের উপর ভিত্তি করে দোষারোপ করা হয় পুরো পুলিশ বাহিনীকে।

জনরোলে বাতাসে ভাসে, পুলিশ অর্থ ছাড়া কাজ করে না। সাধারণ মানুষকে জিম্মি করাই পুলিশের কাজ। যদিও পুরো পুলিশ সদস্য এই কর্মকাণ্ডে জড়িত নন। তবুও পুলিশমাত্রেই আমাদের এমনটা বিশ্বাস।

কিন্তু আস্থার জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে কে? কোন দফতর কিংবা অধিদফতর? যে দেশে শিক্ষকরা ক্লাসের চেয়ে কোচিং-এ সময় দেন বেশি সে দেশে আমজনতার শিক্ষার কী বেহাল দশা তা বলার অপেক্ষা রাখে না। যে দেশে নির্বাচিত প্রতিনিধিরা জনগণের অর্থের লোভ সংবরণ করেন না, যে দেশে ডাক্তাররা ভিডিও কলে রুগি দেখে ফি নেনÑএমন হাজারো উদাহরণ জুটবে। কিন্তু দোষটা পুলিশর যত, ততটা আর কারো নয়।

মানি পুলিশ মিথ্যা সাত-পাঁচ মামলা দিয়ে মানুষকে হয়রানি করে। মিথ্যা ওয়ারেন্টে মানুষ ধরে এনে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেয়। আবার তল্লাসীর নামে মাদক দিয়ে অনেক সাধারণ মানুষকে ফাঁসিয়ে হয়রানি করার রেকর্ডও কম নয়।

সাধারণ মানুষও তাতে কম যায় কী! অন্যায় করে বলেইতো পুলিশের প্রয়োজন হয়। পুলিশ মামলা দিয়ে ফাঁসিয়ে হয়রানি করে, হত্যা, খুন, জখম, ধর্ষণের মতো ঘটনা ভিন্নভাবে উপস্থাপন করে ভিন্নধারায় প্রবাহিত করে। আর এ অন্যায়গুলো গুটি কয়েক পুলিশ সদস্য করে বলেই আজ পুরো পুলিশ কলুষিত হয়েছে। ক্ষুন্ন হচ্ছে পুলিশ বাহিনীর কুড়িয়ে আনা অনেক অর্জন।

আর হবেই বা না কেন? পুলিশ হোন, জজ হোন, ব্যারিস্টার হোন, শিক্ষক হোন বা জনপ্রতিনিধি। কাওকে তো আর ফেরেস্তার মতো দেখি না। তারা এদেশের কোন না কোন গ্রাম, শহর ও পরিবার থেকে এসেছেন। নিজেদের কাছে প্রশ্ন করলেই উত্তর পাওয়া যাবে মানুষ হিসেবে আমরা কতটা নিচে নেমেছি। পুলিশের লাভ-ক্ষতির ফিরিস্তি ক্ষতিয়ে দেখতে আমাদের যতটা আগ্রহ, ততটা অন্যত্র নয়।

যাহোক, বর্তমানে বিশ্ব আক্রান্ত মরণব্যাধি করোনা ভাইরাসে। পুরো বিশ্ব কাঁপিয়ে দিয়ে দাপিয়ে চলেছে কোভিড-১৯। বাংলাদেশে আমরাও করোনা থেকে বাঁচতে রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্তে কোয়ারেন্টাইন, হোম কোয়ারেন্টাইন, আইসোলেশন এবং নিরাপদ ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে অবস্থান করছি।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, প্রিন্ট, অনলাইন ও ইলেক্ট্রনিক্স মিডিয়ায় বারবার ঘর থেকে বের না হতে এবং নিরাপদে থাকতে বার্তা দেওয়া হচ্ছে। একই সাথে সর্তক থেকে করোনা প্রতিহত করতে হাত ধোয়াসহ বিভিন্ন তথ্য বা পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। আর আমাদের ঘরের বাইরে নিরাপত্তা রাখার পাশাপাশি যারা বলে চলেছেন আপনি ঘরে থাকুন, সচেতন থাকুন, নিজে বাঁচুন-পরিবার বাঁচান, দেশ বাঁচান। মাইক হাতে নিয়ে শহর থেকে শুরু করে গ্রামাঞ্চলে গিয়ে এভাবেই মানুষকে সচেতন করার চেষ্টা করছেন সেই মানুষগুলোই হলো আইন শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী, আমাদের পুলিশ।

জন্মের পর থেকেই অনেককিছুর সাথে বাংলাদেশ পুলিশের নাম শুনেছি, দেখেছি। তারা কি কাজ করেন, অনেকটাই পত্র-পত্রিকায় এসেছে। কিছুটা দেখেছি, কিছুটা শুনেছি। দেশের আইন প্রয়োগকারী সংস্থা হিসেবে সুনাম-দুর্নাম দুটোতেই বাংলাদেশ পুলিশের অনন্য ভূমিকা রয়েছে।

একাত্তরের পর থেকে মরণ ভাইরাস খ্যাত করোনা পূর্ববর্তী বাংলাদেশ পুলিশের কতিপয় কর্মকর্তাসহ সম্পৃক্তদের ভূমিকা নিয়ে নানা শ্রেণির মধ্যে ছিল চরম বিষাদাগার। অথচ মরণ ভাইরাস করোনাকে প্রতিহত করতে আজ দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে বাংলাদেশ পুলিশের প্রতিটি সদস্য দায়িত্বে অবিচল ভূমিকা পালন করে চলেছেন। তাদের এ অব্যাহত চেষ্টায় সত্যিই আমরা আজ গর্বিত না হয়ে পারি না।

শুধু তাই নয়, পুলিশকে নিয়ে আজ শোনা যাচ্ছে মানবতার গল্প, মহানুভবতার গল্প। শোনা গেলো, এক মাকে ফেলে গেছেন তার প্রিয় সন্তানেরা। পুলিশ সেই অসহায় ‘মা’কে সেবা শুশ্রুষা দিয়ে বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখিয়েছেন। গর্ভবতী মা’কে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পৌঁছে দিয়েছে পুলিশ। এই সংকট মূহুর্তে খাদ্য সামগ্রী পর্যন্ত পৌঁছে দিচ্ছে পুলিশ।

গত ১১ মে সকাল অনুমান সাড়ে আটটায় গর্ভবতী কামরুন্নাহারের প্রসব বেদনা শুরু হলে কোনো অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করতে না পেরে তার স্বামী থানা পুলিশের সহায়তা চান। তখন বংশাল থানার ওসি শাহীন ফকির সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন। সঙ্গে সঙ্গে ফোর্সসহ তিনি ওই বাড়িতে যান। সামাজিক দুরত্ব বজায় রেখে অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী ও তার স্বামীকে পুলিশের গাড়ীতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে ওই নারী একটি পুত্র সন্তান জন্ম দেন।

আবার চাঁপাইনাববগঞ্জের রহনপুর রেল স্টেশনের পাশে ভাঙ্গা ছাউনির নিচে শতবর্ষী এক অসুস্থ বৃদ্ধাকে কনকনে শীতে ফেলে গেছেন পরিবারের সদস্যরা। তার গায়ে গরম পোশাক না থাকায় শীতে কাঁপতে থাকেন। অসহায় এই বৃদ্ধা তার পরিবার-পরিজনের পরিচয় না বলতে পারায় সেখান থেকে তাকে উদ্ধার করে এনে রাখেন দুই পুলিশ সদস্য তৌহিদুল ইসলাম ও নুরনবী। দেশ সেবায় এখন পর্যন্ত ১৫ জন পুলিশ সদস্য মৃত্যুবরণ করেছেন। আক্রান্তে রয়েছেন অসংখ্য। প্রতিদিনই মারা যাচ্ছেন পুলিশ সদস্য।

এব্যাপারে কাটাখালি পৌর মেয়র আব্বাস আলী যথার্থ বলেছেন বলে আমি সমর্থন করি। তিনি ফেসবুকে লিখেছেন, “খুব কঠিন বাস্তবতায় পৃথিবী। এই গর্বিত সন্তানদের কোন কোন পরিবার হয়তো একেবারে নিঃস্ব। স্ত্রী হলো বিধবা, সন্তানরা হলো পিতৃহারা। বাংলাদেশ পুলিশের সাব ইন্সপেক্টর রাসেল বিশ্বাস (৩৫) একজন গর্বিত করোণা যোদ্ধা। তিনি বাংলাদেশের জনগণের সেবা করতে গিয়ে করোনাই আক্রান্ত হয়ে ২৮ মে বেলা ১১টায় ইন্তেকাল করেছেন। আমরা কি এসব বীরদের মনে রাখব নাকি সময়ের সাথে সাথে এদেরকে ভুলে যাব? আমি মনে করি, যারা করোণা যুদ্ধে মানুষের সেবা করতে গিয়ে নিজের মূল্যবান জীবন বিলিয়ে দিচ্ছেন, তাদের অসহায় পরিবারগুলোর সম্পূর্ণ দায়িত্ব রাষ্ট্রের নেওয়া উচিত। রাষ্ট্রের নীতি নির্ধারকদের কাছে আমার অনুরোধ, এ বিষয়টি আপনারা ভেবে দেখবেন”।

মরণকে আলিঙ্গন করে পুলিশ বাহিনীর প্রতিটি সদস্যের এই প্রশংসনীয় উদ্যোগ, কর্মযজ্ঞ, কর্মতৎপরতা, মহানুভবতা, অন্যের বিপদে ঝাঁপিয়ে পড়া, প্রতিটি নাগরিককে সুরক্ষা দিতে প্রাণপণে চেষ্টা চালিয়ে যাওয়াটা আজ সত্যিই বাঙালি জাতির জন্য এক অনন্য এবং উজ্জল দৃষ্টান্ত।

মহামারী করোনা ভাইরাসে আজকে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে কেউ কোন প্রশ্ন তুলতে পারছি না। অথচ দেখতে পাচ্ছি, সরকারি হাসপাতাল, বেসরকারি ক্লিনিকে, হাসপাতালে এমনকি প্রাইভেট চেম্বারে চিকিৎসকরা ঠিক মতো চিকিৎসা সেবা দিচ্ছেন না। এমন অভিযোগ শুনতে শুনতে কান ঝালাপালা, চোখও ছানাবড়া হয়ে উঠছে।

আমার স্বল্পজ্ঞানে ডাক্তার ও পুলিশ রাষ্ট্র ও জীব সেবায় নিয়োজিত। তবে দেশের এই সংকট মূহুর্তে জীব সেবক ডাক্তার আর দেশ সেবক পুলিশের দায়িত্ব ও নৈতিকতার বিরাট পার্থক্য হয়ে গেল। এ পার্থক্য অনেক বড় দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে অনেককাল। দেশের মানুষকে এক হতাশ করা বার্তা দিয়ে যাচ্ছেন ডাক্তারগণ। করোনাতো বটেই আজকে সর্দি-জ্বরসহ সাধারণ অসুখেরও সেবা পাওয়া যাচ্ছে না ডাক্তারদের কাছে। যারা সরকারের চাপে আছেন তিনারাও বিবেকের কাছে প্রশ্ন করলে পেয়ে যাবেন দায়িত্ব ও নৈতিকতার কতটুকু পালন করছেন তারা। কাউকে ছোট বা হেয় করার জন্য নয়, শুধু দায়িত্ব, কর্তব্যের বিষয় মনে করিয়ে দিতেই এই উদাহরণ তুলছি মাত্র।

করোনা যুদ্ধ ক্ষেত্র থেকে একরকম পালিয়েছেন সেবার প্রতিক ডাক্তারগণ। তবে করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজের সহকারি অধ্যাপক ডা. মঈন উদ্দিন। যিনি করোনায় মৃত্যুবরণ করেন। তাঁকে এলাকায় মানবিক ডাক্তার হিসেবে জানেন ও চিনেন। তিনি সপ্তাহে একদিন নিজ গ্রাম সুনামগঞ্জের ছাতকে যেতেন এবং বিনামূল্যে সেবা দিতেন। তার মানে করোনায় নয়, সবসময়ই মানবিক ছিলেন, জনগণের ছিলেন। কিন্তু করোনা ভাইরাসে একজন নিবেদিত প্রাণ চিকিৎসকের মৃত্যু খুবই দুভাগ্যজনক। তিনিও মরণের আগে ডাক্তারের প্রতি বিরুপ প্রতিক্রিয়া নিয়ে পরপারে গেছেন। আর এটা সামগ্রিকভাবে অন্যান্য ডাক্তারদের উদাসীনতার দিকেই তীর ছুড়ে।

এছাড়াও করোনায় দেশের ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো বন্ধ রয়েছে। এতে সাধারণ রুগিরাও দুর্ভোগে আছে। এসব সেন্টারের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেয়া উচিৎ বলে অভিজ্ঞজনেরা জানান। আবার অন্যদিকে যাদের ঢাল-তলোয়ার বলতে সাগুদানা ও পানি এসব হোমিওপ্যাথি ডাক্তারগণ রুগি দেখে সান্ত্বনা দিচ্ছেন। এতে রুগিদের মধ্যে মনোবল বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এরপরেও যেসব ডাক্তার নিবেদিত এবং নিরলস সেবা দিয়ে যাচ্ছেন তাঁদেরকে স্যালুট জানাই।

চিকিৎসকদের এমন খবরের সাথে ফ্রি খবর হচ্ছে বর্তমান ক্ষমতাসীন দলের কতিপয় নেতাদের প্রকৃত চরিত্র ও তাদের বিভিন্ন অনৈতিক কর্মকান্ড দেখে। যেখানে পুরো দেশ আজ অসহায়। সেখানে ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের সরকারি ত্রাণের চাল চুরির মহোৎসবে পরিণত হয়েছে। এখনো বরখাস্ত হচ্ছেন জনপ্রতিনিধিরা। চিকিৎসক সেবা দিচ্ছেন না, দলীয় লোকজন ত্রাণের চাল চুরি করছেন, আর জনপ্রতিনিধিরা সুষ্ঠু ভাবে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ তো করছেনই না। আবার খাদ্য সামগ্রী দিয়ে ছবি তোলার পর তা ছিনিয়ে নিয়েছেন এমন খবরও পড়তে হলো পত্র-পত্রিকায়।

অন্যের হক মেরে খাওয়ার বাসনা অনেক আগে থেকেই রয়ে গেছে আমাদের অনেকের। যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশে ৭ কোটি বাঙালির জন্য সাড়ে ৭ কোটি শীতবস্ত্র আসলেও অবশেষে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নিজেরটাই কিন্তু খুঁজে পাননি।

তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অভিজ্ঞতা নিঃসন্দেহে অনেক বেশি। তিনিও বুঝেছিলেন বলেই সম্ভবত বিকাশের মাধ্যমে অসহায় মানুষকে টাকা দেওয়ার কাজটা নিশ্চিত করলেন। এভাবে ৫০ লাখ পরিবারকে নগদ অর্থ প্রদান করে একটি যুগান্তকারি উদ্যোগ নিয়েছেন তিনি। অনেক সমালোচক ব্যক্তিকেও এ নিয়ে প্রশংসা করতে শুনেছি। অনেকে এখন এও বিশ্বাস করছেন, এ না হলে সঠিক প্রাপ্যদার টাকাগুলো পেতেন না। আবার অনেকে বলছেন এখানে জনপ্রতিনিধিদের হেয় করা হয়েছে। কিন্তু আমি বিশ্বাস করি চুরির দুর্নাম থেকে জনপ্রতিনিধিদের বাঁচালেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

কিন্তু আমরা নীবিড় পর্যবেক্ষণে দেখতে পাচ্ছি, আজকের পুলিশ নতুন ভূমিকায় অবতীর্ণ, এক নতুন মাত্রা যোগ করলেন তারা জাতির এই দুর্দিনে। সবাই হাত গুটিয়ে নিলেও পুলিশ সদস্যরা কিন্তু ঘরে বসে নেই। তারা শ্রান্তি, ক্লান্তি দূরে ঝেড়ে ফেলে অন্যের বিপদে পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন। তারা আজ ঘর ছেড়েছেন পরের জন্য। ভুলে গেছেন তার পরিবার ও স্বজনদের কথা। খাবার নেই, ছুঁটছেন পুলিশ খাবার দেওয়ার জন্য। করোনা সন্দেহে বা উপসর্গ নিয়ে অনেকে আজ অসুস্থ, মারাও গেছেন অনেকে। এই পুলিশ সদস্যরাই ছুঁটে যাচ্ছেন সেখানে। শহর, গ্রামগঞ্জ, পাড়া মহল্লা, হাট বাজার, দোকানপার্ট সবস্থানেই আর কেউ না থাকলেও পুলিশ কিন্তু আছে। তারা অনেকেই করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন। তবুও মৃত্যুভয় উপেক্ষা করে তারা আজ অকুতোভয়; করোনা মাহামারির মহাযুদ্ধে তাদের পদযাত্রা আজ নির্ভিক। তাদের সেবা, তাদের ভালোবাসায় আজ পুরো বাঙালি জাতি অভিভূতÑ এটা শুধু আমার ব্যক্তিগত উপলব্দি নয়।

জনগণের প্রত্যাশা, মানুষ দিয়ে কখনো পুরোপুরি মানুষের মধ্যে বিবেকের পরির্বতন আনা সম্ভব হয় না। প্রয়োজন সৃষ্টিকর্তার হস্তক্ষেপ, প্রাকৃতিক হস্তক্ষেপ। তাহলে হয়তো মানুষে মানুষে ভেদাভেদ, রাগ-বিরাগ, মান-অভিমান সব কিছু ভুলিয়ে নতুন দেশ, নতুন জাতি, নতুন সেবা, নতুনের আহবানে এগিয়ে যাওয়ার অনুপ্রেরণা আসতে পারে। এমনই এক হস্তক্ষেপ এই প্রাণঘাতি করোনা।

শুধু করোনা নয়, প্রতিটি ক্ষেত্রে আমরা সাধারণ মানুষ পুলিশের এ মহতি উদ্যোগ, আন্তরিক সেবা প্রত্যাশা করি। আমরা আর আগের পুলিশ (বিতর্কিত পুলিশ) দেখতে চাই না, চিনতেও চাই না। আমরা পুলিশকে আজকের পুলিশের মতো করেই চিরটাকাল দেখতে চাই। তাদের সহযোগিতা চাই দেশ গঠনে, জাতি গঠনে ও জাতির বিশ্বস্ত নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে। আমরা চাই সত্যিকার অর্থেই পুলিশ হোক ‘জনগণের বন্ধু’। আসুন, আমরাও আজ তাদের বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দেই।

একই সাথে ধন্যবাদ জানাতে চাই মরণভাইরাস এই করোনা মহামারির সময়ে পুলিশের পাশাপাশি, সেনাবাহিনী ও র‌্যাব সদস্যরাও এগিয়ে এসেছেন। ক্লান্তিহীন ভাবে কাজ করছেন জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা। আর আর্তমানবতার সেবায় রয়েছেন চিকিৎসকরা। এগিয়ে এসেছেন ত্রাণ সামগ্রী নিয়ে সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, দলীয় সংগঠন, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনসহ সমাজের বিত্তবান ব্যক্তিরা।

আর সবক্ষেত্রে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে রেখেছেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি জাতির মানসকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা। আল্লাহ সবাইকে রক্ষা করুন, এই প্রার্থনা।

লেখক-সাংবাদিক, কবি ও কলামিষ্ট।

পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে