মানুষের সহ বছরে প্রায় ২৫ প্রাণীর রক্ত খায় নিরীহ এই প্রাণী!
পদ্মাটাইমস ডেস্ক : ভ্যাম্পায়ারের মুভি দেখেছেন নিশ্চয়ই! মানুষের রক্ত চুষে খায় এই ভ্যাম্পায়ার। গল্প বা সিনেমায় আমরা দেখেছি, ভ্যাম্পায়াররা জঙ্গলে কিংবা অন্ধকার কফিনে সারাদিন নির্জনে নিজেকে লুকিয়ে রাখে। যখন রাতের আঁধার নেমে আসে তখন সে শিকার ধরতে বের হয়। খুঁজতে থাকে একা পথ চলা কোনো মানুষকে। আর সুবিধামত পেলেই তার রক্ত চুষে খায় এবং শরীরের ছিবড়ে ফেলে রেখে যায়।
শুধু গল্প বা সিনেমাতেই যে ভ্যাম্পায়ার আছে তা কিন্তু নয়! বাস্তবে ভ্যাম্পায়ারের মতোই এক প্রাণী আছে। যারা সারাদিন অন্ধকার স্থানে ঘুমায় আর রাত হলে শিকার ধরে তার রক্ত চুষে খায়। তবে পার্থক্য শুধু এটাই যে, এই ভ্যাম্পায়ার দেখতে মানুষের মত নয়, বাদুড়ের মত।
এই প্রাণীটি ভ্যাম্পায়ার ব্যাট বা রক্তচোষা বাদুড় নামে পরিচিত। মূলত তিন প্রজাতির বাদুড়কে সাধারণভাবে ভ্যাম্পায়ার ব্যাট বলা হয়। এই নামকরণের কারণ হচ্ছে, এরাই একমাত্র স্তন্যপায়ী প্রাণী যারা খাদ্য হিসেবে শুধুমাত্র জীবিত প্রাণীর উষ্ণরক্ত পান করে। এই তিন প্রজাতির বাদুড়ের সঙ্গে অন্যান্য বাদুড়ের খুব কমই মিল পাওয়া যায়। ধারনা করা হয়, এই রক্তখেকো প্রাণীদের বিবর্তন একবারই হয়েছিল এবং তারা সবাই একটি সাধারণ পূর্ব পুরুষ থেকেই এসেছে।
একটি চায়ের কাপের সমান এই রক্তচোষা বাদুড় পাতা-নাক বাদুড় পরিবারের সদস্য। তাদের শুধুমাত্র উত্তর এবং দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলোয় পাওয়া যায়। এই বাদুড়ের নাক চ্যাপ্টা, তাতে ‘ইউ’ আকৃতির খাজ রয়েছে। নাকে একটি বিশেষ তাপ সংবেদী অঙ্গ রয়েছে যার মাধ্যমে শিকারের একদম চামড়ার কাছে কোথায় রক্তের স্রোত বইছে তা খুঁজে বের করতে পারে। এছাড়াও, তাদের মস্তিষ্কে একটি ইনফ্রারেড রিসেপ্টর পাওয়া গেছে, যা সাপের সংবেদী অঙ্গের মত একই জায়গায় থাকে এবং অন্ধকারে শিকারের অবস্থান বুঝতে পারে।
ভ্যাম্পায়ার ব্যাট সাধারণত ঘুমন্ত প্রাণীর রক্ত খেয়ে থাকে। তারা ধারালো দাঁত দিয়ে প্রথমে শিকারের চামড়ায় একটি ফুটো করে। সেই ফুটো থেকে রক্ত পরা শুরু করলে জিহবা দিয়ে চেটে চেটে খায়। রক্ত খাওয়ার সময় বাদুড়ের মুখ থেকে একধরনের লালা নিঃসৃত হয়, ফলে রক্ত জমাট না বেঁধে একটানা বের হতে থাকে। ভ্যাম্পায়ার ব্যাট প্রায় তিরিশ মিনিট পর্যন্ত একটানা রক্ত খেতে পারে কিন্তু শিকার একদমই টের পায় না।
বাদুড় যে পরিমাণ রক্ত খায় তাতে শিকারের কোন ক্ষতি না হলেও বাদুড়ের কামড় থেকে ইনফেকশন বা অন্যান্য রোগ হতে পারে। ১০০টি বাদুড়ের একটি কলোনি বছরে প্রায় ২৫টি গরুর রক্তের সমান রক্ত খেয়ে থাকে। তারা সাধারণত গরু, ছাগল, ঘোড়া, শুকর ইত্যাদি প্রাণীর রক্ত খায়। তবে সুযোগ পেলে মানুষের রক্তও খায়। শিশু বাদুড় রক্ত নয়, মায়ের দুধ খেয়ে বেড়ে ওঠে।
রক্তে জন্ম নেয়া এক ধরনের ভাইরাস, “এন্ডোজেনাস রেট্রোভাইরাসের” বিরুদ্ধে তাদের শরীরে বেশ শক্ত প্রতিরোধ ব্যবস্থা রয়েছে। এই ভাইরাস তাদের জেনেটিক ম্যাটেরিয়ালের কপি হোস্টের জিনোমে ঢুকিয়ে দেয়। ভ্যাম্পায়ার বাদুড় তাদের শরীরের উপর এই ভাইরাসকে প্রভাব ফেলতে দেয় না।
একমাত্র উড়ন্ত স্তন্যপায়ী প্রাণী হওয়াতে অন্যান্য বাদুড় প্রজাতি যেখানে মাটিতে হাঁটা একদম ভুলেই গেছে সেখানে ভ্যাম্পায়ার বাদুড় খুব ভালোভাবে মাটিতে হাঁটতে, লাফাতে এমনকি দৌড়াতেও পারে। এজন্য তারা পিছনের পায়ের চেয়ে বেশি সামনের ডানার উপরে নির্ভরশীল। মূলত এই ডানাই তাদের হাঁটার এবং উড়ার শক্তি জোগায়।
আইইউসিএন (IUCN) রেডলিস্ট অনুযায়ী রক্তখেকো বাদুড় শংকামুক্ত প্রাণী। তবে তাদের রক্ত খাওয়ার স্বভাবের কারণে অনেক জায়গায় অনেক কুসংস্কার প্রচলিত আছে। আসলে ভ্যাম্পায়ার বাদুড় অন্যান্য বাদুড়ের মতই নিরীহ একটি প্রাণী। শুধুমাত্র খাদ্যের প্রয়োজন ছাড়া অন্য কোনো কারণে তারা কারো ক্ষতি করে না।