বাসের বাড়তি ভাড়া: স্বার্থ ক্ষুন্ন আমজনতার
সরকার দুলাল মাহবুব: বাসের বাড়তি ভাড়া নিয়ে কয়েকদিন ধরে সাধারণ মানুষের মুখে মুখে ফুটছে কিছু কথা। দুঃশ্চিন্তা তাদের মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। অবশ্য দুঃশ্চিন্তার যথেষ্ট কারণও রয়েছে। কারণ তারা জানে, বাস হচ্ছে আমজনতার পরিবহন। জনতার নেতাদের তাতে কিছু যায়-আসে না। তাদের বাহন এয়ার-টাইট গাড়ি, তাও চলে সমুদ্রের পানিতে। কিন্তু জনতার পকেট তো আর সমুদ্রতলগভীর নয়। তাদের জীবনের বারোমাসী বড় করুণ। কাজেই তাদের কপালে পড়া চিন্তার ভাঁজ বার্ধক্যের স্থায়িত্ব পায়।
যা হোক, জনতার পরিবহনের ভাড়া বাড়তি করা প্রসঙ্গে কিছু কথা বলতে বসা। জীবনভর সঞ্চিত যে অভিজ্ঞতা, তা থেকে আমজনতা বিশ্বাস করে পরিবহনের ভাড়া বাড়ানো হলে তা আর কমানো যায় না। কারণ ওই যন্ত্রদানব ও তার সংশ্লিষ্ট বাহিনীদের ভালো চেনেন, ভালো জানেন তারা। যারা ওই যন্ত্রদানবের বুকে-পেটে-পিঠে পন্যের বস্তার মত মানুষ ঠেলে তারা কিনা সুযোগ ছাড়বে যা অবিশ্বস্য। সরকার তেলের দাম কমালেও আমজনতা দেখেছে ভাড়া কমে নাই। এই ১৪ দলীয় সরকার ২০১৬ সালের ২৪ এপ্রিল জ্বালানী তেলের দাম কমিয়েছিল। তবে সুফল আমজনতা পায়নি। তখন প্রতি লিটার পেট্রোল ও অকটেনে ১০ টাকা এবং ডিজেল ও কেরোসিনে ৩ টাকা কমিয়েছিল। কিন্তু পরিবহনের ভাড়া একটি টাকাও কমেনি। রাস্তায় হর-হামেশায় মানুষ মারলেও যাদের আজও বিচারের মুখোমুখি দাঁড় করানো যায়নি। মৃত্যুর পরোয়ানা থেকে ঘাতকদের মুক্ত করে আনতে প্রয়োজনে তারা সহিংস ধর্মঘট-অবরোধ ডেকে জনজীবন দুর্বিসহ করে দেবে। এই আমজনতার কথা ভেবেই হয়তো স্বয়ং সরকারও ভয়ে তটস্থ, ওদের কাছে জিম্মি। ভয়ঙ্কর সেই সংশ্লিষ্ট দানবদের হাত থেকে আমজনতার মুক্তির প্রত্যাশা বাতুলতা ছাড়া আর কিছুই নয়।
আমাদের মাতৃভূমি বাংলাদেশ। এক সাগর রক্তের বিনিময়ে লাল-সবুজের পতাকা সম্বলিত এই দেশের স্বাধীনতা মিলেছে। কিন্তু স্বাধীনতার প্রায় ৫০ বছর পরও সমস্যার অন্ত নেই। প্রতিনিয়ত বিভিন্ন ধরনের সমস্যা ও সঙ্কটের মোকাবেলা করতে হয় এদেশের প্রায় প্রতিটি মানুষকে। অগণিত সমস্যার কোনোটি বেশ প্রকট, যা সামাল দিতে সবাইকে কম-বেশি হিমশিম খেতে হয়। প্রাত্যহিক জীবনে বিচিত্র সমস্যার খানিকটা দুর্বিসহ, আবার খানিকটা সয়ে নিতে হয় জীবনের সাথে। সমস্যাগুলো তখন আপনা থেকেই বৈধতা পেয়ে যায়।
এদেশের বেশীরভাগ জনগণ এখনো পাবলিক পরিবহনেই যাতায়াত করেন। এছাড়া সরকারি কর্মকর্তা, রিয়েলস্টেট ব্যবসায়ী, বেসরকারি মিল-কলকারখানার মালিক ও কর্মকর্তাগণ, বড়বড় ঋণগ্রস্তগণ, কিছু এনজিও কর্মকর্তাগণ, ডাক্তারসহ কিছু মানুষ যাতায়াতে নিজেদের গাড়ী ব্যবহার করে থাকেন। বাকিসব আমজনতা। যারা আজীবন পাবলিক পরিবহনেই যাতায়াত করেন।
এদেশের মানুষকে প্রতিদিন যে সমস্যার মুখোমুখি হতে হয় তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে গণপরিবহন। এর কারণে পাবলিক যানবাহন নিয়ে সব শ্রেণি পেশার মানুষকে নিত্যদিন দুর্ভোগের বিচিত্র রূপ দেখতে হয়। বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। একটি দেশ কতটা আধুনিক ও গতিশীল তার অন্যতম সনদ হচ্ছে পরিবহণ ব্যবস্থা। বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি জেলায় পরিবহন ব্যবস্থার চিত্র বেশ ভঙ্কুর ও সংগঠন নির্ভর। রাজশাহীতে আরো ভঙ্কুর। জেলা পরিবহণ মালিক সমিতির ভোটকে কেন্দ্র করে এখনো চলছে কাদা ছুঁড়াছুড়ি। গণপরিবহণ ব্যবস্থা নিয়ে সাধারণ মানুষের অভিযোগের অন্ত নেই। গত ২ জুন সিলেটে কল্যাণ তহবিলের টাকা নিয়ে বাসশ্রমিকদের দুপক্ষের মধ্যে ঘণ্টাব্যাপী সংঘর্ষে পুলিশসহ ২০ জন আহত হয়েছেন।
জানা গেছে, শ্রমিকদের কল্যাণ তহবিলের প্রায় দুই কোটি টাকা সেলিম আহমদ ফলিক আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগ ওঠে। এ টাকার কোনো হিসাবও তিনি দিতে পারছিলেন না। যে সংগঠনে নিজেদের কাছে নিজেদের টাকার হিসাব চাইতে গিয়েও সংঘর্ষ হয়, সে সংগঠনের কাছে দেশের স্বার্থ ও জনগণের স্বার্থের দিকটা দেখবে আশা করাটাই দূরাশা। ঠিক এমপি মমতাজের গানের মতই। এমপি মমতাজ গেয়েছেন ‘আদর কইরা ঘরে তুইলা ঘাড় ধইরা নামাস’। আগে থেকেই কাজির গরু যেমন শুধু খাতাতেই থাকে, তেমনি বোধহয়, করোনা সংকটের আগে থেকেই বেহাল অবস্থা আমাদের নাগরিক পরিবহণ সেবা ব্যবস্থার। নাগরিক সুযোগ সুবিধা কাঠামোর সব ফিরিস্তি আছে, শুধু নেই সেবা। এটা নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা।
কখনো কখনো এ সেবার এতটাই অধঃপতন হয় যে, ‘নৈরাজ্য’ বললেও অনেকটা কমই শোনাবে। অথচ যোগাযোগ মন্ত্রণালয়, ট্রাফিক পুলিশ থেকে শুরু করে কত না কাঠামো, কোটি কোটি টাকার দেশি-বিদেশি প্রকল্প, কত পরিকল্পনাই না আমাদের হয়ে থাকে। অতিরিক্ত হারে ভাড়া আদায় নিয়ে যাত্রীদের সঙ্গে বাস কর্মচারিদের বচসা বিবাদ, ঝগড়াঝাটি, তর্ক বিতর্ক নিত্যনৈমিত্তিক ও মামুলি ব্যাপার। বাসের ড্রাইভার, কন্ট্রাক্টর, হেলপারদের দূর্ব্যবহারে অনেক সাধারণ যাত্রী নীরবে এ অযৌক্তিক ও অতিরিক্ত ভাড়া দিতে বাধ্য হয়। (বিশেষ করে বাসের শুরু থেকে শেষ স্টপেজের মধ্যবর্তী স্টপেজে)।
বর্তমান বিশ্বে যে দেশ গণপরিবহণ ব্যবস্থা যত ভালো ও সুশৃঙ্খল, সে দেশ তত বেশি নাগরিকবান্ধব, বাসযোগ্য। অথচ আমাদের দেশে যাত্রীদের অসহায়ত্বকে পুঁজি করে পরিবহন ব্যবসায়ী, চালক, কন্ট্রাক্টরদের অযৌক্তিক অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের তুঘলকি কান্ড হরহামেশায় ঘটে থাকে। এ নিয়ে যাত্রীদের পক্ষ থেকে প্রতিবাদ জানানো হলে কিংবা প্রতিকার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলে পরিবহণ মালিক ও শ্রমিকরা যখন তখন ধর্মঘট ডেকে তাদের গাড়ি চলাচল বন্ধ করে দেয়।
অবশেষে তাদের অন্যায় দাবির কাছে হার মানতে হয় সাধারণ মানুষকে। তাদের কাছে জিম্মি হয়ে থাকছে দেশের গোটা গণপরিবহণ ব্যবস্থা। দেশের গণপরিবহণে চলছে মালিক ও পরিবহন শ্রমিকদের একচ্ছত্র স্বেচ্ছাচারিতা। আর তাই ইচ্ছেমাফিক ভাড়া বাড়ানো, যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং। তবে এবারে করোনা সংকট মোকাবেলায় তাদের দায়িত্বশীলতা ছিল কল্যাণকর। জনবান্ধব। তারা ৬৬দিন যাত্রীবাহি বাস বন্ধ রেখেছিল। বিষয়টি ত্যাগের মধ্যে পড়ে। তবে তাদের এ ত্যাগেও ভেস্তে যাচ্ছে বাসের বেশী ভাড়া আদায়ে। এক্ষেত্রে তাদের শতভাগ দোষ চাপাতে চাইনে। নীতি নির্ধারকগণও তাদেরকে বুঝাতে ব্যর্থ হয়েছেন বলে আমার মনে হয়েছে।
শেষ অবধি সরকার যাত্রীবাহি বাসের লকডাউন তুলে নিলে গত ১ জুন থেকে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে সড়ক পরিবহন চালু হয়েছে। তবে চলছে ৬০ শতাংশ বেশী ভাড়াতে। ঘটনাক্রমে পাশের দেশ ভারতের পশ্চিমবঙ্গে একই দিন পরিবহন চালু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বাস চালু হলেও পশ্চিমবঙ্গে আগের ভাড়া বহাল থেকেছে। এখানেই পার্থক্যটা বড়ো। বাংলাদেশে ভাড়া বাড়ানোর কারণ হিসাবে বলা হচ্ছে, বাসের ৫০ শতাংশ আসন খালি থাকবে। এই জন্য ভাড়া বাড়বে। না হলে অনেক লোকসান হবে। এই যুক্তি দেয়া হয়েছে।
একই যুক্তি কিন্তু তোলা হয়েছিল কোলকাতায়। আগের ভাড়া থাকবে। কিন্তু বাসে ২০ জনের বেশি যাত্রী তোলা যাবে না। এই নিয়ম করা হলে বেসরকারি পরিবহন মালিকরা লোকসান এড়াতে তাদের গাড়ি রাস্তায় নামাননি। কেবল সরকারি গাড়িগুলো চলাচল করছিলো। এতে সরকারি পরিবহনে লোকসান বেড়ে যাচ্ছিলো।
এই পরিস্থিতিতে মমতা ব্যানার্জি সবার সাথে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত দেন, একটি বাসে যতো আসন সে অনুযায়ী যাত্রী তুলতে হবে। আসন খালি রাখার দরকার নেই। স্বাস্থ্য বিধি মতো যাত্রীরা পেপার হাতে বাসে উঠে তার উপর বসবে। নামার সময় ডাস্টবিনে পেপার ফেলে দেবে। কেউ বাসে দাঁড়িয়ে যেতে পারবে না। আর আগের ভাড়াই বহাল থাকবে। এই সিদ্ধান্ত সবাই মেনে ৪ জুন, ২০২০ থেকে পরিবহন চালু করেছে।
আর আমাদের যেটা হলো, তা অনেকটাই চাতুরতা। ১ জুন সোমবার থেকে এখানে শত শত বাস চলতে শুরু করেছে। আর অর্ধেক আসন খালি থাকছে, যা ভাবা আমাদের জন্য বেশ কষ্টসাধ্য। অনেকে বলছেন এটা পাগলও বিশ্বাস করেনি এবং করবেও না। আর এই বিধান কার্যকর করবে কে? ফলে, বাস ভর্তি হয়েই যাত্রীরা আসা যাওয়া করবে এবং লোকান বাসে তাই হচ্ছে। একই সাথে তাদের কাছ থেকে ৬০ শতাংশ বেশি ভাড়া আদায় করা হবে। মোট কথা, সুকৌশলে ডাবল ভাড়াই কার্যকর করা হলো। বাস্তবতা হচ্ছে, এই বর্ধিত ভাড়া আর কখনো কমবে না।
অনেকে বলছেন ভাড়া না বাড়িয়ে যদি এক ব্যক্তিকে ডবল সিট নিতে হতো তাহলে অনেকটা ভাল হতো। কারণ হিসেবে তারা বলেছেন, ডবল সিটের ভাড়া দিলে যাত্রীরা পাশে অন্য যাত্রীকে বসতে দিতেন না। এতে সামাজিক দুরত্ব অনেকটা বজায় থাকতো। পাশাপাশি খুব প্রয়োজন ছাড়া জনগণ এদিক ওদিক যেতেন না। করোনা সংকট দুর হলে একটি টিকিট কেটেই যাত্রী যেত। তাহলে ভাড়া বাড়ানো লাগতো না। দেখুন, থার্মার দিয়ে পরীক্ষা করে স্বাস্থ্য বিধি মেনে সিট বরাদ্দে চলাচল করলে তো অসুবিধা হওয়ার কথা না।
আর আমাদের এখানে আম জনতার কথা বিবেচনা করা হলো না। বিবেচনা করা হলো, পরিবহন মালিকদের লোকসান। এখন তারা লোকসান দূরে থাক, মানুষের গলা কেটে আরো মুনাফা করতে থাকবে। গণমাধ্যমে খবর হতে থাকবে ৫০ ভাগ আসন খালি রাখার সিদ্ধান্ত কাগজে কলমে। আর যাত্রীদের প্রায় ডাবল ভাড়া গুনতে হচ্ছে। আবার অনেকে সেবা নয়, দুই মাসের লোকসান পুষিয়ে নেয়ার জন্যই বাসভাড়া বাড়িয়ে নিয়েছে বলে দাবি করেছে।
জানা গেছে, বাসভাড়া বাড়ানোর আগে করোনাভাইরাস সংকটের মধ্যে গণপরিবহনে যাত্রী সংখ্যা কমিয়ে ভাড়া বাড়ানোর প্রস্তাবকে ‘অগ্রহণযোগ্য’ আখ্যায়িত করে তা পুনর্বিবেচনার দাবি এসেছিল বিভিন্ন সংগঠন, দল ও নাগরিকদের পক্ষ থেকে। ভোক্তা অধিকার রক্ষায় নাগরিক সংগঠন কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) ভাড়া বাড়ানোর বদলে জ্বালানি তেলের দাম কমিয়ে বাস ভাড়া আগের চেয়ে কমানোর প্রস্তাব করেছে। একই ধরনের বক্তব্য এসেছিল যাত্রীদের অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠন যাত্রী কল্যাণ সমিতির পক্ষ থেকে।
বাসদের সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান বলেছিলেন, ‘করোনা সংকটে জনগণ এমনিতেই বিপর্যস্ত। সরকার বিশেষজ্ঞ মতামত না নিয়েই সব কিছু খুলে দিয়ে নিজের দায়িত্ব এড়াতে চাইছে এবং জনগণকে মৃত্যুমুখে ঠেলে দিয়েছে। উপরন্তু মরার উপর খাড়ার ঘা হিসেবে গণপরিবহনের ভাড়া ৮০ শতাংশ বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। “যা সম্পূর্ণ অন্যায়, অযৌক্তিক ও জনগণের সাথে এক নির্মম তামাশা ছাড়া কিছুই না।” ঢাকা মহানগরীতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে কীভাবে গণপরিবহন চালাবে তা কোনোভাবেই বোধগম্য নয় বলে মন্তব্য করেন খালেকুজ্জামান। (তখন অবশ্যই সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ৮০ শতাংশের কথা বলেছিলেন, বর্তমানে তা ৬০ শতাংশ করা হয়েছে)।
বাস মালিক শ্রমিক সংগঠন যে নিজেদের, জনগণের নয় তার প্রমাণ মিলেছে এই কয়েকে দিনেই। রাজশাহী থেকে শুরু হয়েছে বাস ও ট্রেন চলাচল। দূরপাল্লার প্রতিটি বাসে স্বাস্থ্যবিধি অনেকটা মানা হলেও আন্তঃজেলা রুটের বাসগুলোতে স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না। আন্তঃজেলা রুটে গাদাগাদি করে বাস নিয়ে চলাচল করতে দেখা গেছে। কিন্তু গুণতে হচ্ছে ৬০ শতাংশ বেশী ভাড়া। আবার বাসের ভিতরে স্বাস্থ্য বিধি নয়, চলছে প্রতারণা বিধি।
ঢাকাগামী বাস টার্মিনাল শিরোইল বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখা যায়, মোট আসন সংখ্যার অর্ধেক যাত্রী নিয়ে চলাচল করছে বাস ও ট্রেন। তবে রাস্তায় ট্রেনে না হলেও অনেক বাসে নাকি যাত্রী তুলছেন। যাত্রা শুরুর পূর্বে প্রতিটি বাসেই করা হচ্ছে জীবাণুনাশক স্প্রে। এছাড়া কাউন্টারেও করা হচ্ছে জীবাণুনাশক স্প্রে। বাস ও কাউন্টারে প্রবেশের পূর্বে করা হচ্ছে তাপমাত্রার পরীক্ষাও। তবে কাউন্টারে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে দেখা যায়নি। ভাড়া বৃদ্ধি পাওয়া নিয়েও ক্ষোভ রয়েছে যাত্রীদের মধ্যে।
তবে আন্তঃজেলা রুটে কোনো স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাচল করতে দেখা যায়নি। বাসে গাদাগাদি করে যাত্রী তুলতে দেখা গেছে। ফলে আন্তঃজেলা রুটে ঝুঁকি নিয়েই চলাচল করছে বাস। নগরীর শিরোইল বাস টার্মিনাল থেকে ঢাকাগামী বাস এবং ভদ্রা মোড় ও রেলগেট মোড় থেকে আন্তঃজেলা বাস চলাচল করছে।
ঢাকাগামী শিরোইল বাস টার্মিনালে স্বাস্থ্যবিধি অনেকটা মেনে চলাচল করতে দেখা গেলেও আন্তঃজেলা রুটে কোনো স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাচল করতে দেখা যায়নি। ভদ্রা মোড়ে আন্তঃজেলা রুটে গিয়ে দেখা যায়, প্রতিটি বাসেই গাদাগাদি করে যাত্রী তোলা হচ্ছে। কোনো স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না। তবে যাত্রীরা বাসে ফাঁকা ফাঁকা থাকুন আর গাদাগাদী থাকুন ৬০ শতাংশ বাড়তি ভাড়া গুণতে হচ্ছে আমজনতাকেই। ভাড়া বৃদ্ধির এই সুযোগে স্থানীয় অটোরিকশাগুলোতেও বেশী ভাড়া নিচ্ছে।
তারা অনেকে চিৎকার দিয়ে বলছেন, বাসের ভাড়া বৃদ্ধি কার স্বার্থে জনগণের নাকি কোন মহলের। অনিচ্ছা সত্বেও যেখানে মসজিদে পা’য়ে পা ঠেকিয়ে নামাজ পড়তে হচ্ছে। ইমাম সাহেব ফরজ নামাজের আগে বলছেন, মোবাইল বন্ধ করুন, পা’য়ে পা ঠেকিয়ে সোজা লাইনে দাঁড়ান। এছাড়াও হাটে বাজারে মানা হচ্ছে না স্বাস্থ্যবিধি। লোকাল বাসে যাত্রী উঠছেন গাদাগাদি। ছোট থ্রি-হুইলার, জিএনজি, টেক্সি সবই পূর্ণ যাত্রী নিয়ে স্টেশন ছাড়ছে। কিন্তু ভাড়া বৃদ্ধিতে গাঁটকাটা যাচ্ছে আমজনতার। তবে নীতিনির্ধারকগণ হয়তো জনগণের ভালই করতে চেয়েছিলেন কিন্তু বাস্তব ক্ষেত্রে হয়েছে উল্টো।
এখনো অনেককে মাস্ক ব্যবহারই করাতে পারেনি। এখন পর্যন্ত ত্রাণ দিতে হচ্ছে। ত্রাণ নিচ্ছে গাদাগাদি করে। দিচ্ছেন গাদাগাদি করে। যাত্রীও থাকছে গাদাগাদি। এরপরেও অতিরিক্ত ভাড়া যেন ‘গোদের ওপর বিষফোড়া’। করোনা ভাইরাস সংকট উবে গেলে এই অতিরিক্তি ভাড়া কমানোর জন্য রাস্তায় দাঁড়াতে হতে পারে আম জনতাকেই। এমনকি প্রশাসন প্যাদানি-কেদানি দিলেও ভাড়া কমানোর জন্য এর বিকল্প থাকবে না। প্রত্যাশা করি এমন যেন না হয়। আগেই আবেদনে রাখি ও উদাত্ত আহবান জানাই, উদার মানসিকতা নিয়ে বাস সংশ্লিষ্টরা ও নীতিধারকরা ভাড়া কমান। বাঁচান আম-জনতাকে।
লেখক-সাংবাদিক, কবি ও কলামিষ্ট