১১ মিলিয়ন ইট দিয়ে তৈরি বিশ্বের বৃহত্তম এক সেতু
পদ্মাটাইমস ডেস্ক : বর্তমানে ইস্পাত এবং কংক্রিট দিয়ে সেতু নির্মাণ করা হয়। তবে অতীতে ইট ও পাথর ব্যবহার করে স্থপতিরা সেতু নির্মাণ করতেন। প্রাচীনকালের নির্মাণ উপকরণগুলো স্টিলের কিছু গুণাগুণের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। আর পাথরের তৈরি প্রাচীন সেতুগুলো কার্যত অক্ষয় প্রকৃতির।
এশিয়া এবং ইউরোপ জুড়ে হাজারো পাথর এবং ইটের স্থাপন রয়েছে। যেগুলো কয়েক শত থেকে হাজার বছরের পুরাতন। প্রাচীন এই স্থাপনাগুলো আধুনিক ইস্পাত নির্মিত স্থাপনার থেকেও বেশি দীর্ঘ স্থায়ী ছিল।
১৯ শতকের মাঝামাঝি সময়ে পাথর এবং ইটের পরিবর্তে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে লোহা এবং ইস্পাত ব্যবহার শুরু হয়। এই ধাতবগুলো নমনীয় হওয়ায় স্থপতিরা ইচ্ছা মতো আকার প্রদান করতে পারেন। এছাড়াও ধাতবগুলো আগুন প্রতিরোধী। ইস্পাতের তৈরি সেতুগুলো দীর্ঘ এবং টেকসই করে নির্মাণ সম্ভব।
এটি তুলনামূলকভাবে কম ব্যয়বহুল। এতে দীর্ঘ স্পান বসানো যায়। ইট কিংবা পাথরের তৈরি খিলানযুক্ত সেতুগুলোরও বিশেষ দিক আছে। এই সেতুগুলো লোহা কিংবা ইস্পাত নির্মিত সেতুর থেকে বেশি ওজন সমর্থন করতে পারে। প্রকৃতপক্ষে একটি খিলানযুক্ত সেতুতে যত বেশি ওজন রাখা হয় এর কাঠামো তত শক্ত হয়।
তবে লোহার সেতু নির্মিত হওয়ার পর থেকে প্রাণঘাতী দুর্ঘটনার সংখ্যাও বাড়তে থাকে। বিশেষ করে রেলওয়েতে এই দুর্ঘটনাগুলো বেশি ঘটতে শুরু করে। ফলে রেলওয়ে প্রকৌশলীরা ইটের সেতু নির্মাণ কাজ শুরু করে। ২০ শতকেও এটি অব্যাহত থাকে। ইংল্যান্ডের ওস ভ্যালি ভায়াডাক্ট ভিক্টোরিয়ান যুগের অন্যতম সেরা রেল সেতু। ১৮৪২ সালে এর নির্মাণ কাজ শেষ হয়।
লন্ডন থেকে ব্রাইটন পর্যন্ত নির্মিত রেলওয়ের মধ্যে ওস ভ্যালি ভায়াডাক্ট এর অবস্থান। মূলত সাসেক্সের হ্যাওয়ার্ড হিথ এবং বালকম্ব শহরের মধ্যে ওস নদী অবস্থিত। এই নদীর উপরেই ওস ভ্যালি ভায়াডাক্ট নির্মিত হয়েছে। ৫০০ মিটার দীর্ঘ এই সেতুটি ঐতিহ্যবাহী লাল ইট এবং হালকা রঙের মসৃণ চুনাপাথরের তৈরি। সেতুটির নির্মাণ কৌশল বেশ দৃষ্টিনন্দন।
পএই সেতুর খিলানগুলো একই সরল রেখায় অবস্থিত। এর মধ্যকার শূন্য স্থানের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত সরল রেখার মতো দেখায়। যা এক অপূর্ব দৃশ্যের সৃষ্টি করে। ওস ভ্যালি ভায়াডাক্ট নির্মাণ একটি বিশাল প্রকল্প ছিল। প্রায় ১১ মিলিয়ন ইটের প্রয়োজন হয়েছিল এই নির্মাণ প্রকল্পে। বেশিরভাগ ইট নেদারল্যান্ড থেকে জাহাজে করে ইংলিশ চ্যানেল পার করা আনা হয়। কিছু ইট স্থানীয়ভাবে উৎপাদন করা হয়।
সেতুটির প্যারাপেট, স্ট্রিং কোর্স এবং পাইয়ার ক্যাপের জন্য ব্যবহৃত কেইন স্টোনগুলো ফ্রান্সের নরম্যান্ডি থেকে আনা হয়। ওস ভ্যালি ভায়াডাক্ট সেতুটির নির্মাণ কাজে ১১ মিলিয়ন ইট ব্যবহৃত হলেও এটি বিশ্বের বৃহত্তম ইটের নির্মিত সেতু নয়। ইটের নির্মিত বিশ্বের বৃহত্তম জার্মানিতে অবস্থিত। জার্মানির রাইচেনবাচ ইম ভোগল্যান্ড শহরের প্রায় চার কিলোমিটার পশ্চিমে গোল্টজচ ভায়াডাক্ট অবস্থিত। এটিই বিশ্বের সর্ববৃহৎ রেল সেতু।
গোল্টজচ নদীর উপর ১৮৫১ সালে সেতুটি নির্মিত হয়েছিল। চার স্তর বিশিষ্ট সেতুটির উচ্চতা ২৫০ ফুটেরও বেশি। একসময় সবচেয়ে উঁচু রেল সেতু ছিল। বিশ্বের বৃহত্তম ইটের তৈরি এই সেতুটির স্থপতি ছিলেন জোহান আন্দ্রেস শুবার্ট। তিনি সেতু নির্মাণের স্থানের প্রাসঙ্গিক বিষয়গুলো বিবেচনা করে গ্রানাইটের পরিবর্তে ইট ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।
সেতুটির নির্মাণ কাজে ২৬ মিলিয়নেরও বেশি ইটের ব্যবহার করা হয়েছিল। ২০টি ইট ভাটায় এই ইট উৎপাদন করা হয়েছিল। এর দৈর্ঘ্য ৫৭৪ মিটার। বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম ইটের তৈরি সেতুও জার্মানিতে অবস্থিত। এর নাম এস্টার ভায়াডাক্ট। এটির নির্মাণ কাজে ১২ মিলিয়নেরও বেশি ইটের প্রয়োজন হয়েছিল।