‘স্নো হোয়াইট’ রূপকথার গল্প নয়, ছিল বাস্তবেও!
পদ্মাটাইমস ডেস্ক : রূপকথা কিংবা ঠাকুমার ঝুলির গল্প শোনেননি এমন মানুষ বোধহয় কমই আছেন। ছোটবেলায় নানি বা দাদির কাছে শুনেছেন এসব গল্প। এর মধ্যে স্নো হোয়াইট আর সাত বামনের সেই গল্প নিশ্চয় মনে আছে!
রাজকন্যা স্নো হোয়াইট ছিলেন অপূর্ব সুন্দরী। সৎ মায়ের হিংসার কারণে তাকে থাকতে হয় জঙ্গলে। সেখানেই তার দেখা হয় সাত বামনের সঙ্গে। সাত বামন আর অপূর্ব সুন্দরী স্নো হোয়াইটকে নিয়েই পুরো কাহিনী। জানেন কি? স্নো হোয়াইটের এই গল্প কোনো রূপকথা নয়। বাস্তবেই ঘটেছে এমন ঘটনা। এমনটাই দাবি করেন একজন জার্মান ঐতিহাসিক একার্ডহ্যান্ড স্যান্ডার।
১৯৯৪ সালে তিনি এই গল্পের সত্যতা খুঁজে পান। স্নো হোয়াইট সত্যিই ছিলেন অসাধারণ সুন্দরী এক তরুণী। অন্যদিকে স্নো হোয়াইটের সৎ মা সুন্দরী হলেও তিনি ছিলেন কালো জাদুতে পারদর্শী। তার ছিল একটি জাদু আয়না। যেটার সঙ্গে তিনি সবসময় কথা বলতেন।
একবার তিনি জাদু আয়নাকে জিজ্ঞাসা করেন পৃথিবীতে সবচেয়ে সুন্দরী কে? জাদু আয়না রানিকে জানান সেই সবচেয়ে বেশি সুন্দরী। রানি এতে খুব খুশি হন। এর কিছু বছর পর রানি আবারো একই প্রশ্ন করেন জাদু আয়নার কাছে। আয়না জানায়, পৃথিবীতে সবচেয়ে সুন্দরী স্নো হোয়াইট।
একথা শুনে রানি খুবই রেগে যান। এরপরই তিনি সিদ্ধান্ত নেন স্নো হোয়াইটকে মেরে ফেলবেন। যেই ভাবা সেই কাজ। রানি এক শিকারিকে নির্দেশ দিলেন স্নো হোয়াইটকে জঙ্গলে নিয়ে মেরে ফলতে। শিকারির স্নো হোয়াইটের উপর খুব মায়া হলে সে তাকে জঙ্গলে ছেড়ে দিয়ে আসে। রানি খুব খুশি হলেন এটা ভেবে যে, স্নো হোয়াইট মারা গেছে।
এদিকে স্নো হোয়াইট জঙ্গলে ঘুরতে ঘুরতে ক্ষুধার্ত আর ক্লান্ত হয়ে পড়ে। একটি কুঁড়ে ঘর দেখতে পায় স্নো হোয়াইট। সেখানে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে সে। সেটা ছিল সাত বামনের কুঁড়ে ঘর। রাতে তারা ফিরে এসে স্নো হোয়াইটকে দেখতে পায়। তার কাছ থেকে সব কথা শুনে তাকে থাকতে দেয় তাদের কাছে। তবে শর্ত দেয় তাকে তাদের ঘরের সব কাজ করতে হবে এবং রান্না করতে হবে। স্নো হোয়াইট রাজি হয়ে যায়।
রানি তার জাদু আয়নাকে আবার একই প্রশ্ন করে। সে আবারো স্নো হোয়াইটের কথাই বলে। রানি তখন স্নো হোয়াইটকে মারতে জঙ্গলে যায় ছদ্মবেশে। তাকে একটি বিষাক্ত আপেল খেতে দেয়। আপেল খেয়ে অজ্ঞান হয়ে যায় স্নো হোয়াইট। সাত বামন ফিরে এসে স্নো হোয়াইটকে মাটিতে পড়ে থাকতে দেখে ভেবে নেয় সে মারা গেছে। তাই একটি কাঁচের কফিনে স্নো হোয়াইটকে ভরে তাদের বাগানে ফুলের গাছের পাশে রেখে দেয়।
এর কয়েকদিন পর সেখান দিয়ে যাচ্ছিলেন এক রাজকুমার। সে স্নো হোয়াইটকে দেখে তার সৌন্দর্যে মুদ্ধ হয়ে যায়। প্রেমে পড়ে যায় স্নো হোয়াইটের। তাকে সঙ্গে নিয়ে যাওয়ার জন্য অনুমতি চায় সাত বামনের কাছে। তারা রাজকুমারের সঙ্গে স্নো হোয়াইটকে দিয়ে দেয়। এখানেই ঘটে যায় অলৌকিক ঘটনা।
গাছের শিকরের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে স্নো হোয়াইটের কফিন পড়ে যায় মাটিতে। জ্ঞান ফিরে আসে তার। রাজকুমার তাকে ভালোবাসার কথা জানায়। তাকে বিয়ে করার কথা বলে। স্নো হোয়াইট রাজি হয়ে তার সঙ্গে তার রাজ্যে ফিরে যায়। সেখানেই সুখে শান্তিতে বসবাস করতে থাকা তারা।
তবে আসল ঘটনা ছিল কিছুটা আলাদা। সান্ডারের মতে, স্নো হোয়াইটের চরিত্রটি মার্গারেট ফন ওয়াল্ডেকের জীবনের উপর ভিত্তি করে তৈরি হয়েছিল। যিনি ১৫৩৩ সালে ফিলিপ চতুর্থের ঘরে জন্মগ্রহণ করেন। মার্গারেট এক রাজপুত্রের প্রেমে পড়েন। যিনি পরবর্তীতে স্পেনের দ্বিতীয় ফিলিপ হবেন। তবে মার্গারেটের বাবা এবং সৎ মা এই সম্পর্ক একেবারেই মেনে নেননি।
মার্গারেটের বাবার রাজনৈতিকভাবে অসুবিধা হওয়ায় তিনি এই সম্পর্কে বাধ সাধেন। তবে কথিত আছে, ষড়যন্ত্রের মূলে ছিলেন মার্গারেটের সৎ মা। হঠাৎ করে মার্গারেট রহস্যজনকভাবে মারা যায়। সে সময় তার বয়স ছিল মাত্র ২১ বছর। স্পেনের ইতিহাস থেকে জানা যায়, মার্গারেটের বাবা এবং সৎ মা মিলেই মার্গারেটকে বিষ দিয়ে হত্যা করেন।
নিশ্চয় ভাবছেন এখানে সাত বামনের সম্পর্ক কি? মার্গারেটের বাবার বেশ কয়েকটি তামার খনি ছিল। যেখানে বামন শ্রেণির অনেক দাস নিয়োজিত ছিল। দুর্বল থাকার কারণে অল্প বয়সেই অনেকের মৃত্যু ঘটে। তবে যারা বেঁচে ছিলেন তারা পুষ্টিহীনতা এবং কঠোর শারীরিক পরিশ্রম থেকে মারাত্মক অসুস্থ হয়ে পড়ে।
সেখান থেকেই এই গল্পের সঙ্গে বামনদের যুক্ত করা হয়েছে বলে মনে করেন সান্ডার। আর বিষ আপেলের বিষয়ে সান্ডারের বিশ্বাস, মার্গারেটকে হত্যা করতে বিষাক্ত আপেল খাওয়ানো হয়েছিল। যেখান থেকে স্নো হোয়াইট গল্পে যুক্ত করা হয় বিষযুক্ত আপেল।
সূত্র: অ্যাসাইন্টঅরিজিন