বিকাশ অ্যাপ ব্যবহারে যা জানা জরুরি

প্রকাশিত: জুন ২৪, ২০২০; সময়: ৪:৩৪ অপরাহ্ণ |
বিকাশ অ্যাপ ব্যবহারে যা জানা জরুরি

পদ্মাটাইমস ডেস্ক : মোবাইল ব্যাংকিং লেনদেনে বিকাশের জুড়ি নেই। বিকাশ অ্যাপও তাই বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। কিন্তু এই অ্যাপ দিয়ে লেনদেনের ক্ষেত্রে মাঝে মধ্যে বিড়ম্বনায় পড়তে হয়।

সঠিক তথ্য না জানার কারণে অনেকে বিভিন্ন ভাবে হয়রানিরও শিকার হন। জেনে নিতে পারেন বিকাশ অ্যাপে লেনদেনে কিছু শর্ত ও নিয়ম।

সেন্ডমানি ও ট্রান্সফার মানি: বিকাশের বহুল ব্যবহৃত সেবা সেন্ডমানিতে রয়েছে কিছু শর্ত। শর্তগুলো পূরণ না হলে গ্রাহকের সেন্ডমানি লেনদেন ব্যাহত হতে পারে।

লিমিট: বাংলাদেশ ব্যাংক নির্ধারিত লিমিট অনুযায়ী বর্তমানে একজন গ্রাহক দিনে সর্বোচ্চ ৫০ বারে ২৫ হাজার টাকা এবং মাসে ১০০ বারে সর্বোচ্চ ২ লাখ টাকা পর্যন্ত পাঠাতে পারেন। সেন্ড মানি করার ক্ষেত্রে সমস্যা দেখা দিলে গ্রাহক অ্যাপ থেকে তার লিমিট অপশন চেক করে দেখতে পারেন। নির্ধারিত সংখ্যা বা নির্ধারিত টাকার যে কোন একটির কোটা পূরণ হয়ে গেলেই আর সেন্ডমানি হবে না। কেবল নিজের বিকাশ অ্যাকাউন্ট নয়, যাকে টাকা পাঠাচ্ছেন তার লিমিটের বিষয়টিও খতিয়ে দেখতে পারেন। এখন বিকাশ থেকে ব্র্যাক ব্যাংক ও সিটি ব্যাংকের অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠাতে পারেন গ্রাহক। ফলে, টাকা পাঠানোর ক্ষেত্রে সেন্ডমানি ও ট্রান্সফার মানির লিমিট একসাথে মিলিয়ে হিসেব করতে হবে।

অ্যাকাউন্টের ধরণ: বিকাশ এজেন্ট বা মার্চেন্ট অ্যাকাউন্ট নম্বরে সেন্ডমানি করা যায় না। ফলে সেন্ডমানি না হলে অ্যাকাউন্টের ধরনও যাচাই করে দেখতে পারেন। অতি সম্প্রতি যে কোন মোবাইল নাম্বারে সেন্ডমানি করার সেবা চালু হয়েছে। ফলে এখন বিকাশ অ্যাকাউন্ট না থাকলেও যে কোন নাম্বারে টাকা পাঠানো যাবে।

ক্যাশইন ও অ্যাড মানি: বিকাশ অ্যাকাউন্টে টাকা সংযোজনের দুটো পদ্ধতির ক্ষেত্রেই বাংলাদেশ ব্যাংক প্রদত্ত লিমিট প্রযোজ্য। দিনে একটি বিকাশ অ্যাকাউন্টে ৫ বারে সর্বোচ্চ ৩০ হাজার টাকা সংযোজন করার সুযোগ আছে মাসে যার পরিমান সর্বোচ্চ ২৫ বারে সর্বোচ্চ ২ লাখ টাকা পর্যন্ত। ক্যাশ ইনে সমস্যা হলে শুরুতে অবশ্যই দৈনিক এবং মাসিক লিমিট চেক করে দেখতে হবে।

বিকাশ অ্যাকাউন্ট খোলার ফরমে এবং জাতীয় পরিচয়পত্রে প্রদত্ত গ্রাহকদের তথ্য ভেরিফিকশনের প্রয়োজনে গ্রাহকদের কয়েকটি স্তরে ভাগ করা হয়। অনেক গ্রাহকের সম্পূর্ণ তথ্য না থাকলে ক্যাশইন ডিজেবল হয়ে থাকতে পারে। সেক্ষেত্রে কাস্টমার কেয়ারে যোগাযোগ করে তথ্য আপডেট করলেই ক্যাশইন এনাবেল হয়ে যাবে।

অনলাইন ব্যাংকিং এবং ব্যাংকের অ্যাপ থেকে বিকাশে অ্যাড মানি করার ক্ষেত্রে ব্যাংক ভেদে কিছুটা ভিন্নতা আছে। অনলাইন ব্যাংকিং এবং ব্যাংকের অ্যাপ থেকে ক্যাশ-ইন না হলে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন। গ্রাহক যে নির্দিষ্ট ব্যাংকের সেবা ব্যবহার করেন তাদের পদ্ধতিগুলো জানা থাকলে অ্যাড মানি সেবাটি গ্রহণ করা খুবই সহজ ও ঝামেলাহীন।

কার্ড টু বিকাশ সেবার ক্ষেত্রে ব্যাংক ভেদে কতগুলো বিষয় জানা প্রয়োজন। যেমন যেসব কার্ডে ই-কর্মাস পেমেন্ট অপশন ওপেন করা নেই সেগুলো থেকে অ্যাড মানি হয় না। সেক্ষেত্রে ব্যাংকে যোগাযোগ করে ই-কর্মাস পেমেন্ট অপশন এনাবেল করে নিতে হবে।

মোবাইল রিচার্জ: মোবাইল অপারেটরা গ্রাহকদের সুবিধার্থে বিভিন্ন ধরনের প্যাকেজ দিয়ে থাকে। ধরা যাক ৩২ টাকায় ১ জিবি ডাটার একটা প্যাকেজ দিয়েছে কোন অপারেটর। গ্রাহক না জেনেই ৪০ টাকা রিচার্জ করলেন, সেক্ষেত্রে তার ডাটা সংযোজন হয়ে যাবে কিন্তু ব্যালেন্স এ রিচার্জ দেখা যাবে না।

বিকাশ অ্যাপ দিয়ে রিচার্জ করার তিন ধরনের সুবিধা নিতে পারেন গ্রাহক। নিজের প্রয়োজনীয় টাকা কোন প্যাকেজ ছাড়াই রিচার্জ করতে পারেন। তিনি ইন্টারনেট প্যাকেজ বা টকটাইম বা দুটোর সম্বন্বয়ে বান্ডেল কেনার সুযোগও নিতে পারেন। রিচার্জ করার সময় এই বিষয়গুলো খেয়াল রাখাও জরুরি। একজন গ্রাহক একদিনে সর্বোচ্চ ৫০ বারে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত মোবাইল রিচার্জ করতে পারেন। মাসে সর্বোচ্চ ১৫০০ বারে ১ লাখ টাকা পর্যন্ত এই সুযোগ আছে। গ্রাহক এই সীমার মধ্যে সব মোবাইল অপারেটরের পোস্ট পেইড বা প্রিপেইড সেবার জন্য বিকাশ দিয়ে রিচার্জ করতে পারেন। এমনকি নিজের বা যে কোন প্রিয়জনের মোবাইলে রিচার্জ করার সুবিধা নিতে পারেন।

পে-বিল: আপনি কোন বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানির কেমন গ্রাহক, তা বিদ্যুৎ বিল দেয়ার সময় জানা সবচেয়ে জরুরি। আপনি ডেসকো প্রিপেইড এর গ্রাহক হয়ে যদি ডিপিডিসি প্রিপেইডে বিল দেয়ার চেষ্টা করেন তবে তা ব্যর্থ হবে। তাই এক্ষেত্রে সঠিক তথ্য জেনে তারপর চেষ্টা করুন। বিল দেয়ার সময় একটি আইডি নম্বর ব্যবহার করতে হয়। বিল প্রদানে ব্যর্থ হলে সঠিক আইডি নম্বর ব্যবহার করেছেন কিনা মিলিয়ে দেখা জরুরি।

কয়েকটি বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানির কিছু প্রিপেইড মিটার আছে যেগুলো স্মার্ট মিটার নয়। পুরোনো প্রযুক্তির কারণে এমন কিছু মিটার রিচার্জ করা যায় না। সেক্ষেত্রে রিচার্জ করতে ব্যর্থ হলে আপনার মিটারটি সে ধরনের মিটার কিনা জেনে নিন। বিল প্রদানের ক্ষেত্রে কোন লিমিট নেই।

ক্যাশ আউট: বিকাশ থেকে দিনে সর্বোচ্চ ৫ বারে ২৫ হাজার টাকা এবং মাসে সর্বোচ্চ ২০ বারে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা ক্যাশআউট করা যায়। এজেন্ট পয়েন্ট অথবা নির্ধারিত এটিএম বুথ থেকে ক্যাশ আউটের সুযোগ রয়েছে। ক্যাশ আউট না হলেও লিমিট চেক করে দেখা জরুরি।

একজন গ্রাহক যখন ক্যাশ আউট করেন তখন স্বয়ংক্রিয়ভাবেই তার অ্যাকাউন্ট থেকে চার্জ কেটে রাখা হয়। অর্থ্যাৎ গ্রাহক যদি ১০০০ টাকা অ্যাপের মাধ্যমে ক্যাশ আউট করেন তাহলে তার অ্যাকাউন্ট থেকে ১০১৭.৫০ টাকা এবং ইউএসএসডি চ্যানেলের ক্ষেত্রে ১০১৮.৫০ টাকা কেটে নেয়া হয়। উভয়ক্ষেত্রেই এজেন্টের কাছ থেকে গ্রাহক ১০০০ টাকা বুঝে নেবেন। যেহেতু স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতেই অ্যাকাউন্ট থেকে চার্জটি কেটে নেয়া হচ্ছে, তাই এজেন্টকে কোন বাড়তি টাকা দিতে হবে না।

রেমিটেন্স: একটি বিকাশ অ্যাকাউন্টে দিনে সর্বোচ্চ ১০ বারে ১ লাখ ২৫ হাজার টাকা এবং মাসে ৫০ বারে ৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা রেমিটেন্স আসতে পারে। লিমিট না থাকলে রেমিটেন্স আসবে না। তাই বিকাশ নাম্বারে রেমিটেন্স প্রেরণকারী ও গ্রহণকারী উভয়েরই বিষয়টি জানা জরুরি।

পেমেন্ট: বিকাশ দিয়ে পণ্য বা সেবা কেনার ক্ষেত্রে পেমেন্টে কোন লিমিট নেই। তবে অনেক গ্রাহক পেমেন্ট দেয়ার সময় অজ্ঞতার কারণে সেন্ডমানি করতে চেষ্টা করেন। ফলে পেমেন্ট হয় না। তাই পেমেন্ট অপশন দিয়েই পেমেন্ট করতে হবে। সবচেয়ে সহজ হলো কিউআর কোড স্ক্যান করে পেমেন্ট করা।

ভুল পিন: কয়েকবার ভুল পিন দিয়ে বিকাশ অ্যাকাউন্টে ঢোকার চেষ্টা করলে নিরাপত্তার স্বার্থে স্বয়ংক্রিয়ভাবে অ্যাকাউন্ট ব্লক হয়ে যায়। অ্যাকাউন্ট ব্লক হলে কাস্টমার কেয়ারে যোগাযোগ করে নির্দিষ্ট পদ্ধতি অনুসরণ করে নতুন পিন রিসেট করে নিতে হবে।

প্রায় সব মোবাইল হ্যান্ডসেটে বাংলা লেখার সুযোগ থাকে। বাংলা কিবোর্ড সিলেক্ট করা থাকলে পিন ভুল দেখাতে পারে এবং অ্যাপ এ ঢুকতে সমস্যা হতে পারে। ঠিক পিন দেয়ার পরও ভুল বললে কিবোর্ড সিলেকশন চেক করে দেখা যেতে পারে।

বিকাশ অ্যাপের উপরের দিকের লোগো ক্লিক করে লিমিট অপশনে গেলে গ্রাহক কোন সেবার কতটুকু ব্যবহার করেছেন আর কতটুকু করতে পারবেন তা দেখতে পাবেন। লেনদেন সমস্যা হলে এই অপশনটি চেক করা জরুরি।

পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে