ব্যাংক ঋণ আদায় সংক্রান্ত মামলা ও বাস্তবতার নিরিখে প্রাসঙ্গিক ভাবনা
এমরান আহম্মদ ভূঁইয়া : ঢাকা জেলা জজ আদালতের তথ্য অনুযায়ী মে ২০২০ পর্যন্ত ঢাকার চারটি অর্থঋণ আদালতে বিচারাধীন, অর্থঋণ আদায় সংক্রান্ত মামলার সর্বমোট সংখ্যা ২৫,৫৯১। যেখানে বিচারাধীন অর্থঋণ মূল মামলার সংখ্যা ৭,৯৭৬, অর্থ জারী মামলার সংখ্যা ১৭,২৮১ এবং মিস কেস ৩৩৪।
দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড পত্রিকার গত ১৮/০২/২০২০ তারিখের রিপোর্ট এবং দ্য ফাইন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেসের গত ২৬/১০/২০১৯ তারিখের রিপোর্ট মোতাবেক, বাংলাদেশে ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ঋণ আদায় সংক্রান্ত মামলার সংখ্যা ৩০ জুন ২০১৯ পর্যন্ত ছিল ৬২,৬০৪। সেই রিপোর্টসমূহ পর্যালোচনা করে সুপ্রিম কোর্ট আর বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বিশ্লেষণ করলে বিরাট অমিল পাওয়া যায়, বাংলাদেশের নিম্ন আদালতে বিচারাধীন অর্থঋণ মামলার সর্বমোট সংখ্যার। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যের সঙ্গে সুপ্রিম কোর্টের তথ্যের বিশাল ফারাক চোখে পড়ে।
বাস্তবে দুই তথ্যই সঠিক। সুপ্রিম কোর্টের তথ্যে থাকে কেবল অর্থঋণ আদালতে বিচারাধীন অর্থঋণ মূল মামলার সংখ্যা। অন্যদিকে, বাংলাদেশ ব্যাংক তথ্য দেয় অর্থঋণ মূল মামলা, তার সঙ্গে অর্থ জারী মামলা, মূল মামলা বা জারী মামলা হতে উদ্ভুত মিস বা ছানি মামলা, উচ্চ আদালতে বিচারাধীন মামলা এবং অন্যান্য মামলার, অর্থ্যাৎ ঋণ আদায় সংশ্লিষ্ট সকল মামলা। সকল ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নিকট থেকে তথ্য নিয়ে তার যোগফলের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংক অর্থঋণ মামলার সংখ্যা নির্ধারণ করে। আর তাই বলা যায় দুই তথ্যই সঠিক।
যেহেতু বাংলাদেশ ব্যাংক ঋণ আদায় সংক্রান্ত সকল মামলার হিসাবে নিয়ে তথ্য প্রদান করে, তাই বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যকে বিবেচনায় নিয়ে আমাদের করণীয় ঠিক করতে হবে- কীভাবে এ বিশাল সংখ্যার মামলাকে দ্রুত নিষ্পত্তি করা যায়।
প্রথমেই আসা যাক অর্থ জারী মামলার নিষ্পত্তির বিষয়ে; কেননা কেবলমাত্র ঢাকার চারটি অর্থঋণ আদালতের যে হিসাব শুরুতে দেওয়া হয়েছে, তাতেই দেখা যায়, মূল মামলার চেয়ে দ্বিগুণের বেশি বিচারাধীন অর্থ জারী মামলা। অতএব, ধরে নেওয়া অযৌক্তিক নয় যে, গত বছরের জুন মাসের পরে এ বছর জুন পর্যন্ত সারাদেশে আরও অনেক নতুন জারী মামলা হয়েছে; তাছাড়া মূল মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি হলেও জারী মামলা নিষ্পত্তির হার খুবই কম, যার কারণে মামলার সংখ্যা কেবল বাড়ছেই না, ঋণ আদায় প্রক্রিয়াও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে; আর যার সর্বশেষ প্রতিক্রিয়া হচ্ছে সামগ্রিক অর্থনীতিতে বিরুপ প্রভাব।
অর্থ জারী মামলা হলো, বাদী ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পক্ষে মূল মামলার রায় ডিক্রি পাওয়ার নির্দিষ্ট মেয়াদের ভেতরে দায়ের করা মামলা, যা করা হয় প্রাপ্ত ডিক্রি কার্যকরের উদ্দেশ্যে। বন্ধকি সম্পত্তি বিক্রয় করে ঋণ আদায়ের জন্য ডিক্রির আদেশ থাকলে আদালত, সর্বোচ্চ দুইবার আদালত যোগে নিলাম বিক্রয় করার জন্য নিলাম ডাকের ব্যবস্থা করতে পারে অর্থঋণ আইনের বিধান মতে। তার পরে আদালত ডিক্রিদার ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে সম্পত্তির মালিকানা [ধারা ৩৩ (৭)] বা ভোগ, দখলসহ বিক্রির অনুমতি [ধারা ৩৩ (৫)] দিয়ে সনদপত্র প্রদান করে, জারী মামলার নিষ্পত্তি করেন উক্ত আইনের ৩৩ (৯) ধারা অনুযায়ী; তবে বাস্তবে মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হয় না। কেননা, এই আইনের ৩৩ (৭ ক) ধারায় রয়েছে: ‘উপ-ধারা (৫) বা (৭)-এর অধীন সম্পত্তির দখল আদালতযোগে প্রাপ্ত হওয়া আবশ্যক হইলে, ডিক্রিদারের লিখিত আবেদনের ভিত্তিতে আদালত ডিক্রিদারকে উক্ত সম্পত্তির দখল অর্পণ করিতে পারিবে।’
তার পরের ধারাটি আরও বেশি তাৎপর্যপূর্ণ: (৭ খ) ‘উপ-ধারা (৭ ক)-এর অধীন ডিক্রিদারকে সম্পত্তির দখল অর্পষ করিবার পূর্বে আদালতে পুনঃনিশ্চিত হইতে হবে যে, উক্ত সস্পত্তিই আইনানুগভাবে উহার প্রকৃত মালিক কর্তৃক ডিক্রির সংশ্লিষ্ট ঋণের বিপরীতে বন্ধক প্রদান করা হইয়াছিল অথবা ডিক্রি কার্যকর করিবার লক্ষে দায়িকের প্রকৃত সত্ব দখলীয় সম্পত্তি হিসাবে উক্ত সম্পত্তিই ক্রোক করা হইয়াছিল।’
লক্ষণীয় বিষয়, এখানে আদালতকে প্রকৃত মালিক দ্বারা সম্পত্তি বন্ধক দেওয়া হয়েছিল কি না সে ব্যাপারে পুনঃনিশ্চিত হতে বলা হয়েছে। যদিও বলা হয়নি, পুনঃনিশ্চিত হওয়ার পদ্ধতি কী হবে কিংবা প্রকৃত মালিক দ্বারা যদি বন্ধক প্রদান না করা হয়ে থাকে, তাহলে কী হবে? আর তাই যে আদালত বন্ধকী সম্পত্তির মালিক আইনের ৩৩ (৭) ধারা অনুযায়ী ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে ঘোষণা করেছিল, সেই একই আদালতের ওপর দায়িত্ব বর্তায়, বন্ধকটি সম্পত্তির প্র্কৃত মালিক করেছিল কি-না তা নির্ধারণ করার, তাও আইনের ৩৩-এর ৯ ধারা মোতাবেক জারী মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তির পরে! আর তাই অর্থ জারী মামলা কেবল যে সগৌরবে রয়ে যায়, তা নয়, সম্পূর্ণ আরেকটি নতুন প্রসিডিংসের জন্ম দেয়। কারণ, আইন অনুযায়ী মামলা নিষ্পত্তি হয়ে যাওয়ার পরেও এ ‘দুই উপধারার কারণে আদালতকে দেখতে হবে বন্ধকী সম্পত্তির কাগজপত্র, সি.এস., আর.এস., বি.এস., মিউটেশন খতিয়ান; মিলাতে হবে সম্পত্তির দাগ, কড়া, আনি, ক্রান্তি হিসাব; পর্যালোচনা করতে হবে মূল মামলার সাক্ষ্য, মূল দলিল, বায়া দলিলের তফসিল, মালিকানার চেইন, খাজনা দাখিলার মতো আরও অনেক কাগজ, দলিল বা দস্তাবেজ। তদুপরি আদালতকে আরও পুনরায় নিশ্চিত হতে হবে ‘ডিক্রির সংশ্লিষ্ট ঋনের বিপরীতে বন্ধক প্রদান করা হয়েছিল কি না?’
অর্থাৎ, জারী আদালত এখন ব্যাংকের সেংশন লেটার, কোম্পানির নিজস্ব জায়গা হলে বন্ধকের পরে রেজিস্ট্রার অব জয়েন্ট স্টকস অ্যান্ড কোম্পানিজ-এ পুনরায় মর্টগেজ করা হয়েছে কি না, চার্জ ডকুমেন্টস, অ্যাকাউন্ট স্টেটমেন্টসহ প্রদত্ত সাক্ষ্য বিবেচনায় এনে তার পরে সিদ্ধান্ত দিতে হবে যে, আইনানুগভাবে বন্ধকী সম্পত্তির প্রকৃত মালিক কর্তৃক প্রদত্ত ঋনের বিপরীতে জমির প্রকৃত মালিকই বন্ধক প্রদান করেছিল।
এ তো গেল যেক্ষেত্রে বন্ধকী সম্পত্তি আছে, সেই জারী মামলার কথা; আর যেক্ষেত্রে তা নেই, সেই মামলার ক্ষেত্রে আদালত দায়িককে দেওয়ানি কারাগারে আটক রাখার জন্য ওয়ারেন্ট প্রদান করেন। আইনে আছে, আটক থাকবে সর্বোচ্চ ছয় মাস। যদিও ডিক্রি প্রদত্ত টাকা কীভাবে আদায় হবে তা বলা নেই, তবে বলা আছে পুনরায় জারী মামলা করা যাবে টাকা আদায় না হলে; কিন্ত এবার আর তাকে দেওয়ানী কারাগারে আটক রাখা যাবে না, যদি তিনি আগেই পূর্ণ মেয়াদে কারাগারে আটক থাকেন। অন্যদিকে, বছরের পর পর বছর ওয়ারেন্ট তামিল করা যায় না তার কারণ, মানুষ তো আর একই ঠিকানায় সারা জীবন থাকে না। আর তাই যে কোনো প্রকারের জারী মামলাই নিষ্পত্তি হওয়া দুরূহ।
জারী মামলায় ডিক্রি কার্যকরের এই অবস্থায় ব্যাংকগুলো তাই ঋণ আদায়ের সহজ কার্যকরী পন্থা হিসাবে ঝুঁকে পড়ে চেক ডিজঅনারের মামলার দিকে। বাংলাদেশে ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের চেক ডিজঅনারের মামলা ফাইলিং হয় প্রতিদিন, প্রচুর পরিমাণে; যে কারণে ফৌজদারি মামলার সংখ্যাও বেড়ে যাচ্ছে অস্বাভাবিক হারে। এত মামলার চাপে ভয়ংকর অপরাধের ফৌজদারি মামলাগুলোর নিষ্পত্তি হতে সময় নিচ্ছে; কেননা যে বিচারক মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার মতো মামলার বিচারক, তার কোর্টেই চেক ডিজঅনার মামলার জট- যার সর্বোচ্চ শাস্তি ১ বছর; কেবল তাই নয়, সে সকল মামলা থেকে উদ্ভুত আপিল বা রিট মামলা সুপ্রিম কোর্টেও চলে আসছে অস্বাভাবিক দ্রুতগতিতে। যার স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া হচ্ছে মামলা জট আর ভয়ংকর অপরাধের বিচারের দীর্ঘসূত্রিতা; ফলাফলে অপরাধীর অপরাধ করার মানসিকতা বেড়ে যায়, যার সুদুরপ্রসারি প্রভাবে সৃষ্টি হয় সামাজিক অস্থিরতা।
এবার পূর্বের আলোচনায় ফিরে আসি, এক্ষেত্রে আমাদের করণীয় কী কী হতে পারে:
১. ব্যাংক’কে মামলা করার আগে আইনের ১২ ধারা মোতাবেক সম্পত্তির দখল নিতে হবে। তাতে সুবিধা হচ্ছে, একদম শুরুতেই বোঝা যাবে সম্পত্তির মালিকানা দখল সংক্রান্ত জটিলতা আছে কি না?
২. ঋণ চলমান হোক আর খেলাপি হোক, ব্যাংকের কর্মকর্তা নিজে গিয়ে বন্ধকী সম্পত্তির খাজনা প্রতি বছর দিয়ে আসবে, যেখানে জমাদানকারি হিসাবে ঋণদাতা ব্যাংকের নাম থাকবে। এতে খাজনা দাখিলায় বন্ধকগ্রহিতার নাম যেমন চলে আসবে, তেমনি প্রতি বছর ব্যাংক জানতে পারবে বন্ধককৃত সম্পত্তির মালিকানা ব্যাংকের অগোচরে হস্তান্তর বা সম্পত্তিতে সরকারি কোনো স্বার্থের সৃষ্টি- যেমন অধিগ্রহণ হয়েছে কি না, ইত্যাদি। তাছাড়া ঋণ গ্রহণের সময় প্রদত্ত খাজনা দাখিলা বা খতিয়ান সংক্রান্ত কাগজপত্রাদি সঠিক ছিল কি না, তাও বোঝা যাবে।
উপরোক্ত দুটি পদ্ধতি অবলম্বন করলে ভুয়া যোগ-সাজশী কাগজ দলিল দিয়ে ঋণ নিলে একটা পর্যায়ে অবশ্যই বের হয়ে আসবে প্রতারণা করে ঋণ নেওয়ার বিষয়টি এবং সেক্ষেত্রে সরাসরি ব্যাংক ঋণগ্রহিতার বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা করতে পারবে।
৩. বন্ধক থাকুক বা না থাকুক, ঋনগ্রহিতার কাছ থেকে প্রতি বছর সেল্ফ ডিক্লারেশন নিতে হবে। যাতে থাকবে তার সম্পদের বর্ণনা, সকল ব্যাংকের অ্যাকাউন্টসমূহের বিবরণ, সঞ্চয়পত্র থাকলে তার বিবরণ ইত্যাদি। এর সুবিধা হবে, প্রয়োজনে ব্যাংক এ সকল সম্পত্তি ঋণ আদায়ের জন্য ক্রোক করার ব্যবস্থা নিতে পারবে। আর মিথ্যা ডিক্লারেশন দিলে ফৌজদারি অপরাধের দায়ে ঋণগ্রহিতাকে অভিযুক্ত করা যাবে।
৪. একই ঋণখেলাপির বিরুদ্ধে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ঋণ আদায়ের উদ্দেশ্যে করা চেক ডিজঅনারের মামলা অথবা অর্থঋণ মামলা- যেকোনো একটি করতে পারবে, এ মর্মে সুস্পষ্ট নির্দেশনা থাকা প্রয়োজন, যেন একই বিষয়ে দুটি ভিন্ন মামলার উদ্ভব না হয়। তাতে মামলার সংখ্যা অনেক কমে যাবে। আর ইতিমধ্যেই দায়ের হওয়া একই ঋণ/বিষয় নিয়ে দুটি ভিন্ন ভিন্ন চেক ডিজঅনার ও অর্থঋণ মামলার যেকোনো একটিকে প্রত্যাহার করে নিতে হবে মর্মে নির্দেশনা থাকলে নিঃসন্দেহে মামলার জট কমে যাবে, তা সহজেই অনুমেয়।
৫. অর্থঋণ আদালত আইনের ৩৩ (৭ ক) এবং (৭ খ) ধারা বিলুপ্ত করে উক্ত ধারার বিষয়বস্তুর ওপর বিচার্য বিষয় নির্ধারণ করে মূল মামলা (একতরফা বা দো-তরফা নিষ্পত্তি- উভয় ক্ষেত্রেই) নিষ্পত্তি করার জন্য একই আইনের ১৩ ধারায় সন্নিবেশিত করলে অর্থ জারী মামলার অনেক দ্রুত নিষ্পত্তি হবে।
৬. বন্ধকবিহীন জারী মামলার ক্ষেত্রে খেলাপিগ্রহিতা আটক হলে আদালতকে উক্ত খেলাপিকে বা ক্ষেত্রবিশেষে ব্যাংক কর্মকর্তাকে দায়িক-খেলাপির অন্যান্য সম্পত্তির হিসাব প্রদান করার জন্য আদেশদানের ক্ষমতা দিলে ঋণ আদায় সহজতর এবং মামলাও দ্রুত নিষ্পত্তি হবে।
৭. সারা দেশে কেবলমাত্র অর্থঋণ বিষয়ের ওপর বিচার করে- এরূপ কোর্টের সংখ্যা ১১। যেসব জেলায় অর্থঋণ আদালত নেই, সেসব জেলায় যুগ্ম জেলা জজ আদালত একইসঙ্গে ফৌজদারি, দেওয়ানী এবং অর্থঋণ মামলার বিচারকার্য সম্পাদন করেন; এমতাবস্থায় বাংলাদেশের সকল জেলায় সম্ভবপর না হলেও অধিকাংশ জেলায় এক বা একাধিক অর্থঋণ আদালত প্রতিষ্ঠা করলে এ সকল মামলার দ্রুত নিষ্পত্তি করা সম্ভব। কেবল তাই নয়, অর্থঋণ আদালতের বিচারকদের ব্যাংকিংয়ের ওপর বেসিক ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করলে মামলা নিষ্পত্তিতে সুফল পাওয়া যেতে পারে।
সর্বশেষে যদিও অর্থঋণ সম্পর্কিত নয়, তবু বলা প্রয়োজন মনে করছি, চেক ডিজঅনার মামলার বিচারের দায়িত্ব ‘দ্য নেগোশিয়েটেবল ইনস্ট্রুমেন্ট অ্যাক্ট’ সংশোধন করে পূর্বের ন্যায় আবারও ম্যাজিস্ট্রেটদের ওপর ন্যাস্ত করা প্রয়োজন। কেননা এই সকল মামলাকে তার বিচার্য বিষয়, শাস্তি বা জরিমানার ধরণ; দায়রা জজ আদালতের অন্য কোনো বিচারাধীন মামলার বিচার্য বিষয়ের সঙ্গে মামলার ‘ভয়ংকরতা, সমাজে তার প্রভাব ইত্যাদি’ বিবেচনায় নিয়ে ‘মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি করার’ কষ্ঠি পাথরে তুলনা করলে, অতি ক্ষুদ্র মনে হবে।
বেলাভূমিতে দাঁড়িয়ে সমুদ্রের উপরিতলের কেবল ঢেউ আর সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়, অনুমানেও আসে না এর গভীরে কী রয়েছে; আর তাই আমাদের যেমন ছোট শাস্তির- চেক ডিজঅনারের মামলা নিষ্পত্তি প্রয়োজন, তারচেয়ে অনেক বেশি প্রয়োজন হত্যা, খুন, ধর্ষণ, নাশকতা, মানি লন্ডারিং, মানব পাচার, চোরাচালানি ইত্যাদি সমাজ বা রাষ্ট্রবিরোধী মামলারও দ্রুত নিষ্পত্তি করা।
লেখক: ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল, বাংলাদেশ
সূত্র : দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড