প্রতারণা : সাহেদদের বিচার ও শাস্তি সময়ের দাবি
সরকার দুলাল মাহবুব : করোনা সংকট মোকাবেলায় পুরো পৃথিবী টালমাটাল। এখন পর্যন্ত করোনা ভাইরাস কেড়ে নিয়েছে লাখ লাখ প্রাণ। আক্রান্ত হয়েছে কোটি কোটি মানুষ। প্রতিদিন বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। বাড়ছে মৃত্যু। কিন্তু আমাদের দেশে বাড়ছে না শুধু বিবেকের দায়ভার। লুটপাট ও প্রতারণা চলছে প্রতিনিয়ত। স্বাধীন এই দেশে নানাভাবে অসহায় আমরা। মানুষের নৈতিক স্খলন করোনা মহামারির চেয়েও ভয়ংকর রূপ নিয়েছে। অস্থির যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছি।
একসময় ঘুমের মধ্যে স্বপ্ন দেখলাম, দেশে নৈতিক শিক্ষার পাঠশালা খোলা হচ্ছে। সবাইকে নাকি আসতে হবে সেই পাঠশালায়। বাধ্যতামূলক অক্ষর পরিচয়ের জন্য ঠিক এভাবেই একদিন এই দেশের উঠানে উঠানে লণ্ঠন জ্বালিয়ে সান্ধ্যকালীন পাঠশালা খোলা হয়েছিল।
অবশ্য হ্যালা-ফ্যালা সেই উদ্যোগ কিন্তু বিফলে যায়নি। অনেকেই আসতেন সেই সান্ধ্য পাঠশালায়। যারা লজ্জায় আসেননি তারাও ঘরে ঘরে স্বাক্ষর শিখে নিয়েছিলেন। সত্যি সত্যিই এ উদ্যোগে দূর করা সম্ভব হয়েছিল নিরক্ষরতা, দূর করা গেছে টিপসই। ওভাবে নীতি শিক্ষা দেওয়া গেলে তো ভালেই হবে। কিন্তু ঘুম যখন ভাংলো তখন বুঝলাম আমি স্বপ্ন দেখলাম। যতক্ষণ মনে ভাসলো স্বপ্নটা, ততক্ষণ মনে হলো স্বপ্নটা শুভ।
সত্যিই যদি এমন পাঠশালা খোলা হতো তা হলে ভালোই হতো হয়তো। নিরক্ষরতার মতো মানুষের অনৈতিক দীক্ষাকে নৈতিক শিক্ষায় রূপান্তর করে নেওয়া যেতো। পাঠশালায় গিয়ে প্রতিদিন শপথ নিতে হবে, ‘আমি দেশ ও জাতির কল্যাণে, মানুষ ও মানবতার মঙ্গলে কাজ করার অঙ্গীকার করছি’।
মনে খুব পীড়া। কিছু কথা বলে এ পীড়া দূর করার চেষ্টা করছি মাত্র। করোনা ভাইরাস কালের সংকট নিয়ে কথা। আমাদের অমানুষ নিয়ে আমাদের কিছু কথা। করোনা সংকটে এমনিতেই দেশে বেকারত্ব আশঙ্কাজনক ভাবে বেড়ে গেছে। অনেকটাই সীমিত হয়ে পড়ছে কাজের ক্ষেত্র। দারিদ্রতা বেড়ে যাওয়ার ভয়ঙ্কর এক ভবিষ্যতের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আজ দেশ ও জাতি।
আমার দেশ আমার অহংকার। আমার দেশ আমার ভালবাসা। এই দেশ এখন অনেকের বিবেকের নৈতিকতা হননের পাপে জর্জরিত। এই পাপ কিছু কিছু মানুষকে অমানুষ করে দিয়েছে। করোনা মহামারিও তাদের অশুভ কর্মকান্ডে আঘাত হানতে পারেনি। করোনার ভয়াবহতায় হজ্বব্রত পালন না করতে পেরে একদিকে মানুষের হৃদয় ভাঙছে, অন্যদিকে এই নানদ সন্তানরা তখন করোনাকে পুঁজি করে দিব্যি অবৈধ ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে।
দেশ এখন এমপি পাপলুকান্ডে প্রশ্নবিদ্ধ। আইন প্রণেতাদের মাথা অনেকখানি হেট হয়ে যাচ্ছে, তারমধ্যে যোগ হয়েছে সাহেদ, আরিফ, ডা. সাবরিনাকান্ড। এখন সময় এসেছে এবং জাতির প্রত্যাশা কাদের ছত্রছায়ায় কাদের মদদে দেশের এই মানুষগুলো অমানুষের স্রোতে বয়ে যাচ্ছে, তা দেখার। তাই সাহেদ, আরিফ, ডা. সাবরিনা, পাপিয়াদের আইনের শাস্তি নিশ্চিত করাটাই এখন সময়ের দাবী। তবে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে এই অমানুষদের শাস্তি কে দেবে। খাবার দিলে হয়তো বিড়াল ধরা যায়, কিন্তু বিড়াল মারাতে অনেকটাই ক্ষত-বিক্ষত হবার ভয় থাকে বটে। এসব ভয়ের কারণেই হয়তো ক্যাসিনোকাণ্ড নিথর হয়ে যায়।
এ সময়টাতে দেশের প্রতিটি জনগণের খাদ্য, চিকিৎসা, শিক্ষা, বাসস্থান নিশ্চিত করা নিয়ে এক কঠিন সময় পার করতে হচ্ছে সরকারকে। মনুষ্যত্ব ও বিবেক নিয়ে ভাবতে হচ্ছে সরকার ও দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের। কিন্তু করোনা ভাইরাস মোকাবেলার এই চরম দুর্দিনেও বিবেক নাড়া দিচ্ছে না কতিপয় ব্যক্তির। দুয়ারে মৃত্যু দাঁড়িয়ে জেনেও দুর্নীতির মায়াজাল থেকে তারা বের হতে পারছেন না।
কিন্তু তাদের মতো কতিপয় মানুষের কর্মকান্ডে পুরো জাতি আজ প্রশ্নবিদ্ধ। এসব মানুষের কাছে আমজনতা বড়ই অসহায় আজ। এদের কারণেই জাতি আজ বিদেশে লজ্জায় নতুজানু। পুরো জাতিকে হজম করতে হচ্ছে দুর্নীতিবাজ, অবিবেচক, প্রতারক-মিথ্যাবাদিদের নানা কর্মকাণ্ড।
আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রায়ই বলেন, সন্ত্রাসী, দুর্নীতিবাজরা কোন দলের নয়। আর আওয়ামী লীগ দল কোন শিবির বা এজেন্ট দল থেকে গঠন হয়নি। আওয়ামী লীগ গঠন হয়েছে এদেশের মাটি মানুষের আস্থা, বিশ্বাস ও অধিকারের মধ্যদিয়ে। দেশের মানুষ যে দলই করুন না কেন তারা বিশ্বাস করেন বর্তমান সরকার এসব মানুষদের শায়েস্তা করতে না পারলে অন্য দলের পক্ষে কোনভাবেই সম্ভব নয়।
শুধু রিজেন্ট-জেকেজি নয়, সকল সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা এবং শাস্তিটাও নিশ্চিত করা। এমনকি গুঞ্জন বইছে জেলা তো বটেই উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোও ভুয়া ভাইচার দিয়ে সরকারি টাকা আত্মসাৎ করছে। সেখানেও তদন্ত করা প্রয়োজন বলে মনে করেন অনেকে।
ভাবতে কষ্ট লাগে, করোনা ভাইরাসের ভুয়া রিপোর্ট বিক্রি হচ্ছে। করোনার নেগেটিভ সনদ দিয়ে বিদেশের মাটিতে দেশকে ডুবিয়েছে। শুনতে পাচ্ছি খাদ্য ও ভার্চ্যুয়াল সভার নামেও রাষ্ট্রীয় কোষাগার ধ্বংসের পায়তারা চলছে। আবার করোনা সুরক্ষা সামগ্রী কেনা-কাটা নিয়ে স্বাস্থ্য দপ্তরের দুর্নীতি খতিয়ে দেখতে তদন্তে নেমেছ দুদক। এসব হচ্ছেটা কি? আরও কতটা নিচে নামতে পারি আমরা।
করোনা ভাইরাসের এই মহাদুর্যোগের মধ্যে যে যার মতো ফাইদা লুটার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। আর আমরা তো আমজনতার দলেই। জনতার একটি শ্রেণি যারা শ্রমিক হিসাবে প্রবাস জীবন-যাপন করছে। যাদের রক্ত পানি করা ঘামের দামে দেশের রেমিট্যান্স বাড়ে। সোনার ডিমপাড়া সেই রাজহাঁসদের জবাই করে অনেক ডিম বের করে নিয়ে রাতারাতি ধনী হতে যায় লোভী হারামখোরের দল।
তাদেরকে নিয়েও সত্যিকার অর্থে সরকারের আপ্রাণ চেষ্টা থাকা সত্বেও শুধুমাত্র সরকারের এহাত ওহাতের নৈতিকতার অভাবে দেশের সাধারণ মানুষ আজ বড়ই দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে। জাতি মর্মাহত, তবুও ঘুম ভাঙছে না কর্তা ব্যক্তিদের।
প্রত্যেকদিন খবরের কাগজ খুলেই দেখি আমাদের ঘনিষ্ঠ কোনো না কোনো ব্যক্তি মারা গেছেন। প্রতিদিনই কেউ না কেউ চলে যাচ্ছেন। গত কয়েকদিনে আমাদের অনেক জাতিগড়া দেশগড়া মহান মানুষকে আমরা হারিয়েছি।
করোনার কারণে চেনা পৃথিবী ভয়ঙ্করভাবে বদলে গেছে। পিতামাতা সন্তানাদির করোনা হলে যাওয়া হচ্ছে না। স্বামীর কাছে স্ত্রী যেতে পারছে না। এ এক ভয়ঙ্কর বদলে যাবার দিন আজ। এখন আমাদের আরো সাবধান ও সচেতন হতে হবে। সেখানে বিবেকহীন দুর্নীতিবাজরা দেদারসে চালিয়ে যাচ্ছে তাদের অপকর্ম। যাদের নিয়ে চলছে রাজনৈতিক কর্তা ব্যক্তিদের কাদা ছুঁড়াছুঁড়ি। আবার ধরা পড়লেও তাদের পক্ষ বিপক্ষে চলছে নানা ওকালতি। দায় এড়িয়ে চাচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা। যা জাতির জন্য শুভকর নয়, সুখকর নয়।
অজয় দাশগুপ্ত গত ৮ জুন এক প্রতিবেদনে বলেলেন, ‘একটা বিপজ্জনক প্রবণতা আছে আমাদের। নিজের দোষ পরের ওপর চাপানো। ‘উদোর পিণ্ডি বুধোর ঘাড়ে’ এই প্রবাদটি আর কোনো ভাষায় আছে বলে শুনিনি। অনায়াসে চিকিৎসা সেবা, ডাক্তার-নার্স আর সরকারের ওপর চাপিয়ে দিয়ে করোনাভাইরাসের দায়মুক্ত হচ্ছে মানুষ। যত দোষ নন্দ ঘোষের বলে যে কথাটা চালু তার একটু পরিবর্তন করে বলবে সব দোষ হাসিনা ঘোষের। বলাবাহুল্য এর জন্য সরকারি দলের কর্মকাণ্ড দায়ী। দায়ী তো তাদের নেতারা। এককেন্দ্রিক ক্ষমতা আর বিপুল টাকা পয়সা কামানো নেতাদের কেউই জনগণের মনের ভাষা বোঝেনি। কিন্তু স্বাভাবিক ভাবেই মানুষের রাগ গিয়ে পড়ছে সরকারি দলের ওপর। অথচ এক বিশাল সংখ্যক চোরের দলকে ইতোমধ্যে সাইজ করেছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। অতীতে কখনো এতগুলো জনপ্রতিনিধি গ্রেপ্তার বা আটক হয়েছে? না শাস্তি পেয়েছে? তারপরও মানুষ তাদের ওপর অসন্তুষ্ট।’
তাই বলছি, পাপিয়া, ডা. সাবরিনা, আরিফ-সাহেদ করিমরা একদিনে তৈরী হয়নি। এদের অমুক নেতার সাথে ছবি, তমুক আমলার সাথে সখ্যতা, অমুক-তমুকের সাথে যৌনতা বিষয় ও পরিবেশ একদিনে গড়ে উঠেনি। এরা যদি অন্য দল থেকে এসে থাকে তার দায় কার। স্বাভাবিকভাবে জাতির প্রশ্ন, আমাদের বিভিন্ন সংস্থা এদের বিরুদ্ধে রিপোর্ট করে না কেন? রিপোর্ট করলে সেগুলো কোন লাল ফিতায় আঁটা থাকে।
আজ সাহেদ ধরা পড়েছে বলে আমরা জানতে পারছি সে প্রতারক। সন্দুরী নারীর হাট বসতো নাকি তার ঢেরায়। কারা এদেরকে আশ্রয়, প্রশয় দিয়ে বাজে কাজে উৎসাহিত ও সহযোগিতা করেছে তাদের দায় পাপিয়া-সাহেদের চাইতে কম নয়। দেশের বিভিন্ন দপ্তরের দায়সারা, গা-ঝাড়া কর্তব্য দেখে অনেকেই বলছেন দায় শুধু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। সুখ ভোগ করবে বিবেকহীন আমলা রাজনীতিকরা, দুর্ভোগ পোয়াবে আমজনতা আর দুর্নাম-দায় সবই নাকি শেখ হাসিনার।
একনদী রক্তের বিনিময়ে স্বাধীন দেশের মানুষ অনেক বেপরোয়া, নৈতিকতা শূন্যের দিকে ধাবমান। আমাদের সংগ্রামের পথ অনেক দীর্ঘ, বিজয়ের ইতিহাসও কম বিস্ময়ের নয়। ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে মুক্তিযুদ্ধ, স্বৈরাচার আন্দোলন সবক্ষেত্রেই রয়েছে আমাদের বিজয়গাঁথা। কিন্তু মনুষ্যত্ব ও বিবেকের আধারে জাতি হিসাবে আমরা এতো পিছিয়ে কেন? আবারও তা প্রমান হলো করোনা ভাইরাস সংক্রমণ- নিষ্ক্রমণের ভুয়া সার্টিফিকেট বিক্রির মধ্য দিয়ে। এ জন্য দায়ি কে, কারা?
তাহলে স্বাধীনতার এতবছর পরও বিবেক রক্ষায় জাতিকে আবারো নৈতিক শিক্ষার ওপর অত্যধিক গুরুত্ব দিতে হবে? এ জন্য কি নেতৃত্বের অসুস্থ বিবেককে সবার আগে সুস্থ করে তুলতে হবে? বিবেকের খুব করুণ দশা আমাদের। বেঁচে থাকা, সুস্থ থাকা তার চেয়ে অর্থ উপার্জনের অশুভ লড়াই কি বেশি দরকার? নানা প্রশ্নই আজ ঘুরপাক খাচ্ছে মনে।
করোনা ভাইরাসের থাবা থেকে সম্প্রতি ফিরে আসা মুনতাসীর মামুন তাই দুঃখ পেয়েছেন। ‘তিনি এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, লুটপাট ও প্রতারণা মানসিক কষ্টের কারণ। চারিদিকে যে লুটপাট দেখছি, প্রতারণা দেখছি, এটাও মানসিক যন্ত্রণার কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। কারণ আমরা আজীবন এসবের বিরুদ্ধেই বলে আসছি। শেখ হাসিনার সময় এরকমটা হচ্ছে। উনি ধরছেন, ঠিক আছে। কিন্তু তাদের কারো কোনো শাস্তি হচ্ছে না। আইনের ফাঁক ফোকর দিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে। যারা প্রশাসনে আছে তাদের বদলি করা হচ্ছে। আর যারা আছে তাদের দুদক জিজ্ঞাসাবাদ করছে। এই জিজ্ঞাবাদ তো অনন্তকাল চলবে’।
আওয়ামী লীগ সকল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ সাহসি ও মানবিক রাজনৈতিক দল। জাতির প্রত্যাশা ও আস্থা তাই এ দলের অনেকটাই। পরীক্ষিত নীতিবান মানুষের সাথেই আওয়ামী লীগের অঙ্গন দেখতে চায় আপামর জনগণ। কিন্তু রাষ্ট্রযন্ত্রের মহান-মহৎ কর্ণধারদের অতীত থেকে শিক্ষা নেওয়া প্রয়োজন রয়েছে।
এ ক্ষেত্রে অতীতের কিছু বিশ্বাস ঘাতকদের কীর্তি তুলে ধরা জরুরী। ইন্দিরা গান্ধীর পরিণতি হয়েছিল শত্রুর গুলিতে নয়, তার মৃত্যু হয়েছিল নিজেরই দেহরক্ষীর গুলিতে।
বঙ্গবন্ধুর পিতা শেখ লুৎফর রহমানের দেহ নামাতে যে মানুষটি কবরে নেমেছিল, বঙ্গবন্ধুর মাতার মৃত্যুতে যে লোকটি মাটিতে শুয়ে কান্নায় গড়াগড়ি করেছিলো, শেখ কামালের বিয়ের উকিল বাপ যে মানুষটি, ১৯৭৫ সালের ১৪ই আগস্ট দুপুরে যে লোকটি বাসা থেকে তরকারী রান্না করে নিয়ে গিয়ে বঙ্গবন্ধুকে খাইয়েছিলোÑ পরেরদিন ১৫ই আগষ্ট বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে সেই লোকটিই খুন করিয়েছিলেন। তিনি হলেন খন্দকার মোশতাক।
পাপিয়া, ডা. সাবরিনা, আরিফ-সাহেদ করিমরা জাতীয় শত্রু। এরা জাতিকে বিক্রি করে, প্রয়োজনে মেরে ফেলে হলেও আখের গোছাতে চাই। অর্থের নেশায় এদের মধ্যে বিবেক নৈতিকতা থাকে না। খুঁজতে গেলে এদের মতো আরো ঘাপটি মেরে থাকা জাতির শত্রুর দেখা মিলবে। আজ দেশের জন্য জাতির জন্যই তাদের খুঁজে বের করা জরুরী। বিবেচনাবোধ, নৈতিক শিক্ষার অভাবে তাদের দায়বোধের মৃত্যু হয়েছে।
একটি উদাহরণ দিয়েই লেখাটি শেষ করতে চাই। প্রাচীন যুগে চীনারা যখন শান্তিতে বসবাস করতে গ্রেট ওয়াল নির্মাণ করলো। চীনারা ভেবেছিল এটার উচ্চতার জন্য কেউ টপকে তাদের আক্রমণ করতে পারবে না। গ্রেট ওয়াল নির্মাণের প্রথম একশো বছরের মধ্যেই চীনারা তিন বার আক্রান্ত হয়। আশ্চর্যের বিষয় কোনোবারই আক্রমণকারীদের দেওয়াল টপকানো বা ভাঙার প্রয়োজন হয়নি। কারণ প্রত্যেকবারই আক্রমণকারীরা দেয়াল পাহারারত রক্ষীদের উৎকোচ দিয়ে সামনের গেট দিয়ে ঢুকে গেছে।
চীনারা অনেক পরিশ্রম করে মজবুত দেওয়াল তৈরি করলেও রক্ষীদের চরিত্র মজবুত করার জন্য কোন পরিশ্রমই করেনি। তাহলে দেখা যাচ্ছে দেওয়াল মজবুত করার থেকে নৈতিকতা, বিবেক, বিচার ও চরিত্র মজবুত করার প্রশ্নটিই আগে আসে। শুধু দেওয়াল মজবুত করার ফলাফল শূন্য।
অনেক আগেই একজন প্রাচ্যদেশীয় দার্শনিক বলে গেছেন কোন সভ্যতা ধ্বংস করতে তিনটি কাজ করলেই হবে। প্রথম কাজটি হলো- যে জাতিকে পদানত করতে চাও তার পারিবারিক গঠন আগে ধ্বংস করো। পারিবারিক গঠন ধ্বংস করতে হলে সংসারে মায়ের ভূমিকাকে খাটো করে দেখাও যাতে সে গৃহবধূ পরিচয় দিতে লজ্জাবোধ করে।
দ্বিতীয়তঃ শিক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংস করে দাও। এটা করতে হলে শিক্ষককে প্রাধান্য দিও না। সমাজে তার অবস্থান নিচু করে দেখাও যাতে তার ছাত্ররাই তাকে উপহাস করে।
তৃতীয়তঃ তরুণ সমাজ যেন অনুসরণ করার মত কোন রোল মডেল না পায়। তাই তাদের জ্ঞানীদের নানা ভাবে অপমান কর। রোল মডেলদের নামে অসংখ্য মিথ্যা কুৎসা রটাও যাতে তরুণ সমাজ তাদের অনুসরণ করতে দ্বিধাবোধ করে।
আমাদের কিছু লোক এই করোনা বিপর্যয়ের মুখে সেবা না দিয়ে মানুষের সাথে প্রতিনিয়তই প্রতারণা করে যাচ্ছে। তারা নিজেরাই নিজেদের রোল মডেলত্ব নষ্ট করে যাচ্ছে। বলুনতো, এসবের শেষ কোথায়?
লেখক-সাংবাদিক, কবি ও কলামিষ্ট ।