পাপ্পাকে কখন টাচ করতে পারবো মা ? করোনায় নির্মম বাস্তবতা!

প্রকাশিত: ২২-০৭-২০২০, সময়: ১৮:১১ |

নিজস্ব প্রতিবেদক : মেয়েরা নাকি বাবার বেশি প্রিয় হয়, আবার বাবারাও নাকি মেয়েদের কাছ থেকে বেশি আদর পান। কথাটায় যুক্তি হয়তো নেই, কিন্তু খুব একটা ভুলও বোধহয় নেই। এমন মেয়ে খুব কমই আছে, বাবার জন্য যার মনে বিশেষ দুর্বলতা নেই। বাবা যেন তার এক ছোট্ট ছেলে। যাকে সে ভালোবাসে, আবার শাসনও করে। যত্ন নেয়, আবার বকুিনও দেয়।

আর বাবারা? মেয়ের জন্য জান-জীবন। মেয়ের সুখই যেন বাবার সুখ। বলছিলেন রাজশাহী জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) মো. ইফতেখায়ের আলম। তার মতো আরও অনেক পিতার মনেই হয়তো আছে এমন অনুভূতি।

তিনি গতকাল মঙ্গলবার মেয়ে পারিশা এর প্রতি ভালোবাসার এক হৃদয় ছোঁয়া অনুভূতির কথাগুলো লিখেছেন নিজ ফেসবুকে। আর হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের আয় রে আমার কাছে আয় মামণি এ হাতটা ভালো করে ধর এখনই দরাজ কণ্ঠের এই সুরেলা গানটির যে আকুলতা তা হয়তো প্রতিটি পিতা-কন্যাই উপলদ্ধি করেন। সংসারে পিতা-কন্যার এই যে অপরূপ ভালোবাসা, বন্ধন, তা যেন নির্মল নিঃস্বার্থ আর পবিত্র।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. ইফতেখায়ের আলমের ফেসবুকে লেখা আবেগময় কথাটি হুবুহু তুলে ধরা হলো:

সকল প্রশংসা মহান আল্লাহর। করোনা নমুনা টেস্টের নেগেটিভ রেজাল্ট পেলাম। পাঁচদিন আগে রাত ১১.০০ টার দিকে জানতে পারলাম আমার অফিস অর্ডালি করোনায় আক্রান্ত (পজিটিভ) হয়েছে। যদিও করোনার যেসব মূখ্য উপসর্গের কথা বলা হচ্ছে, সেগুলোর কোনটাই তার ছিল না। মনটা খারাপ হয়ে গেল।

হঠাৎ যেন বাধাগ্রস্ত হলো জীবনের ছন্দ, গতি ও স্বাভাবিকতা। যদিও আল্লাহর রহমতে শারীরিকভাবে সুস্থ রয়েছি। তারপরও চিন্তা-ভাবনা করে সিদ্ধান্ত নিলাম আমিও করোনার নমুনা টেস্ট করিয়ে নিবো। সেই রাতে আলাদা রুমে, কোয়ারেন্টাইনে চলে গেলাম।

আর আমার পাঁচ বছরের মেয়ে পারিশা ও মেয়ের মা থাকতে লাগলো অন্য রুমে। সেই সময় উপলব্ধি করলাম করোনায় জীবন কতটা ছন্দহীন, অসহায় ও নির্মম বাস্তবতার সম্মুখীন। সারাদিন অফিসের কাজের ব্যস্ততা শেষে বাসায় ফিরে সময়টা কাটে অতি আদরের মেয়েটার সাথে। কত কথা, কত বায়না, কত হাসি ও কত কান্না। এ যেন জীবনের এক হঠাৎ ছন্দপতন। মনে হল যেন আমি জেলখানায় কারাবন্দী হয়ে গেছি।

পরদিন সকাল বেলায় সবচেয়ে কষ্ট পেলাম যখন মায়ের হাত ধরে পারিশা দরজার ধারে দাঁড়িয়ে তার মাকে বলছিল, আমার পাপ্পার কি হয়েছে গো মা। আমার পাপ্পাকে কখন টাচ করতে পারবো মা। কথাটা শোনার পর বুকটা কষ্টে ভরে গেল এবং চোখের কোনে পানি চলে আসল।

অবুঝ শিশু তো আর বুঝে না করোনা নামক মহামারির উদ্ভুত সংকটময় পরিস্থিতিতে পৃথিবী আজ হারিয়েছে তার প্রশান্তি ও স্পন্দন। মানবিকতা আজ হাজারো প্রশ্নের সম্মুখীন। কত মানুষ হারাচ্ছে তার প্রিয়জন। আর জীবন অতিক্রান্ত হচ্ছে নির্মম বাস্তবতাকে মেনে নিয়ে। মেয়ের এমন আবেগময় কথা শোনার পর আরো মনে হচ্ছিল পৃথিবীতে আমার মত কত বাবা যে এ ধরনের কষ্টকর পরিস্থিতি পার করছেন।

প্রিয় সন্তানকে আদর করে বুকে জড়িয়ে ধরে নিতে পারছে না, সন্তানের সুস্থ থাকার কথা চিন্তা করে। আল্লাহ আমাদের সকলকে করোনা ভাইরাস মহামারি থেকে রক্ষা করুন এবং সকলের প্রতি মানবিকতা, সহমর্মিতা ও শুভ কামনা হোক নিরন্তর।

উপরে