দেশকে প্রযুক্তির সক্ষমতায় এগিয়ে দিয়েছে করোনা

প্রকাশিত: আগস্ট ২, ২০২০; সময়: ১২:২৭ অপরাহ্ণ |
দেশকে প্রযুক্তির সক্ষমতায় এগিয়ে দিয়েছে করোনা

পদ্মাটাইমস ডেস্ক : করোনাভাইরাস মোকাবিলায় প্রযুক্তিগত দিক থেকে ডিজিটাল বাংলাদেশের সুফল ভোগ করছেন সবাই। প্রযুক্তির মাধ্যমে করোনা রোগের ঝুঁকি নির্ণয়, নিয়ন্ত্রণ ও লোকেশন চিহ্নিত করা যাচ্ছে। এছাড়া তৈরি হয়েছে চ্যাটবট, অ্যাপস, ওয়েবসাইট ইত্যাদি। মহামারি থেকে সুরক্ষা পেতে দেশীয় দুটি প্রতিষ্ঠান ভেন্টিলেটরসহ অন্যান্য মেডিকেল সরঞ্জাম তৈরি করছে।

বিভিন্ন হ্যাকাথনের (যে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে কোনও সমস্যার সমাধান বা উদ্ভাবন বের করা হয়) মাধ্যমে করোনা মোকাবিলার প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছেন সংশ্লিষ্টরা। জীবাণু বিষয়ক তথ্যের জন্য ন্যাশনাল ডেটা অ্যানালিটিকস টাস্কফোর্স গঠিত হয়েছে। ইন্টারনেটের ব্যান্ডউইথের ব্যবহার বেড়েছে, একইসঙ্গে বৃদ্ধি পেয়েছে নির্দিষ্ট প্রযুক্তি পণ্যর বিক্রি।

দেশে ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন আইএসপিএবি’র সভাপতি আমিনুল হাকিম উল্লেখ করেন, করোনার সময় দেশে ব্যান্ডউইথের ব্যবহার বেড়েছে। তিনি বলেন, বর্তমানে ব্যবহার হচ্ছে ১ হাজার ৭৫০ জিবিপিএসের চেয়ে বেশি। তাদের দুটি সাবমেরিন ক্যাবল সংযোগ থাকার ফলে ব্যান্ডউইথের কোনও ঘাটতি পড়েনি। এখনও প্রচুর ব্যান্ডউইথ অব্যহৃত অবস্থায় রয়েছে। ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের গ্রাহক গত তিন মাসে ২৩ লাখেরও বেশি বেড়েছে। এখন মোট গ্রাহকের সংখ্যা এককোটির বেশি বলে মনে করেন তারা। তার দৃষ্টিতে, ‘সবই ডিজিটাল বাংলাদেশের ফলে সম্ভব হয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, করোনাভাইরাস বাংলাদেশকে প্রযুক্তিগত সক্ষমতার দিকে থেকে অন্তত কয়েক বছর এগিয়ে দিয়েছে! ই-কমার্স খাতের প্রবৃদ্ধি অভাবনীয় বলে উল্লেখ করেছেন তারা। তাদের মন্তব্য, গত ১০-১১ বছরে ই-কমার্স খাত যতটা এগিয়েছে তার চেয়ে দেড় গুণের বেশি এগিয়েছে সবশেষ পাঁচ মাসে।

অনলাইনে ডিজিটাল পণ্য ক্রয়-বিক্রয় বেড়েছে। মোবাইল বিক্রি হয়েছে প্রচুর। এখনও অনেক ক্রেতা সাবধানতা অবলম্বন করে মার্কেটে না গিয়ে অনলাইন মাধ্যম থেকে প্রয়োজনীয় পণ্য কিনছেন। চালু হয়েছে একাধিক অনলাইন শপ। অনেক ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ফিজিক্যাল স্টোর চালু করেছে। এগুলো তাদের পিকআপ পয়েন্ট হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে গ্রাহকদের কাছে। মূলত ঢাকা শহরে ক্রেতাদের কাছে দ্রুত পণ্য পৌঁছে দিতে এমন শপ ও সেবা চালু করেছে তথ্যপ্রযুক্তি পণ্য ব্যবসায়ীরা।

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, লকডাউনের সময় এবং এলাকাভিত্তিক লকডাউনে ই-কমার্স খাত বড় ভূমিকা রেখেছে। তার কথায়, ‘গত ১০-১১ বছর ধরে ই-কমার্সকে আমরা যতটা জনপ্রিয় করতে চেয়েছি, গত পাঁচ মাসে তার চেয়ে বেশি জনপ্রিয় করতে পেরেছি। প্রায় সব পর্যায়ের লোকজন এখন বুঝতে পেরেছেন ই-কমার্স কী।

প্রতিমন্ত্রীর দাবি, গত পাঁচ মাসে ই-কমার্সে ৫০ শতাংশ কেনাকাটা বেড়েছে। তিনি জানান, ই-কমার্সকে সারাদেশে ছড়িয়ে দিতে ফুড ফর নেশন, একশপের মতো উদ্যোগ গ্রহণ করেছে সরকার। করোনাকালে এসব মাধ্যমে অনেক মানুষের কাছে পৌঁছানো গেছে। কোরবানি ঈদকে সামনে রেখে সরকারিভাবে অনলাইনে ডিজিটাল হাটের আয়োজন করা হয়। ক্রেতার চাহিদা অনুযায়ী কোরবানি সম্পন্ন হওয়ার পর মাংস প্রক্রিয়াজাত করে হোম সার্ভিস দেওয়া হচ্ছে। সবই ডিজিটাল বাংলাদেশের সুফল।’

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগের প্রতিমন্ত্রী উল্লেখ করেন, এমন প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে পারলে ২০২৫ সালে ই-কমার্স বাজারের আকার হবে ১০ হাজার কোটি টাকার বেশি। ২০২৫ সালের মধ্যে এই খাতে আরও ৫ লাখ কর্মসংস্থান তৈরি হবে বলে আশাবাদী তিনি।

জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে ডিজিটাল বাংলাদেশের সুফল ভোগ করছেন দেশের মানুষ। তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে নাগরিকদের সর্বোচ্চ সেবা দিতে চেষ্টা করে যাচ্ছি আমরা। কলসেন্টারে ফোন করে, ওয়েবসাইটে ঢুকে ও অ্যাপসের মাধ্যমের করোনাভাইরাস সম্পর্কে জানা যাচ্ছে ও জানানো যাচ্ছে।

তিনি বলেন, করোনা উপসর্গ থাকলে ফোন করে পরীক্ষার জন্য তথ্য জানানো যাচ্ছে। ঝুঁকি এড়াতে অনলাইনে পরীক্ষার সিরিয়াল নেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। ওটিটি (ওভার দ্য টপ) সেবা অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় মেসেঞ্জার, ভাইবার, হোয়াটসঅ্যাপে তথ্যর জন্য যোগাযোগ করা যাচ্ছে। বিভিন্ন প্রতিযোগিতা (হ্যাকাথন) আয়োজন করে করোনাকালে মানুষকে কীভাবে আরও সেবা দেওয়া যায় সেই উপায় বের করা হয়েছে। আক্রান্ত ব্যক্তিরা কোন এলাকায় আছেন, কোন কোন এলাকা ঝুঁকিপূর্ণ সেসব হ্যাকাথনের মাধ্যমে চিহ্নিত করা হয়েছে। কেউ সেই এলাকা দিয়ে গেলে বা সেখানে থাকলে করোনা ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা জানিয়ে মোবাইল ফোনে মেসেজ পাঠানো হচ্ছে। সূত্র- বাংলা ট্রিবিউন

পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে