অভিশপ্ত এই টেলিফোনের মাধ্যমেই হত্যা করা হয় লাখো মানুষকে
পদ্মাটাইমস ডেস্ক : ইতিহাসে অ্যাডলফ হিটলার এক ঘৃণিত নাম। তার কারণেই পৃথিবীর ইতিহাসে ঘটেছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। ইহুদি বিদ্বেষী হিটলার হত্যা করেছিল প্রায় ৬০ লাখ ইহুদী। যা ইতিহাসে হলোকাস্ট নামে পরিচিত। এ হলোকাস্টে ৬০ লাখের উপর ইহুদি হত্যা করা হয়েছে বর্বরচিতভাবে, যা থেকে অবোধ শিশু ও বৃদ্ধরাও রক্ষা পায়নি। তার খুনের বর্ণনা পড়লে এখনো ভয়ে বুক কেঁপে উঠে অনেকের।
ইতিহাসের তথ্যানুসারে, হিটলারের টেলিফোনটি অভিশপ্ত। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহতা, লক্ষাধিক মানুষের মৃত্যু, গুপ্তহত্যা সব কিছুর গোড়াতেই রয়েছে ষড়যন্ত্রকারী এক টেলিফোন। এমনটাই দাবি করছেন ইতিহাসবিদদের একাংশ। ঐতিহাসিকদের মতে, এই টেলিফোনের মাধ্যমেই নাকি একের পর এক নিষ্ঠুরতম সব নির্দেশ দিয়েছিল অ্যাডলফ হিটলার। এ কারণে অনেকেই হিটলারের এই ফোনকে অভিশপ্ত বলে থাকেন। চলুন তবে জেনে নেয়া যাক, কীভাবে হিটলারের এই দূরাভাষ যন্ত্র দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মতো বিভৎসতম এক মহা রণক্ষেত্রে অংশ নিয়েছিল?
১৯৩৯ সাল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সূচনালগ্ন। তখন জার্মানি জুড়ে চলছিল অ্যাডলফ হিটলারের একনায়কতন্ত্র। সেসময় হিটলার লাল রঙের এক টেলিফোন ব্যবহার করত। দেখতে খুব আহামরি তেমন কিছু নয়। তবে বহু অন্ধকার ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে রয়েছে এই সাদামাটা ফোনটি। শুরুতে টেলিফোনটি কালো রঙের ছিল। পরে এতে লাল রঙের প্রলেপ দেয়ার পাশাপাশি পেছনের দিকে খোদাই করে লেখা হয় হিটলারের নাম, আর তার সঙ্গেই বসানো হয় নাৎসি বাহিনীর প্রতীক চিহ্ন।
ফোনটি বানিয়েছিল সেসময়ের স্বনামধন্য সিমেন্স কোম্পানি। যতটুকু জানা যায়, জার্মানির নাৎসিদের সমন্বিত বাহিনী ওয়েহারমাচ থেকে এই টেলিফোনটি হিটলারকে উপহার হিসেবে দেয়া হয়। টেলিফোনটি হিটলার স্বয়ং ব্যবহার করত। যেখানেই যেত, সেখানেই সে এই ফোনটি সঙ্গে নিয়ে যেত। এই ফোনের মাধ্যমেই সে যাবতীয় নির্দেশ প্রদান করত। এই টেলিফোনটিকে বলা হচ্ছে ‘ডিভাইস অব ডেস্ট্রাকশন’ বা ‘ধ্বংসের যন্ত্র’।
ইতিহাসবিদদের একাংশের মতে, যুদ্ধকালীন হিটলার লাল রংয়ের একটি ফোনের মাধ্যমে বহু মানুষের মৃত্যু পরোয়ানা জারি করেছিল। কীভাবে পাওয়া গেল হিটলারের অভিশপ্ত ফোনটি? বিবিসি’র প্রকাশিত এক প্রতিবেদন অনুসারে, ১৯৪৫ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ জয়ের পর সোভিয়েত রাশিয়ার সৈন্যরা বার্লিনে হিটলারের ফুয়েরার বাঙ্কার থেকে টেলিফোনটি উদ্ধার করে। যুদ্ধে জার্মানির আত্মসমর্পণের পর টেলিফোনটি মিত্রবাহিনীর একজন ব্রিটিশ সেনা কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার স্যার র্যালফ রেইনারকে উপহার দিয়েছিল রাশিয়া।
ঐতিহাসিকদের তথ্য মতে, ১৯৪৫ সালের জানুয়ারি মাস থেকে এই বাঙ্কারেই ছিল সস্ত্রীক হিটলার। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়া পর্যন্ত পরবর্তী সময়ে এই জায়গা হয়ে উঠেছিল হিটলারের প্রধান কর্মক্ষেত্র। বিশেষজ্ঞদের একাংশের দাবি, এখান থেকেই টেলিফোনের মাধ্যমে অসংখ্য ইহুদীর হত্যার নির্দেশ দিয়েছিল হিটলার। যুদ্ধের নানা পরিকল্পনা সাজানো থেকে শুরু করে সে নিজের শ্যালককে হত্যা করার নির্দেশও দেয় এই টেলিফোনের মাধ্যমে।
কালের আবর্তনে বর্তমানে সেই টেলিফোনের রং চটে গিয়েছে। এখানে সেখানে কালো অংশ বেরিয়ে এসেছে। সম্প্রতি অভিশপ্ত এই টেলিফোনটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিলামে উঠতে চলেছে। ফোনটি নিলাম করছে মেরিল্যান্ডের অকশন হাউজ। চেসাপেক শহরের আলেকজান্ডার হিস্টোরিক্যাল অকশনস-এর মালিক বিল পানাগোপুলোস সাংবাদিকদের জানান, নাজি বাহিনীর স্বস্তিকা চিহ্ন এবং হিটলারে নাম খোদাই করা লাল রংয়ের এই টেলিফোন সেটটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মানির আত্মসমর্পণের পরে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের সেনারা ব্রিটিশ কর্মকর্তা স্যার র্যালফ রেনারকে স্মারক হিসেবে উপহার দিয়েছিল।
রেনারের ছেলে এবার সেই ফোনটিকে নিলামে তুলতে চলেছেন। নিলাম কোম্পানি থেকে বলা হয়, জার্মানির আত্মসমর্পনের পর রাশিয়ানরা র্যালফ রেনারকে ওই বাঙ্কারে যাওয়ার সুযোগ দেন। তারা হিটলারের স্ত্রী ইভা ব্রাউনের ব্যবহৃত কালো রংয়ের ফোনটি রেনারের হাতে তুলে দেয়ার প্রস্তাব করে। তবে ব্রিটিশ কর্মকর্তার জবাব ছিল যে, তার লাল রং পছন্দ। তাই তিনি হিটলারের ফোনটিই নিতে চান।
যুক্তরাষ্ট্রের মেরিল্যান্ডের ‘আলেকজান্ডার হিস্টোরিক্যাল অকশন্স’ এই ব্যাকেলাইট ফোনটিকে ‘হিটলারের মোবাইল যন্ত্র যা ধ্বংস বয়ে আনতো’ বলে মন্তব্য করছে। শুধু তাই নয়, এটাই সর্বকালের সর্ববৃহৎ অস্ত্র যা গোটা বিশ্বকে এক দারুণ পরিণতির দিকে নিয়ে যাচ্ছিল বলে তারা অভিমত ব্যক্ত করেছেন। এই অকশন হাউজ থেকে জানানো হয়েছে, ফোনটির দাম এক লাখ মার্কিন ডলার। তারা আশা করছে, নিলামে হিটলারের এই লাল টেলিফোনটির দর অন্তত দুই থেকে তিন লাখ ডলার পর্যন্ত উঠতে পারে।
তবে রেনারের ছেলে ও নিলামকারী প্রতিষ্ঠান মনে করে, এটি জাদুঘরে ঠাঁই পেলে ভালো হবে। এর মাধ্যমে হিটলারের বর্বরতা সম্পর্কে মানুষ আরো জানতে পারবে। সর্বশেষ যে তথ্য পাওয়া গেছে তাতে জানা যায়, ফোনটি যতো দামে বিক্রি হতে পারে বলে ধারণা করা হয়েছিলো শেষ পর্যন্ত তার চেয়েও কম দামে বিক্রি হয়েছে।
এক ক্রেতা সরাসরি নিলামে অংশ না নিয়ে ফোনে মাধ্যমেই যোগাযোগ করে নিলামে অংশ নিয়েছিলেন। নিলামে তিনি ২ লাখ ৪৩ হাজার মার্কিন ডলারে টেলিফোনটি কিনে নেন। বাংলাদেশি টাকায় এর পরিমান প্রায় দুই কোটি টাকা। তবে যিনি এই টেলিফোনটি ক্রয় করেছেন তার পরিচয় প্রকাশ করা হয়নি।