ফজলে রাব্বী অনূদিত ল্যাংস্টন হিউজেসের কবিতা
আমিও
আমিও আমেরিকা নামে গীত গাই ।
আমি এক কালো ভাই,
কোম্পানি আসলে পরে,
তারা আমায় পাঠায় রান্নাঘরে।
কিন্তু আমি উল্লাসে হাসি
খাই খুব বেশি,
আর শক্ত করি আমার পেশি।
আগামীবারে,
আবার কোম্পানি আসলে,
হাজির হব খাবার টেবিলে,
কেউ সাহসও পাবে না বলতে আমারে,
“যা গিয়া খাবার খা রান্নাঘরে।“
এছাড়াও
অবাক হয়ে দেখবে তারা,
আমি কত সুন্দর।
আর লজ্জায় হবে বাক্যহারা।
কেননা, আমিও তো আমেরিকা।
নিগ্রো
আমি এক নিগ্রো।
নিশীথ যেমন কালো, আমি কালো তেমনতর,
আমার আফ্রিকার গহন কালো যেমনতর।
আমি ছিলাম এক গোলাম:
সিজার আমারে দরজার সিঁড়ি সাফ করতে বলেছিল,
আমি ওয়াশিংটনের সব বুটজুতা পালিশ করেছিলাম!
আমি ছিলাম এক শ্রমিক-মেহনতকারী:
আমার হাতে গড়ে উঠেছে সুউচ্চ পিরামিড।
পশমতুল্য হালকা ইমারতের আমিই নির্মাণকারী ।
আমি ছিলাম এক গায়ক
আফ্রিকা হতে জর্জিয়ার সমস্ত পথে
ভরে তুলেছিলাম আমার মর্সিয়া সংগীতে,
আমি র্যাগটাইমে উঠেছিলাম মেতে।
আমি ছিলাম এক সহজ শিকার:
বেলজিয়ানরা কঙ্গোয় কেটে নিত আমার হাত,
মিসিসিপিতে এখনো ফাঁসিতে ঝুলায় দিনরাত।
আমি এক নিগ্রো ।
নিশীথ যেমন কালো, আমি কালো তেমনতর,
আমার আফ্রিকার গহন কালো যেমনতর।
ভিখারী বালক
কী আছে এই ভিখারী বালকের ভেতরে?
যা আমি পাই না দেখতে, অনুভব করতে, কিংবা শুনতে ,
যা আমি জানতেও পারি না, পারি না বুঝতে।
এবং তা এখনও আমারে তাড়া করে।
সে কি সূর্যের নিচের ছায়া ছাড়া আর কিছু-
এক কুৎসিত, মেটে, কাদায় গড়া এক সামান্য জীবন?
কিন্তু সে বাঁশিতে বন্য সুর তোলে কি অসাধারন!
যেন দুর্ভাগ্য তাকে কেটে ফালাফালা করেই নি।
অনুবাদকের কথাঃ ল্যাংস্টন হিউজেস (১৯০২- ১৯৬৭) বিশশতকের এমন একজন আফ্রিকান-আমেরিকান কবি, যিনি সাহিত্যিক হিসেবে বর্ণবাদের বিরুদ্ধে ছিলেন সোচ্চার। যাঁর কবিতায় উঠে এসেছে আফ্রিকা থেকে পাচার হয়ে আসা কালো মানুষদের উপর করা অত্যাচারের ইতিহাস, সমসাময়িককালে তাদের উপর হওয়া নির্যাতনের কথা, তাদের প্রতিদিনের জীবনের গাথা। একুশ শতকেও বর্ণবাদ দূর হয় নি, তাই, হিউজেসের কবিতার প্রাসঙ্গিকতা ফুরায় নি আজও।
হিউজেস কবিতা লিখেছেন প্রচুর। এখানে আমি তাঁর বিশাল সম্ভার থেকে তিনটি কবিতা বাছাই করেছি, যা আমেরিকায় কালো মানুষদের জীবন ফুটিয়ে তুলেছে। তিনটি কবিতাই নেওয়া হয়েছে ১৯৯৫ সনে ভিন্টেজ বুকস প্রকাশনা থেকে প্রকাশিত দ্যা কালেক্টেড পোয়েমস অব ল্যাংস্টন হিউজেস থেকে।
-ফজলে রাব্বী