মর্ত্য ছেড়ে কাব্যলোকে অলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত
পদ্মাটাইমস ডেস্ক : গত শতকের পঞ্চাশের দশকে বাংলা কবিতাকে রবীন্দ্র কাব্যধারা থেকে ভিন্ন সুরে আন্দোলিত করার প্রয়াস যারা নিয়েছিলেন, তাদের অগ্রপথিক পশ্চিমবঙ্গের কবি অলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত চলে গেলেন অন্য ভুবনে।
চার দশকের বেশি সময় ধরে জার্মানিতে বসবাস করছিলেন অলোকরঞ্জন। মঙ্গলবার রাতে হাইডেলবার্গে নিজের বাড়িতেই তার মৃত্যু হয় বলে স্ত্রী এলিজাবেথের বরাতে জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো। কবির বয়স হয়েছিল ৮৭ বছর। দীর্ঘদিন ধরেই বার্ধক্যজনিত নানা জটিলতায় ভুগছিলেন তিনি।
১৯৩৩ সালের ৬ অক্টোবর কলকাতায় অলোকরঞ্জন দাশগুপ্তের জন্ম। শান্তিনিকেতনে পড়া শেষ করে সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ থেকে স্নাতক ডিগ্রি নেন, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে করেন স্নাতকোত্তর। পরে ভারতীয় কবিতার ওপরে করেন পিএইচডি। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে এক যুগের বেশি সময় তিনি তুলনামূলক সাহিত্য পড়িয়েছেন। সেই সময় জার্মান সাহিত্যের প্রতি তার আগ্রহ তৈরি হয় এবং অনুবাদ শুরু করেন।
এক পর্যায়ে হামবোল্ড ফাউন্ডেশনের ফেলোশিপ নিয়ে ১৯৭১ সালে হাইডেলবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে যান অলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত। সেখানে অধ্যাপনা শুরু করে জার্মানিতেই স্থায়ী হয়ে যান। বাংলা কবিতায় স্বতন্ত্র ভাষাভঙ্গির জন্য অলোকরঞ্জন নিজেকে চিনিয়েছিলেন সেই তারুণ্যের দিনগুলোতেই। কবি শঙ্খ ঘোষের সঙ্গে ছিল তার গভীর বন্ধুত্ব।
অনেক পরে, লিটল ম্যাগাজিন আন্দোলন যখন বাংলা কবিতাকে একুশ শতকের দুয়ারে নিয়ে এল, তার সঙ্গেও নিজেকে জড়িয়ে নিয়েছিলেন এই কবি। কলকাতার তরুণদের সাহিত্য আন্দোলনের সঙ্গে তার যোগাযোগ ছিল সব সময়।
অলোকরঞ্জনের লেখা ২০টির বেশি কাব্যগ্রন্থ এ পর্যন্ত প্রকাশিত হয়েছে, কাব্যভাবনা নিয়ে লিখেছেন প্রবন্ধও। বাংলা এবং সাঁওতালী কবিতা ও নাটক জার্মান ও ইংরেজিতে অনুবাদ করেছেন; জার্মান ও ফরাসি সাহিত্য অনুবাদ করেছেন বাংলায়।
বাংলা ও জার্মান সাহিত্যের মেলবন্ধন ঘটানোর এই চেষ্টার স্বীকৃতি হিসেবে তাকে গ্যেটে পুরস্কারে ভূষিত করেছে জার্মান সরকার। ১৯৯২ সালে মরমী কারাত কাব্যগ্রন্থের জন্য তিনি পেয়েছেন সাহিত্য আকাদেমি পুরস্কার। এছাড়া রবীন্দ্র পুরস্কার ও আনন্দ পুরস্কারও তিনি পেয়েছেন।
কবি শহীদ কাদরীর মৃত্যুর খবরে ব্যথিত অলোকরঞ্জন ২০১৬ সালে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে এক সাক্ষাৎকারে এলিয়ট থেকে উদ্ধৃত করে বলেছিলেন, “প্রত্যেক কবি, প্রত্যেক মানুষ থেকে বয়সে বিলম্বিত, অনেক বড়। প্রত্যেক কবির ক্ষেত্রে এই কথাটা বলা যায় যে, তাদের এই মৃত্যু আমাদের বিবেকের সংবিতের পক্ষে খুব প্রয়োজনীয় একটা ঘটনা।”
আর নিজের শ্রেষ্ঠ কবিতার উৎসর্গপত্রে কবি লিখেছিলেন- ‘ভগবানের গুপ্তচর মৃত্যু এসে বাঁধুক ঘর/ ছন্দে, আমি কবিতা ছাড়ব না’।