হেমাঙ্গি

প্রকাশিত: নভেম্বর ২৫, ২০২০; সময়: ৬:৫২ অপরাহ্ণ |
হেমাঙ্গি

হেমন্তের হেমাঙ্গি সূর্যোদয়ে
সোনাঝরা রোধ নরম চাদর বিছায়ে
বাংলার সমস্ত গ্রাম মুড়িয়ে দিয়েছে
দিগদিগন্ত নতুন প্রভাতের
মৃদু – উষ্ণ অনুরাগে জাগে
অগ্রাহয়নের এই শস্যভরা খেতে
সোনালি ধানের আভা ছড়িয়ে পড়েছে
কৃষকের ঘরে ধান কাটার মহা আয়োজন শুরু।

এমন শুভদিনে
আজকের আনন্দ – উৎসবে
আঙিনায় মোরগ চরে
ডাকে বুক উঁচু করে
কবুতর উড়ে যায়
নিম ডালে বসে
কখনো বা গৃহচালে নেচে নেচে
মনোরম গান ধরে একটানা
অবিশ্রাম মন উজাড় করে
হংসরাজি সারি সারি পুকুরের নীল জলে
ভেসে ভেসে সারাদিন কেটে দেয় নির্বিঘ্নে
ঘরে ফেরার মন নেই এখন — এই ভেবে
গরু – মহিষ – ছাগল – ভেড়া
মাঠে মাঠে সারাবেলা
সবুজ – স্বস্তির নিঃশ্বাসে পরিতৃপ্ত
সমস্ত দিনের শেষে
গাঢ় সন্ধ্যায় ফিরে আসে তারা
সদাশয় গেরস্তের নিরাপদ আশ্রমে
কিশোর-কিশোরী খেলে খোলা মাঠে
তাস- দাবা- কবাডি -ক্যারাম- ঘুড়ি- নাটাই হাতে
জারিগান – সারিগান রাখালের বাঁশি
আহ্লাদী রোদের ছোঁয়ায় ভাসে রাশি রাশি
দুধ – কলা – পায়েস – পোলাও আয়োজন যত
অতিথি – স্বজন ভোজে গুণকীর্তনসহ।

এইভাবে সুখৈশ্বর্যে
সকাল – সন্ধ্যা হাসি – গান আর
অফুরন্ত আনন্দের ফোয়ারা ঝরে
গতরাতে নবান্ন – উৎসব শেষ হয়ে গেছে
কোলাহল থেমে গেলে পরে
নিবিড় আঁধারে স্বামী – বধু – শিশু এক শয্যায়
গভীর সুখনিদ্রায় নিমগ্ন।

ঘুম থেকে জেগে
প্রভাতি ডাহুক ডাকে
ডাহুকীরো ঘুম ভেঙে যায়
প্রাণের নীরব স্পন্দনে
গ্রামের এক কোণায়
আম-কাঁঠালের বনে
আঁকাবাঁকা রৌদ্রছায়ায়
এক বয়স্ক ভাবুক
স্মৃতির সুখানুভূতি নিয়ে
পাখির কলকাকলি আর
নরম রোদের স্বাদ
সমস্ত শরীরে প্রাণভরে
উপভোগ করে আর ভাবে :

কতদিন সূর্য ওঠা – পড়ার মনোরম দৃশ্য
কিংবা আকাশে সাদা মেঘের ভেলায় ভেসে
রথে বসে লুকোচুরি খেলা
নদীর শুকনো বালুচরে হাওয়ায় দোল খাওয়া
শুভ্র কাশফুলে অজস্র বন্যা
চারপাশে ধান – গম – ভুট্টা খেত আর
উড়ন্ত পাখির ক্রীড়া অফুরন্ত দেখেছি !

দূরে ফণীমনসার ঝোপে
থরে থরে কাঁটাভরা নীল ফণা
মাথা উঁচু করে দংশনোদ্যত
আমার পেছনে ফেরার পথ নেই
সামনে অথৈ সাগর।

 

* কবি আলী রেজা মুহম্মদ আব্দুল মজিদ : পরিচালক, বরেন্দ্র রিসার্চ মিউজিয়াম, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।

পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে