নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে যে দেশ শীর্ষে
পদ্মাটাইমস ডেস্ক : উচ্চ বিদ্যালয় পড়ুয়া মেরিল উমোতোনি সেক্রেটারি না হয়ে তার স্কুলের ডিবেট ক্লাবের প্রেসিডেন্ট হতে চায়। আর চাইবেই না কেন! সেতো এমন এক দেশের নাগরিক- যেখানে দৃশ্যত নারীর জন্য কোনো বাঁধা বা বৈষম্য নেই। অন্তত রাজনীতিতে এমন দৃশ্য খুবই স্পষ্ট।
তার দেশের সংসদে অর্ধেকের বেশি আসনে আছেন নারী আইনপ্রণেতারা। পৃথিবীর অন্য কোনো রাষ্ট্রে নারীর এমন বিশাল সংখ্যাগরিষ্ঠ প্রতিনিধিত্ব নেই।
আবার লিঙ্গ বৈষম্য ভিত্তিক বৈশ্বিক র্যাংকিং তালিকাতেও তার দেশ কমিয়েছে ব্যবধান। মেরিলের মাতৃভূমি এ তালিকায় অধিকার করে ষষ্ঠস্থান, অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র আছে ২৮তম স্থানে।
গণহত্যা যেভাবে নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে ভূমিকা রাখে:
রুয়ান্ডার কথা উঠলেই অধিকাংশ মানুষের মনে ভেসে ওঠে ১৯৯৪ সালের সেই ১০০ দিনের গণহত্যার ঘটনা। যার ফলে সম্পূর্ণ নৈরাজ্যে ঢাকা পড়ে রুয়ান্ডার সমাজ। ৮ লাখ থেকে ১০ লাখ নাগরিক সে গণহত্যায় প্রাণ হারায়। তারপর গণহত্যায় অংশগ্রহণকারীদের অনেকেই গ্রেপ্তার হয়েছে এবং অনেকে দেশ্ ছেড়ে পালিয়েও গেছে। রাষ্ট্রীয় জরিপের রেকর্ডে দেখা যায়, গণহত্যার পর রুয়ান্ডার মোট সাড়ে ৫ থেকে ৬ কোটি জনসংখ্যার মধ্যে ৬০ থেকে ৭০ শতাংশই ছিল নারী।
তাদের বেশিরভাগই ছিলেন প্রাথমিক শিক্ষার সুযোগ বঞ্চিত, ফলে মানসম্মত জীবিকা অর্জন বা কর্মজীবন শুরুর প্রত্যাশাও তাদের পক্ষে করা সম্ভব ছিল না। গণহত্যার আগে রুয়ান্ডার কোনো নারী জমির মালিক হয়েছেন বা বাড়ির বাইরে চাকরি করছেন এমন ঘটনাও ছিল অতি-বিরল।
তবে গণহত্যার পর জনমিতিতে আসা পরিবর্তন সেসব বদলে দেয়। জোরদার হয় ‘রয়েস দ্য রিভেটার’ আন্দোলন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ যেভাবে কর্মক্ষেত্রে মার্কিন নারীদের অংশগ্রহণের পথ প্রশস্ত করেছিল, ঠিক তেমনি এ আন্দোলন রুয়ান্ডান নারীর জন্য কর্মক্ষেত্র উন্মুক্ত করে।
তবে লিঙ্গ সমতার আহ্বান হাজার হাজার নারীর মাধ্যমে আসেনি, বরং সেটা তুলেছিলেন প্রেসিডেন্ট পল কাগামে। সেনাবাহিনীকে নেতৃত্ব দিয়ে তিনিই গণহত্যার অবসান করেন। কাগামে অনুধাবন করেন, রুয়ান্ডা চরম বিপর্যয় আর ভঙ্গুর অবস্থায়। শুধুমাত্র পুরুষের শ্রমে জাতি পুনর্গঠন করা সম্ভব নয়। তাই তিনি ২০০৩ সালে যে নতুন সংবিধান প্রণয়ন করলেন, সেখানে নারীর জন্য সংরক্ষিত রাখা হলো ৩০ শতাংশ আসন।
একইসঙ্গে তার সরকার নারি শিক্ষা বিস্তারের ঘোষণা দেয়। দেয় নারীকে রাজনীতি ও প্রশাসনে নারীকে নেতৃত্বের স্থানে তুলে আনার ঘোষণা। কিছু মন্ত্রণাল্য এবং আঞ্চলিক পুলিশ প্রধানও করা হয় নারীদের। কাগামে এদিক থেকে শুধু পশ্চিমাদের অনুসরণ ন্য বরং একলাফে তাদের চাইতে এগিয়ে যাওয়ার উদ্যোগ নিয়েছিলেন।
এরপর কাগামের নীতি অনুসরণ করে ন্যুন্তম মাত্রার বাইরেও নারী ক্ষমতায়নের বলয় বাড়তে থাকে রুয়ান্ডার সরকারি পর্যায়ে। ২০০৩ সালের নির্বাচনে পার্লামেন্টের ৪৮ শতাংশ আসনে জয় পান নারীরা। তারপরের নির্বাচনে যা উনিয় হয় ৬৪ শতাংশ। রুয়ান্ডার রাজনৈতিক পরিমণ্ডলকে এখন লিঙ্গ সমতা ও বৈষম্যহীনতার আদর্শ মডেল বলা হয়।