৮ বছর পূর্ণ না হওয়ায় ৫৪ শিশু শিক্ষার্থীর স্বপ্নভঙ্গ
নিজস্ব প্রতিবেদক, নাটোর : ৮ বছর পুর্ন না হওয়ায় লটারির ফলাফলে নির্বাচিত হয়েও তৃতীয় শ্রেণীতে ভর্তি হতে পারেনি ৫৪ শিশু শিক্ষার্থী। ফলে শিক্ষা জীবনের শুরুতেই কোমলমতি এসব শিশু শিক্ষার্থীর স্বপ্ন ভঙ্গের শংকায় পড়েছে।
নাটোরের সরকারী বালক উচ্চ এবং সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ভর্তিচ্ছুক এই ৫৪ শিক্ষার্থীকে ভর্তি নেয়নি স্কুল কর্তৃপক্ষ। তবে বিষয়টি সুরাহার জন্য নির্দেশনা দিতে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে লিখিত আবেদন করেছেন স্কুল দুটির কর্তৃপক্ষ। নাটোরের জেলা প্রশসকও বিষয়টি সুরাহার চেষ্টা করছেন।
সংশ্লিষ্ট স্কুল ও ভুক্তভোগী পরিবার সুত্রে জানা যায়, নাটোর জেলা শহরের মধ্যে অবস্থিত দু’টি সরকারী স্কুল সরকারী বালক ও সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণীতে ভাির্তর জন্য লটারিতে ১২০ জন শিক্ষার্থীকে বাছাই করা হয়। অনলাইনে আবেদন করার পর ঢাকা সহ সারা দেশের অন্য স্কুলগুলোর মত কেন্দ্রিয়ভাবে নাটোরের এই দুটি সরকারী স্কুলের ফলাফল ঘোষনা করা হয়।
১৫ ডিসেম্বর ফলাফল ঘোষনার পর নির্বাচিতদের অভিভাবকরা শনি ও রোববার নাটোর সরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে ভর্তি ফরম উত্তোলন করেন। এই ভর্তি ফরম উত্তেলন করতে গিয়ে ২৮ অভিভাবক জানতে পারেন তাদের সন্তানদের বয়স ৮ বছর পুর্ন না হওয়ায় তারা ভর্তি হতে পারবেনা।
অভিভাবকরা স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছে বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষক আব্দুল মতিন শর্ত অনুযায়ী বয়স পুর্ন না হওয়ায় তাদের ভর্তির সুযোগ নেই। অভিভাবকদের কেউ কেউ কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন।
তারা জানান, তাদের অনেকের সন্তানের বয়স আট বছর থেকে একদিন, দুইদিন বা এক সপ্তাহ মাত্র কম আছে। তবুও তাদের ভর্তি নেয়া হচ্ছে না। অভিভাবকরা আক্ষেপের সুরে বলেন,ভর্তি যদি না নেয়া হয় তাহলে তাদের নির্বাচিত করা হলো কেন? লটারির সময় কম বয়সীদের বাদ দিলেই কারো কোনো আপত্তি ছিল না।
নির্বাচিত শিশুদের ‘অভিনন্দন আপনি নির্বাচিত এবং বিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন লিখে ম্যাসেজ পাঠিয়ে অভিনন্দন জানানো হয়েছে। কিন্তু এখন ভর্তি না নিলে তারা মানসিক বিপর্যয়ে পড়বে।
এদিকে এই বিষয়টি জানার পর ১৭ অভিভাবক তাদের সন্তানদের শিক্ষা জীবনের শুরুতেই স্বপ্ন ভঙ্গের আশংকা থেকে বাঁচানোর জন্য নাটোর জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিতভাবে আবেদন জানান। তারা সারাদেশের প্রতিটি বিদ্যালয়েই এই সমস্যা রয়েছে জানিয়ে তা সমাধানের জন্য দাবি জানান।
এব্যাপারে সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল মতিন জানান, সরকারের দেয়া নীতিমালায় তাদের বয়স আট বছর না হওয়ায় এসব শিক্ষার্থীদের ভর্তি নেয়ার কোনো সুযোগ নেই। তবে বিষয়টি সুরাহার জন্য নির্দেশনা দিতে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে লিখিত আবেদন করা হয়েছে।
অপরদিকে নাটোর সরকারী বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. হারুন অর রশীদ জানান, আগামী ২২ ও ২৩ ডিসেম্বর তার বিদ্যালয়ে নির্বাচিতদের ভর্তি ফরম সংগ্রহ করে পরের দিন ভর্তির আহ্বান জানিয়ে যে নোটিশ প্রকাশ দেওয়া হয়েছে। নোটিশে পরিষ্কার ভাবে লিখে দিয়েছেন আট বছরের নিচে কাউকে ভর্তি করা হবে না। এই স্কুলের নির্বাচিতের তালিকায়ও আট বছর পূর্ণ না হওয়া ২৬ জন শিশু শিক্ষার্থী রয়েছে।
নাটোর জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো. আখতার হোসেন জানান, জেলা প্রশাসকের সাথে এবিষয়ে কথা বলবেন।
জেলা প্রশাসক মো. শামীম আহমেদ বলেন, লটারির মাধ্যমে তৃতীয় শ্রেণিতে ভর্তির জন্য প্রকাশিত ফলাফলে নির্বাচিত এসব শিশু শিক্ষার্থীদের জন্য বিষয়টি বেদনাদায়ক। তারা নির্বাচিত হওয়ার খবরে যেমন উচ্ছ্বসিত হয়েছিল, এখন ততটাই হতাশা গ্রস্থ হয়ে পড়েছে। বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে যত দ্রত সম্ভব কথা বলে সমস্যার সমাধান করার চেষ্টা করবেন তিনি।