বীজ প্রত্যয়ন অধিদপ্তর ও জাতীয় বীজ বোর্ড হচ্ছে
পদ্মাটাইমস ডেস্ক : দেশের কৃষি খাতের প্রভূত উন্নয়ন হলেও ফসলের বীজের মান নিয়ন্ত্রণে কোনো কর্তৃপক্ষ নেই। ফলে অনেক সময় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে কৃষকদের প্রতারিত হতে হচ্ছে। চাষাবাদ করে কাক্সিক্ষত ফসল না পেয়ে কৃষকদের পথে বসতে হচ্ছে। এছাড়া বিদেশি বিভিন্ন ফসলের চাষাবাদে কৃষকরা ঝুঁকছে। আবার বীজ সম্পর্কেও কৃষকদের কোনো ধারণা থাকছে না। ফলে অনিরাপদ গন্তব্যে হাঁটছে কৃষক। কৃষকের পথচলা নিশ্চিতে এবার গঠন করা হচ্ছে বীজ কর্তৃপক্ষ। জাতীয় বীজ বোর্ডও গঠন করা হবে। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।
সূত্র জানায়, দীর্ঘ সময় পর দেশে ২০১৮ সালে বীজ আইন প্রণয়ন করে সরকার। কিন্তু আইনে বীজের মান নিয়ন্ত্রণ ও উন্নয়নের জন্য কর্তৃপক্ষ গঠনের বিধান রাখা হয়নি। এ কারণে আইনটি সংশোধন এবং বীজ প্রত্যয়ন অধিদপ্তর গঠন করা হচ্ছে। এ আইনের খসড়ায় নতুন ধারা যুক্ত করে বলা হয়েছে-নিবন্ধন ছাড়া কেউ বীজের ডিলার হিসাবে নিয়োগ পাবে না। বীজের ডিলার বা তার প্রতিনিধি কোনো বীজ ব্যবসায় সম্পৃক্ত হতে পারবে না। বীজ আমদানি অথবা রপ্তানি করতে পারবে না।
বিএডিসির সদস্য ও পরিচালক (বীজ) মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আইন সংশোধন করে বীজ প্রত্যয়ন অধিদপ্তর গঠন করা হবে। এতে বীজের মান নিয়ন্ত্রণে শক্তিশালী একটি কর্তৃপক্ষ হবে। বীজ নিয়ে দুশ্চিন্তা দূর হবে। কৃষকরা লাভবান হবেন। দেশ উপকৃত হবে। আইনের সংশোধনীতে সরল বিশ্বাসে কৃতকর্মের জন্য সরকার অথবা সরকারি কর্মকর্তাদের যে দায়মুক্তি দেওয়া হয়েছিল তা সংশোধন করে নতুন ধারা যুক্ত করা হচ্ছে। খসড়ার নতুন ধারায় বলা হয়েছে-‘তবে কাউকে অপ্রয়োজনীয় ক্ষতি, হয়রানি বা ঝামেলা সৃষ্টির জন্য কোনো কাজ করা হলে সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তা দায়ী থাকবেন।’ অর্থাৎ সরকারি কর্মকর্তাদেরও ঢালাওভাবে যা ইচ্ছা তা করার সুযোগ আর থাকছে না। অনেকটা জবাবদিহিতার আওতায় চলে আসবে।
বীজ আইনের চূড়ান্ত সংশোধনীতে বলা হয়েছে-‘বীজ প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ বীজ উৎপাদন, প্রক্রিয়াকরণ ও মান নিয়ন্ত্রণে পরামর্শ দেবে। বীজ পরিদর্শন ও পরীক্ষা করবে। বাজারের লেভেলযুক্ত বীজের নমুনা সংগ্রহ করে তা যথাযথভাবে পরীক্ষা করে ঘোষিত মানের সঠিকতা যাছাই করবে। কৃষি কাজে ব্যবহৃত সব ধরনের বীজের গুণগত মান নিয়ন্ত্রণ করবে সরকার। সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের বীজ প্রত্যয়ন করবে তারা।
কৃষক পর্যায়ে উন্নত বীজের ব্যবহার বাড়াতে সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে সহায়তা প্রদান করবে। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের উদ্ভাবিত নতুন জাতের ফসলের বীজ অবশ্যই বীজ বোর্ডের অনুমোদনে ছাড় করতে হবে। কোনো বীজ কৃষির জন্য ক্ষতিকর হলে বীজ বোর্ড তা বিক্রয়, বিতরণ বিনিময় এবং আমদানি সরবরাহ নিষিদ্ধ করতে পারবে।’
বীজ বোর্ডের বিষয়ে বলা হয়েছে-৩১ সদস্যের বোর্ডের সভাপতি হবেন কৃষি সচিব। তিন বছর মেয়াদের বোর্ড প্রতি ছয় মাস অন্তর সভা করবে। কৃষি মন্ত্রণালয়ের বীজ অনুবিভাগের মহাপরিচালক বীজ বোর্ডকে সাচিবিক সহায়তা দেবে। কৃষিসংশ্লিষ্ট সব প্রতিষ্ঠানের মহাপরিচালক, বন অধিদপ্তরের প্রধান বন সংরক্ষক, বন গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির মনোনীত বীজ বিষয়ে অভিজ্ঞ একজন প্রতিনিধি, দুজন কৃষক, বীজ কোম্পানির একজন প্রতিনিধি, বাংলাদেশ সোসাইটি অব সিড টেকনোলজির একজন প্রতিনিধি এবং বাংলাদেশ সিড অ্যাসোসিয়েশনের একজন প্রতিনিধি বীজ বোর্ডে প্রতিনিধিত্ব করবেন।
বীজ প্রত্যয়ন অধিদপ্তরের পরিদর্শক যে কোনো জাতের ফসল বা বীজের নমুনা সংগ্রহ করতে পারবে। এমনকি মালিকের অনুপস্থিতিতে দুজন সাক্ষীর উপস্থিতিতে যে কোনো দোকানের দরজা খুলে বীজ পরিদর্শন করতে পারবে। যার কাছ থেকে নমুনা বীজ সংগ্রহ করা হবে তাকে নমুনা সংগ্রহের বিষয়টি লিখিত আকারে জানাতে হবে। সংগৃহীত বীজ পরীক্ষা করে তা বীজের মালিককে লিখিত আকারে ফলাফল জানানো হবে।
বীজের মালিক নমুনার ফলাফল গ্রহণে অনাগ্রহ দেখালে তা পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থার জন্য সংরক্ষণ করবে। আইনের সংশোনীর খসড়ায় বলা হয়-বীজ পরিদর্শককে দায়িত্ব পালনে বাধা দানকারী সর্বোচ্চ ৯০ দিনের বিনাশ্রম কারাদণ্ড অথবা ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবে। অপরাধ সংগঠনে কেউ সহায়তা করলে সহায়তাকারীও একই দণ্ডে দণ্ডিত হবে। একই অপরাধের পুনরাবৃত্তি হলে সর্বোচ্চ দণ্ডের দ্বিগুণ হবে।
বীজ পরিদর্শকের লিখিত অভিযোগ ছাড়া কোনো আদালত এ আইনের অধীনে কোনো অপরাধের বিচার করতে পারবে না। এ আইনের অধীনে সংঘটিত অপরাধের বিচার ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমেও সম্পন্ন করা যাবে। যদি কোনো কোম্পানি বীজসংক্রান্ত অপরাধে জড়ান তাহলে কোম্পানির মালিক, পরিচালক, ম্যানেজার ও সচিব অপরাধ করেছে বলে গণ্য হবে।