ব্রিটেনে তীব্র খাদ্য সংকটের শঙ্কা

প্রকাশিত: মার্চ ২৮, ২০২৩; সময়: ৬:৪১ অপরাহ্ণ |
ব্রিটেনে তীব্র খাদ্য সংকটের শঙ্কা

পদ্মাটাইমস ডেস্ক : ১৯৭৭ সালের পর এবারই প্রথম যুক্তরাজ্যে খাদ্যপণ্যের দাম সবচেয়ে আকাশচুম্বী হয়েছে। ক্রমবর্ধমান ব্যয় আর অপ্রত্যাশিত আবহাওয়া দেশটির অভ্যন্তরীণ উৎপাদনকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।

যে কারণে দেশটিতে খাদ্য ঘাটতি তীব্র হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। আমদানি ব্যাহত হওয়ায় ব্রিটেনের নাগরিকরা তাজা সবজির ঘাটতির মুখোমুখিও হতে পারেন বলে সতর্ক করে দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

উত্তর আফ্রিকায় ফসলের উৎপাদনে ব্যাঘাত ঘটায় ব্রিটেনে খাদ্যশস্য ও সবজি সরবরাহ কমে গেছে। গত কয়েক সপ্তাহে ব্রিটিশ ক্রেতারা টমেটো, শসা এবং মরিচের ঘাটতির মুখোমুখি হয়েছেন।

যুক্তরাজ্যের কর অফিসের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে ২ লাখ ৬৬ হাজার ২৭৩ টন সবজি আমদানি করেছে ব্রিটেন; যা ২০১০ সালের পর যেকোনও জানুয়ারি মাসের আমদানির হিসেবে সবচেয়ে কম ছিল। যদিও দেশটির জনসংখ্যা এখনকার তুলনায় সেই সময় প্রায় ৭ শতাংশ কম ছিল।

চলতি বছর যুক্তরাজ্যে সালাদের বিভিন্ন ধরনের উপাদানের উৎপাদন রেকর্ড সর্বনিম্নে নামতে পারে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে। ব্যয়বহুল জ্বালানির কারণে ব্রিটিশ উৎপাদকরা গ্রিনহাউসে ফসল রোপণে বাধা পাওয়ায় উৎপাদন হ্রাস হওয়ার এই শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

চলমান এই কঠিন পরিস্থিতি ব্রিটেনে খাদ্য মূল্যস্ফীতিকে এমন এক স্তরে ঠেলে দিতে সহায়তা করেছে; যা গত প্রায় ৫০ বছরেও দেশটিতে দেখা যায়নি।

মঙ্গলবার বাজার গবেষক কান্তারের শিল্প তথ্য-উপাত্তে দেখা যায়, যুক্তরাজ্যে গত চার সপ্তাহের মধ্যে মুদিপণ্যের মূল্যস্ফীতি রেকর্ড সাড়ে ১৭ শতাংশে পৌঁছেছে। মূল্যস্ফীতির এই রেকর্ড দেশটির নীতিনির্ধারকদের জন্য মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

গ্রাহকরা বেশি খরচ করতে পারবেন না জেনে যুক্তরাজ্যের অনেক খুচরা খাদ্য বিক্রেতা এখন দোকানের জন্য কম পরিমাণে মালামাল ক্রয় করছেন। যা তাদের লাভের ওপর আঘাত হানছে।

ব্রিটিশ গ্রোয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) জ্যাক ওয়ার্ড বলেছেন, ব্রিটেনের তাজা খাদ্য উৎপাদকদের ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।

তিনি বলেন, উৎপাদকরা কতক্ষণ পর্যন্ত লোকসানে পণ্য উৎপাদন চালিয়ে যেতে পারেন, তার একটি সীমা রয়েছে।

গ্রীষ্মকালীন খরা এবং শীতের তুষারপাতের কারণে দেশটির কৃষক, কৃষক ইউনিয়ন এবং দোকানের মালিকরা সামনে আরও ঘাটতি দেখা দিতে পারে বলে সতর্ক করেছেন।

তবে শিগগিরই লিক, ফুলকপি এবং গাজরসহ বাসা-বাড়িতে উৎপাদিত অন্যান্য ফসল উঠবে বলে আশা করা হচ্ছে।

যুক্তরাজ্য সাধারণত মার্চ মাসে চাহিদার প্রায় ৯৫ শতাংশ টমেটো আমদানি করে। তবে জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এই আমদানির পরিমাণ ৪০ শতাংশে নেমে আসে।

গত বছর দেশটির সুপারমার্কেটগুলো রেশনিং পদ্ধতিতে ডিম বিক্রি করতে বাধ্য হওয়ার পর এবছর খাদ্য ঘাটতির এই সতর্কবার্তা দেওয়া হলো।

ব্রিটেনের আপেল ও নাশপাতি চাষীরাও বলেছেন, বাগান রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে পর্যাপ্ত গাছ লাগানো যাচ্ছে না। যদিও দেশটির সরকার ও সুপারমার্কেটগুলো বলেছে, তারা সরবরাহ স্বাভাবিক রাখার বিষয়ে আত্মবিশ্বাসী।

তবে সালাদ সংকট ব্রিটেনের তাজা পণ্য শিল্পের অনিশ্চিত অবস্থার কথা তুলে ধরছে। দেশটির কৃষকদের সংগঠন লি ভ্যালি গ্রোয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন। এই সংগঠনের সদস্যরা ব্রিটেনের শসা ও মিষ্টি মরিচের ফসলের প্রায় তিন-চতুর্থাংশ উৎপাদন করে।

সংগঠনটির সেক্রেটারি লি স্টিলস বলেছেন, মার্চ মাস নাগাদ দেশের প্রায় অর্ধেক এলাকায় রোপণ করা যায়নি। লি ভ্যালি গ্রোয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রায় ১০ শতাংশ সদস্য গত বছর তাদের ব্যবসা বন্ধ করে দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন তিনি।

পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে