প্রেসক্রিপশনে কমদামি ওষুধ লেখার নির্দেশ, ক্ষুব্ধ চিকিৎসকরা
পদ্মাটাইমস ডেস্ক : সাধারণ মানুষের চিকিৎসার খরচ কমাতে নতুন উদ্যোগ নিয়েছে ভারত। দেশটির সরকার চিকিৎসকদের নির্দেশ দিয়েছে তারা রোগীদের প্রেসক্রিপশনে কোনো ব্র্যান্ডের ওষুধ লিখতে পারবেন না।
এর বদলে জেনেরিক ওষুধ সেবনের পরামর্শ দিতে হবে। তবে এমন নির্দেশনায় ক্ষুব্ধ হয়েছে চিকিৎসকদের বৃহৎ সংগঠন ইন্ডিয়ান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (আইএমএ)।
নির্দেশনায় বলা হয়েছে, সরকার চায় ব্র্যান্ডের ওষুধের বদলে চিকিৎকসরা জেনেরিক ওষুধ সেবন করতে বলবেন। আর ব্র্যান্ডের তুলনায় জেনেরিক ওষুধের দাম ৩০ থেকে ৮০ শতাংশ কম।
উদাহরণস্বরূপ যখন চিকিৎসকরা জ্বরের রোগীকে চিকিৎসা দেবেন তখন তাদের ওষুধ হিসেবে প্যারাসিটামল দিতে হবে, প্যানাডোল অথবা ক্যালপোলের মতো ওষুধ দেওয়া যাবে না।
তবে চিকিৎসকরা এমন নির্দেশনাকে ‘লাইন ছাড়া ট্রেন চলার’ সঙ্গে তুলনা করেছেন। তাদের মতে, জেনেরিক ওষুধের গুণমানের কোনো নিশ্চয়তা দেওয়া যাবে না।
আইএমএ এ ব্যাপারে এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘গুণমান নিশ্চয়তা খুবই দুর্বল। বাস্তবিকভাবে জেনেরিক ওষুধের গুণমানের কোনো নিশ্চয়তা নেই, আর গুণমান সম্পর্কে নিশ্চিত না হয়ে রোগীকে এসব ওষুধ সেবনের পরামর্শ দিলে, এটি তাদের স্বাস্থ্যকে ঝুঁকিতে ফেলতে পারে।’
আইএমএ-এর সাবেক সভাপতি ডাক্তার জনরোজ অস্টিন জয়লাল ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানকে বলেছেন, ‘জেনেরিক ওষুধের মাত্র ২ শতাংশের গুণমান পরীক্ষা করা হয়েছে। এ কারণে আমি আমার জীবনে কখনো জেনেরিক ওষুধ সেবন করিনি।’
জেনেরিক ওষুধ উৎপাদনে ভারত বিশ্বে সবার উপরে রয়েছে। দেশটির সরকার ভারতকে ‘ফার্মেসি অব দ্য ওয়ার্ল্ড’ নামে পরিচিত করাতে চাচ্ছে। ২০২২ সালে ভারত ১৭ বিলিয়ন ইউরোর জেনেরিক ওষুধ রপ্তানি করেছে, যা বিশ্বের মোট জেনেরিক ওষুধ রপ্তানির ২০ শতাংশ।
তবে এসব ওষুধের বেশিরভাগই রপ্তানি করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদনপ্রাপ্ত গুটিকয়েক প্রতিষ্ঠান। তবে ভারতে হাজার হাজার ওষুধ উৎপাদনকারী রয়েছে। যেগুলোর ওষুধের গুণমান পরীক্ষা করার মতো পর্যাপ্ত সক্ষমতা নেই।
এছাড়া সাধারণ মানুষের মধ্যেও জেনেরিক ওষুধ নিয়ে খুব বেশি একটা বিশ্বাস নেই। তাদের একজন দিল্লির একটি বইয়ের প্রতিষ্ঠানের সম্পাদক অক্ষতা জৈন। তিনি তার অভিজ্ঞতায় জেনেছেন, কিছু জেনেরিক ওষুধ অনেক সময় ঠিকমতো কাজ করে না।
তিনি বলেছেন, এক বছর আগে তার এক কর্মী হাইপারটেনসন রোগে আক্রান্ত হন। তখন তাকে চিকিৎসক ওষুধ দেন। যেহেতু তাকে সারাজীবন এ ওষুধ খেয়ে যেতে হবে তাই তিনি তার ওই কর্মীকে জেনেরিক ওষুধ খাওয়ার জন্য বলেন।
কিন্তু ওই ওষুধে কোনোমতেই তার প্রেশার ঠিক হচ্ছিল না। তখন ভয় পেয়ে ওই কর্মীকে আরেক চিকিৎসকের কাছে পাঠান। তখন ওই চিকিৎসক তাকে তেলমা নামের একটি ব্র্যান্ডের ওষুধ দেন। ওই ওষুধ খাওয়ার এক সপ্তাহ পরই তার প্রেশার ঠিক হয়ে যায়।
এছাড়া ভারতে ওষুধের যেসব দোকানি আছেন তারা বড় প্রতিষ্ঠানের ব্র্যান্ডের ওষুধ ছাড়া অন্য ওষুধ রাখেনও না। কারণ জেনেরিক ওষুধে লাভ খুবই কম।
জেনেরিক ওষুধ পাওয়া যায় শুধুমাত্র সরকার পরিচালিত দোকানে। এছাড়া কেউ জেনেরিক ওষুধের খোঁজে ফার্মেসিতে গেলে দোকানিরা তাদের একই কাজের জন্য ব্র্যান্ডের ওষুধ নিতে বলেন।
আইএমএর বর্তমান সভাপতি ডাক্তার সারদ আগারওয়াল জানিয়েছেন, জেনেরিক ওষুধ দিলে চিকিৎসকদের সম্মান হানি হতে পারে। তিনি বলেছেন, ‘চিন্তা করুন আমার কাছে রোগী আসলেন আমি তাকে জেনেরিক ওষুধ লিখে দিলাম।
তিনি এটি সেবন করলেন কিন্তু ভালো হলেন না। তখন পরিচিত কেউ তাদের ব্র্যান্ডের ওষুধ নিতে বলল, আর তিনি ভালো হলেন। তখন ভাবুন তো চিকিৎসক হিসেবে আমার সম্মান কোথায় দাঁড়াবে।’