বাংলাদেশের ইতিহাসে এই দিনটি স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে : প্রধানমন্ত্রী
পদ্মাটাইমস ডেস্ক : দেশের ইতিহাসে আজকের দিনটি (১৭ আগস্ট) স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সর্বজনীন পেনশন স্কিম বিধিমালা-২০২৩ উদ্বোধন করায় দিনটির এই তাৎপর্যের কথা জানান সরকারপ্রধান।
বৃহস্পতিবার (১৭ আগস্ট) সকালে গণভবন থেকে এই কর্মসূচিতে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন প্রধানমন্ত্রী।
সর্বজনীন পেনশন সুবিধার উদ্যোগকে যুগান্তকারী উল্লেখ করে এর মাধ্যমে মানুষের কর্মজীবন পরবর্তী জীবন সুরক্ষিত হবে বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রায় ১০ কোটি মানুষের পেনশন সুবিধার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জকের দিনটি আমাদের অনন্য সাধারণ দিন। কারণ বাংলাদেশের ইতিহাসে এই দিনটি স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।
আজ আমরা আমাদের উন্নয়নের পরিকল্পনা, সেখানে তৃণমূলের মানুষ, অবহেলিত মানুষকে অন্তর্ভুক্ত করতে পারছি। সর্বজনীন পেনশন সুবিধা প্রণয়নের কারণ উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের সরকারি অফিসাররা পেনশন পায়।
তাদের অবসর জীবন-যাপনে তাদের একটা সুরক্ষা আছে। কিন্তু আমাদের সাধারণ মানুষ যখন কর্মক্ষমতা হারায় তখন তো তাদের আর কোনো সুযোগ থাকে না।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা ৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পর বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা—বিভিন্ন ভাতা চালু করি। এর কারণ হলো, অন্তত একজন বয়োবৃদ্ধ যেন তার বাড়িতে স্থান পায়। তার হাতে যেন কিছু টাকা থাকে, তিনি যেটা খরচ করতে পারেন। সংসার বা পরিবারের কাছে তার একটা মূল্য থাকে।’
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘অনেক আগে, আমি বাংলাদেশে আসার পর আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে একটা উদ্যোগ নিয়েছিলাম। কারণ আওয়ামী লীগের নেতারা সব সময় খুব নির্যাতিত হয়েছে।
সব সময় তাদের ওপর কারাযন্ত্রণা, তাদের ছেলে-মেয়েরা কষ্ট ভোগ করেছে, তাদের ওপর অকথ্য অত্যাচার, তাদের ধরে নিয়ে নির্যাতন, মেরে ফেলা, গুম করে ফেলা।
এই অবস্থা থেকে আমাদের নেতাকর্মী ও তাদের পরিবারের সুরক্ষার জন্য আমরা একটা উদ্যোগ নিয়েছিলাম। সেটা হচ্ছে আওয়ামী ফাউন্ডেশন গঠন করে তার মাধ্যমে এ ধরনের একটি পেনশন ব্যবস্থা আমরা কিন্তু প্রবর্তন করি।
শেখ হাসিনা বলেন, শোকের মাসেই আমরা এই পেনশন স্কিম উদ্বোধন করছি। কারণ আমার পিতা হয়তো দেখবেন। তিনি খুশি হবেন। তার প্রিয় দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য আমরা সর্বজনীন পেনশন চালু করছি। এতে তাদের অর্থনৈতিক সুরক্ষা থাকবে। কারও কাছে হাত পাততে হবে না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতার সংগ্রামের পথ বেয়েই আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি, জাতি হিসেবে মর্যাদা পেয়েছি। আমরা যদি স্বাধীনতা না পেতাম তাহলে আমাদের কোনো পরিচয় থাকত না।
আমাদের নিজস্ব কোনো পাসপোর্ট থাকত না। আমরা সবসময় অন্যের দ্বারা শোষিত-বঞ্চিত-নির্যাতিত থাকতাম। দেশের মোট জনগোষ্ঠীর একটি বড় অংশকে পেনশনের সুবিধায় আনতে যাচ্ছে সরকার। এর অংশ হিসেবে চার শ্রেণির প্রায় ১০ কোটি মানুষ পেনশন পেতে যাচ্ছেন।
সর্বজনীন পেনশন বিধিমালায় পৃথক চারটি স্কিম হলো- প্রবাসী বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য প্রবাস স্কিম, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদের জন্য প্রগতি স্কিম, স্বকর্মে নিয়োজিত নাগরিকদের জন্য সুরক্ষা স্কিম ও স্বকর্মে নিয়োজিত স্বল্প আয়ের নাগরিকদের জন্য সমতা স্কিম।
এর আগে গত ১৪ আগস্ট এই বিধিমালা চূড়ান্ত করে অর্থ মন্ত্রণালয়। এতে চার শ্রেণিকে বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। সেখানে চাকরিজীবীদের জন্য চারটি পৃথক স্কিম রাখা হয়েছে।
সেইসঙ্গে বিধিমালায় মোট ১৮টি ধারা রাখা হয়েছে। গত ২৪ জানুয়ারি সব নাগরিককে পেনশনের আওতায় আনতে সংসদে ‘সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনা বিল-২০২৩’ পাস হয়।
বিলে ১৮ বছর থেকে ৫০ বছর বয়সী সব নাগরিকের নির্ধারিত হারে চাঁদা পরিশোধ করে ৬০ বছর পূর্তির পর আজীবন পেনশন সুবিধা ভোগ করার বিধান রাখা হয়। আজীবন বলতে পেনশনারের বয়স ৭৫ বছর পর্যন্ত বিবেচনা করা হয়েছে।