ভারতে ৫ বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম বৃষ্টিপাত, কৃষি উৎপাদন নিয়ে শঙ্কা
পদ্মাটাইমস ডেস্ক : ভারতে চলতি বর্ষা মৌসুমে গত ৫ বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম বৃষ্টিপাত হয়েছে। এছাড়া জলবায়ু পরিবর্তন ও বিশেষ আবহওয়াগত অবস্থা এল নিনোর প্রভাবে চলতি বছরের আগস্ট মাস ছিল দেশটিতে গত এক শতাব্দীরও বেশি সময়ের মধ্যে সবচেয়ে শুষ্ক।
এতে করে দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশটিতে ক্ষতির মুখে পড়তে পারে কৃষি উৎপাদন। রোববার (১ অক্টোবর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই বছর বর্ষাকালে ভারতের বৃষ্টিপাত ২০১৮ সালের পর থেকে ছিল সর্বনিম্ন। এছাড়া আবহাওয়ায় এল নিনোর প্রভাবে গত এক শতাব্দীরও বেশি সময়ের মধ্যে গত আগস্ট মাস সবচেয়ে শুষ্ক ছিল বলে শনিবার দেশটির আবহাওয়া বিভাগ জানিয়েছে।
আল জাজিরা বলছে, ভারতের ৩ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারের অর্থনীতির জন্য দেশটিতে বর্ষাকাল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশের ফসলের জন্য প্রয়োজনীয় পানি এবং জলাধার ও জলাশয়গুলোকে পুনরায় পূরণ করতে সারা বছরের মোট বৃষ্টিপাতের ৭০ শতাংশের বেশি বৃষ্টিপাত বর্ষাকালেই হয়ে থাকে।
এছাড়া বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল এই দেশের প্রায় অর্ধেক কৃষি জমিতে সেচের অভাব রয়েছে। যার কারণে কৃষি উৎপাদনের জন্য ভারতে মৌসুমী বৃষ্টি আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। তবে চলতি বর্ষা মৌসুমে গত ৫ বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম বৃষ্টিপাত হওয়ায় কৃষি উৎপাদন ক্ষতির মুখে পড়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
আল জাজিরা বলছে, গ্রীষ্মকালীন বৃষ্টিপাতের ঘাটতি ভারতের প্রধান প্রধান পণ্য যেমন চিনি, ডাল, চাল ও শাকসবজিকে আরও ব্যয়বহুল করে তুলতে পারে এবং সামগ্রিক খাদ্য মূল্যস্ফীতি আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে।
এছাড়া চাল, গম এবং চিনির মতো পণ্যের দ্বিতীয় বৃহত্তম উৎপাদনকারী দেশ হচ্ছে ভারত। আর তাই বিশ্বব্যাপী খাদ্য মূল্যের ঊর্ধ্বগতির মধ্যে নিজেদের নিম্ন কৃষি উৎপাদন ভারতকে এই পণ্যগুলোর রপ্তানির ওপর আরও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে প্ররোচিত করতে পারে।
অনিয়মিত বৃষ্টি
ভারতের আবহাওয়া বিভাগ (আইএমডি) এক বিবৃতিতে বলেছে, চলতি বছরের জুন থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত সারা দেশে বৃষ্টিপাত হয়েছে দীর্ঘ-সময়ের গড় বৃষ্টিপাতের ৯৪ শতাংশ। যা ২০১৮ সালের পর থেকে সর্বনিম্ন।
অবশ্য এল নিনোর প্রভাব অনুমান করে ভারতের এই আবহাওয়া বিভাগ চলতি মৌসুমে ৪ শতাংশ কম বৃষ্টিপাত হতে পারে বলে আগেই অনুমান করেছিল। কিন্তু বর্ষায় বৃষ্টিপাত হয়েছে অনিয়মিত।
বর্ষার আগমনে দেরি হওয়ার কারণে জুনে গড় হারের চেয়ে বৃষ্টিপাত নয় শতাংশ কম হয়েছে, কিন্তু জুলাইয়ে আবার গড় হারের চেয়ে ১৩ শতাংশ বেশি বৃষ্টি হয়েছে।
তবে গড় হারের চেয়ে বৃষ্টিপাত ৩৬ শতাংশ কম হওয়ায় আগস্ট ছিল গত এক শতাব্দীরও বেশি সময়ের রেকর্ডে সবচেয়ে শুষ্কতম। কিন্তু সেপ্টেম্বরে আবার বৃষ্টিপাত বেশ ভালো পরিমাণে হয়েছে এবং এই মাসেই দেশটিতে স্বাভাবিকের চেয়ে ১৩ শতাংশ বেশি বৃষ্টি হয়েছে বলে আইএমডি জানিয়েছে।
এদিকে বর্ষাকালে বৃষ্টির এই অনিয়মিত বর্ষণ বিশ্বের বৃহত্তম চাল রপ্তানিকারক দেশ ভারতকে চালের রপ্তানি সীমিত করতে, পেঁয়াজ রপ্তানিতে ৪০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করতে, ডালের শুল্কমুক্ত আমদানির অনুমতি দিতে বাধ্য করেছে। এমনকি বৃষ্টিপাতের এই কম হারের কারণে বিশ্বে চিনি রপ্তানিও নিষিদ্ধ করতে পারে নয়াদিল্লি।
অবশ্য চলতি অক্টোবর মাস থেকে আগামী ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত ভারতে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত হবে বলে দেশটির আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে।
তবে অক্টোবরে দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশটির বেশিরভাগ জায়গায় তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি থাকতে পারে বলেও জানিয়ে দিয়েছে আইএমডি।