ভেজাল ও মজুতদারির বিরুদ্ধে আলেমদের ভূমিকা প্রয়োজন
নূর আহমাদ ও মো. আবু তালহা তারীফ : মুসলমান হতে হয় আচরণে, লেনদেনে, ব্যবসা-বাণিজ্যে। আমাদের একশ্রেণির ব্যবসায়ী এতটাই বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন যে, মানুষের রক্ত চোষাই তাদের একমাত্র টার্গেট হয়ে দাঁড়িয়েছে। আগে দাম বাড়লে একটি কি দুটি পণ্যের দাম বাড়ত। এখন সব পণ্যের দাম হু হু করে বাড়িয়ে দিচ্ছে সিন্ডিকেট। পবিত্র কুরআন থেকে জানা যায়, বাজার অস্থিতিশীল করার কারণে শোয়াইব নবির উম্মতকে আল্লাহতায়ালা চিরতরে ধ্বংস করে দেন। বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির বিরুদ্ধে জনসচেতনতা তৈরিতে আলেমদেরও ভূমিকা রাখা উচিত। এ প্রসঙ্গে তিনজন বিশিষ্ট ব্যক্তি কথা বলেছেন।
সাক্ষাৎকার নিয়েছেন নূর আহমাদ ও মো. আবু তালহা তারীফ
এএইচএম সফিকুজ্জামান
জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব)
মসজিদের ইমাম মানে একটি সমাজের নেতা। তিনি সমাজের সম্মানিত ব্যক্তি। সমাজের ছোট-বড় সবাই একজন ইমামকে সম্মান করে এবং তার কথা মন দিয়ে শোনে। একজন ইমাম যদি মসজিদে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির বিষয়ে ইসলামের দৃষ্টিকোণ থেকে আলোচনা করেন, তাহলে সমাজে যেসব অসাধু ব্যবসায়ী রয়েছে, তারা বুঝতে পারবে কী খারাপ কাজই না তারা করছে। তারা ইমাম সাহেবের কথা গুরুত্ব দিয়ে শুনবে। আমরা অনেক সময়ে ওয়াজ মাহফিলে আলেমদের বক্তব্য শুনে থাকি, সেখানে তারা সুদ-ঘুসের ব্যাপারে আলোচনা করে থাকেন, পাশাপাশি তারা যদি পণ্যে ভেজাল করা, বাজার অস্থির করা, মজুতদারি করে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি ইত্যাদি অপরাধের ভয়াবহতা কুরআন-হাদিসের দৃষ্টিতে তুলে ধরেন-তাহলে ভালো ফল আশা করা যায়।
আলেম-ওলামারা নিজ দায়িত্ববোধ থেকে এগিয়ে আসবেন এবং ভেজাল ও দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির ব্যাপারে বিশেষ ভূমিকা পালন করবেন-এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
হাফেজ মাওলানা মুফতি রুহুল আমিন
খতিব, বায়তুলমোকাররম জাতীয় মসজিদ
অবৈধভাবে পণ্য মজুত করাকে ইসলামে মহা অপরাধ হিসাবে সাব্যস্ত করা হয়েছে। পণ্যে ভেজাল দেওয়া, মজুতদারি করে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টিকারীদের প্রতি নবিজি (সা.)-এর রয়েছে ভয়াবহ সতর্কতা। এ বিষয়ে ইমামদের পাশাপাশি সমাজের সচেতন মানুষকে কথা বলতে হবে। এটা তো বাস্তব কথা, স্বাভাবিক কারণে নিত্যপণ্যের যে দাম বৃদ্ধি হয়ে থাকে, সেটার প্রতিকার করা কঠিন; কিন্তু সিন্ডিকেট করে নিত্যপণ্যের যে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করা হয়, প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেওয়া হয় এবং সাধারণ মানুষকে কষ্ট দেওয়া হয়-সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এসব অপরাধের সমাধান সম্ভব। মসজিদের মিম্বর থেকে ইমাম ও খতিবরা এ বিষয়ে কথা বলে থাকেন-আরও বেশি বলা উচিত। আসলে ওয়াজ-নসিহত তো হচ্ছে, আরও হবে; কিন্তু আমরা কি আমল করি? আমরা কয়জনে আমল করি? মনে করেন, ডাক্তার ওষুধ দিয়েছেন, আমি যদি ওষুধ না খাই তাহলে তো অসুখ ভালো হবে না। আলেম-ওলামা ও ইমাম-খতিবদের কথা শোনার-মানার ও আমল করার মানসিকতা তৈরি করতে হবে।
মাওলানা শরফুদ্দিন আল হুসাইনী
ইমাম ও খতিব, পুলিশ লাইন জামে মসজিদ, কুমিল্লা
মজুতদারির ফলে মানুষকে তাদের নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস উচ্চমূল্যে কিনতে হয়। মানুষের রক্ত চুষে মজুতদাররা তাদের স্বার্থপরতা, অবৈধ লাভ ও লোভের চরম বহিঃপ্রকাশ ঘটায়। ফলে জনগণ ক্ষতির সম্মুখীন হয়। এজন্য ইসলামে মজুতদারি হারাম। রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি পণ্য মজুত করে রাখবে সে ঘোরতর পাপী’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস নম্বর ১৬০৫)। রাসূল (সা.) আরও বলেন, ‘পণ্য আমদানিকারী রিজিকপ্রাপ্ত হয় আর মজুতদার অভিশপ্ত হয়’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস নম্বর ২১৫৩)। মজুতদারি রুখতে আলেমদের কিছু করণীয় আছে বলে মনে করি। লেনদেন, ব্যবসা-বাণিজ্য সম্পর্কেও কুরআন-হাদিসের হেদায়াতি নির্দেশনাগুলো মানুষের সামনে দরদি ভাষায় তুলে ধরা আলেমদের প্রথম কাজ। দ্বিতীয় কাজ হলো, মাঝে মধ্যে এলাকার ব্যবসায়ীদের সঙ্গে নিয়ে সভা-সেমিনার করে তাদের মনে আখেরাতের চিন্তা জাগ্রত করা। তৃতীয় কাজ, অবৈধ গুদামজাতসহ ব্যবসার হারাম কাজগুলো সম্পর্কে ইসলামের নির্দেশনাবলি গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে বেশি বেশি প্রচার করা।