কোন সদকার সওয়াব বেশি?
পদ্মাটাইমস ডেস্ক : কোরআন, হাদিসে গোপন ও প্রকাশ্যে দান সদকা করার কথা বলা হয়েছে। সদকা-সদকা বিপদাপদ থেকে মুক্ত করে। এর সওয়াব মানুষ পরকালেও পেয়ে থাকে।
হজরত আবু হুরায়াহ রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলে সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যখন কোনো ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করে, তার সব আমল বন্ধ হয়ে যায়, তবে তিনটি আমলের সওয়াব কেয়ামত পর্যন্ত জারি থাকে- সদকায়ে জারিয়া, উপকারী জ্ঞান, ভালো সন্তান যে তার জন্য দোয়া করে। (মুসলিম, হাদিস, ৪৩১০)
এক হাদিসে আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এসে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! সওয়াবের দিক থেকে কোন সদকা সবচেয়ে বড়?
উত্তরে তিনি বললেন, যখন তুমি সুস্থ-সবল, তোমার উপার্জিত সম্পদ তুমি তোমার নিজের কাছে রেখে দিতে চাচ্ছ, অভাবে পড়ে যাওয়ার আশঙ্কাও তোমার রয়েছে, তুমি সচ্ছলতার স্বপ্নও দেখ-এমন পরিস্থিতিতে তুমি যে দান করবে (সেটাই তোমার জন্যে অধিক প্রতিদান বয়ে আনবে)।
(দান-সদকার ক্ষেত্রে) তুমি এতটা বিলম্ব করো না যে, তোমার প্রাণ ওষ্ঠাগত হল আর তখন তুমি বলতে থাকলে-এটা অমুকের, এটা তমুকের। শোনো, এটা তো তখন অন্যদেরই হয়ে যায়। -(বুখারী, হাদিস, ১৪১৯, মুসলিম, হাদিস, ২৪২৯-২৪৩০)
অনেকসময় দেখা যায়, মানুষ যখন কোনো বিপদে পড়ে তখন সে দান করতে চায়। একইভাবে যখন অসুস্থতা, বার্ধক্য কিংবা অন্য কোনো পরিস্থিতির মুখে পড়ে কেউ নিজের জীবন সম্পর্কে নিরাশ হয়ে পড়ে, জীবন কিংবা নিজের উপার্জিত সম্পদ উপভোগ করার কোনো আশা আর তার থাকে না, তখনও সে সম্পদ গরীবদের দান করে দিতে চায়।
সুস্থ স্বাভাবিক অবস্থায় কেউ নিজের সম্পদ ইচ্ছেমতো দান করতে পারে। কিন্তু যদি মৃত্যুপরবর্তী সময়ের জন্যে ওসিয়ত করে যেতে চায়, তবে তা অবশ্যই রেখে যাওয়া সম্পদের এক তৃতীয়াংশের মধ্যে সীমিত থাকতে হবে। বাকিটা ওয়ারিশদের।
এ হাদীসের মূল মর্ম এটাই- দান যা করতে চাও, সুস্থ-স্বাভাবিক অবস্থাতেই করে নাও। মৃত্যু যখন তোমার দুয়ারে কড়া নাড়বে, তখন এটা-ওটা দান করার ওসিয়ত করতে থাকবে-এমনটা করার খুব সুযোগ নেই।
মানুষ যতদিন সুস্থ-সবল থাকে, দুনিয়ার রঙিন স্বপ্ন তাকে হাতছানি দিতে থাকে। একটি সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের আশায় সে বিভোর থাকে। অভাবের মুখে পড়ার আশঙ্কাও মনে উঁকি দেয়। আর শয়তান তো এ ভয় দেখানোতেই লিপ্ত। পবিত্র কোরআনের ভাষায়-
اَلشَّیْطٰنُ یَعِدُكُمُ الْفَقْرَ وَ یَاْمُرُكُمْ بِالْفَحْشَآءِ
শয়তান তোমাদেরকে দরিদ্রতার ভয় দেখায় আর তোমাদেরকে মন্দ কাজের (কৃপণতার) আদেশ করে। – (সূরা বাকারা, আয়াত, ২৬৮)
অভাব ও দরিদ্রতার এ ভয় ও আশঙ্কাকে উপেক্ষা করে, সম্পদের প্রতি স্বভাবজাত লোভ ও কার্পণ্যকে জয় করে যারা সম্পদ দান করতে পারে, সন্দেহ নেই, এজন্য নিজেদের মনের বিরুদ্ধে তাদের লড়াই করতে হয় অবিরাম। আর কষ্ট যেখানে বেশি, তা যদি সঠিক পন্থায় হয়, সওয়াবও সেখানে বেশি। সওয়াব ও প্রতিদানে সেটাই হবে সেরা।