সেরার স্বীকৃতি না পেয়ে জাতীয় দল ত্যাগ
পদ্মাটাইমস ডেস্ক : ম্যাক্স গ্রুপ ৩২ তম জাতীয় সাঁতারে পুরুষ বিভাগে সামিউল ইসলাম রাফি ও মহিলা বিভাগে সোনিয়া খাতুন সেরা সাঁতারু নির্বাচিত হয়েছেন।
এবারের জাতীয় সাতারে ছয়টি রেকর্ডের মধ্যে চারটিই করেছেন এই দুই জন। রেকর্ডের ভিত্তিতে সাতার ফেডারেশন রাফি ও সোনিয়া খাতুনকে সেরা সাঁতারুর স্বীকৃতি দিয়েছে।
সেরা স্বীকৃতি পাওয়া দুই সাঁতারু অবশ্য ব্যক্তিগত পদক তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে। পুরুষ বিভাগে কাজল মিয়া ৪ স্বর্ণ, ১ রৌপ্য এবং নারী বিভাগে সোনিয়া আক্তার টুম্পা ৫ স্বর্ণ ও ২ রৌপ্য নিয়ে প্রথম। ব্যক্তিগত পদক তালিকায় তারা স্বর্ণ পদকে এগিয়ে থাকলেও জাতীয় রেকর্ড নেই।
তাই পুরুষ বিভাগে ৩ রেকর্ড সহ ৩ স্বর্ণ জেতা সামিউল ইসলাম রাফি এবং মহিলা বিভাগে এক রেকর্ড সহ ৪ স্বর্ণ জেতা সোনিয়া খাতুনকে এবারের আসরের সেরার স্বীকৃতি দিয়েছে ফেডারেশন।
বেশি স্বর্ণ জিতেও সেরা সাঁতারুর স্বীকৃতি না পাওয়ায় প্রশ্ন তুলেছেন সোনিয়া আক্তার টুম্পা, ‘যে বেশি স্বর্ণ জিতবে সেই সেরা সাঁতারুর স্বীকৃতি পায়। স্বর্ণ অবশ্যই রেকর্ডের আগে বিবেচনায় আসবে। আগে এরকম থাকলেও এবারই দেখছি ভিন্ন নিয়ম।’
সাঁতার ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক এমবি সাইফের এই বিষয়ে ব্যাখ্যা, ‘সেরা পুরস্কারটা আমরা সাঁতারুদের উৎসাহ প্রদানের জন্য দিয়ে থাকি। রেকর্ডকে প্রাধান্য দিয়ে জুরি বোর্ড সেরা নির্ধারণ করে।
সেই বিবেচনাতেই সেরা সাঁতারু নির্বাচিত হয়েছে।’ সোনিয়া আক্তার টুম্পা সেরার মনোনয়ন নিয়ে অভিযোগ উত্থাপন করলেও পুরুষ বিভাগে বেশি স্বর্ণ পাওয়া কাজল মিয়া অবশ্য এই বিষয়ে কিছু বলেননি।
সেরা সাঁতারুর স্বীকৃতি না পেয়ে টুম্পা জাতীয় দলের ক্যাম্প থেকে অব্যাহতি চেয়ে সাধারণ সম্পাদক বরাবর চিঠি দিয়েছেন। সেই চিঠিতে স্বাক্ষর রয়েছে তার স্বামী আরেক জাতীয় সাঁতারু আসিফ রেজারও।
জাতীয় দল থেকে সরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়ার ব্যাপারে সোনিয়া আক্তার টুম্পা বলেন, ‘অনেক দিন সাঁতারে রয়েছি। নিজের সেরাটা দিয়েও যদি প্রাপ্য মর্যাদা না পাই তাহলে সেখানে থাকার যৌক্তিকতা নেই।
আন্তর্জাতিক সাঁতারের জন্য দল নির্বাচন নিয়েও ক্ষোভ রয়েছে টুম্পার। অন্য দিকে তার স্বামী আসিফ রেজার ক্যাম্প ছাড়তে চাওয়ার কারণ অবশ্য ভিন্ন, ‘আমি নাকি ডিসিপ্লিন না এ রকম অনেক কথা শুনতে হয়, তাই নিজে থেকেই সরে যাচ্ছি।’ দুই জনই এখন প্রতিষ্ঠিত সাঁতারু হলেও তাদের আচার-আচরণ নিয়ে সাঁতার অঙ্গনে প্রশ্ন রয়েছে।
দুই সাঁতারুর অব্যাহতি চাওয়া চিঠি নিয়ে ফেডারেশন আনুষ্ঠানিক কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি৷ গতকাল মাত্র জাতীয় সাঁতার শেষ হওয়ায় জাতীয় দলের ক্যাম্পে চলছে ছুটি।
কয়েকদিন পর পুনরায় ক্যাম্প শুরুর সময় খেলোয়াড় নির্বাচন করবে ফেডারেশন এবং নির্বাচিত খেলোয়াড়দের স্ব স্ব সংস্থার কাছে ক্যাম্পে যোগদানের জন্য চিঠি দেয়া হবে।
আসিফ ও টুম্পা অভিমান নিয়ে ক্যাম্প ছাড়তে চেয়ে চিঠি দিলেও তাদের পেছনে ফেডারেশনের যথেষ্ট অবদান রয়েছে। দুই জনই আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বেশ কয়েকবার সুযোগ পেলেও ফেডারেশনের কাঙ্খিতমাত্রা পূরণ করতে পারেননি।
সাম্প্রতিক সময়ে আসিফ ফেডারেশনের কাছে সিনিয়র সাঁতারু ও নানা ইস্যুতে অভিযোগ নিয়ে হাজির হতেন। স্ত্রীর সেরার স্বীকৃতি না পাওয়াকে সামনে এনে দুই জনই ক্যাম্প থেকে সরে যাওয়ার উপলক্ষ্য হিসেবে মনে করছেন সাঁতার সংশ্লিষ্ট অনেকে।
আবার অন্য দিকে আরেক সূত্র মতে, সেরার বিতর্ক ও ক্যাম্প ত্যাগ সামগ্রিক ঘটনার পেছনে কোচিং স্টাফের একাংশের ইন্ধন থাকতে পারে।
সেরা সাঁতারু নির্বাচন নিয়ে সাম্প্রতিক সময়ে এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়নি সাতার ফেডারেশন। স্বর্ণ এবং রেকর্ড উভয়ই বেশি এমন সাঁতারুই প্রথম ছিলেন। তাই সেরা নির্ধারণ প্রশ্নের মুখে পড়েনি।
এবার স্বর্ণ বেশি যাদের তাদের রেকর্ড নেই আবার যাদের রেকর্ড রয়েছে তাদের স্বর্ণ কম থাকায় এমন অবস্থার উপক্রম। গতকাল উপস্থিত অনেক কর্মকর্তাই রেকর্ডের পক্ষে সেরার স্বীকৃতি দিলেও ভিন্ন মতও ছিল কিছুটা।
রেকর্ডকে প্রাধান্য দিলে এক স্বর্ণ জিতেও অনেকে সেরা হবে আবার পাচটি স্বর্ণ জিতেও সেরার স্বীকৃতি মিলবে না এমন যুক্তিও উথাপিত হয়েছে। জাতীয় সাঁতারের ৩৩ তম আসর হলেও সেরা সাঁতারু নির্বাচনে ফেডারেশনের সুনির্দিষ্ট কোনো লিখিত নীতিমালা নেই।
আগে রেকর্ড না স্বর্ণ এটি যেমন প্রশ্ন তেমনি দু’টোই সমান হয় কোনো ক্ষেত্রে তখন কি হবে এরও কোনো উত্তর নেই তাই সামনের আসরের আগেই সেরা নির্বাচনে সুনির্দিষ্ট নীতিমালার প্রস্তাব এসেছে জোরালোভাবে। উল্লেখ্য, সেরা সাঁতারুর স্বীকৃতি শুধু ক্রেস্টেই, রেকর্ডধারীরা অবশ্য আর্থিক পুরস্কারও পান।