৯৯৯ এ ফোন দিয়ে মামলার আসামী হলেন দম্পতি

প্রকাশিত: অক্টোবর ২৩, ২০২৩; সময়: ১:৩৩ অপরাহ্ণ |
৯৯৯ এ ফোন দিয়ে মামলার আসামী হলেন দম্পতি

নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজশাহীতে যুবকের তালাকপ্রাপ্ত স্ত্রী ও তার বন্ধুদের দ্বারা শারীরিক নির্যাতনের শিকার হন সোহানা আক্তার রুহি নামের এক নারী উদ্যোক্তা। ১৭ অক্টোবর বিকেল ৫টার দিকে এই ঘটনা ঘটে।

এসময় নিজেকে হামলা ও শ্লীলতাহানির হাত থেকে রক্ষা করতে ফোন দেন পুলিশী বিশেষ সেবা নম্বর ৯৯৯ এ। তার আগেই স্থানীয় এলাকাবাসী এগিয়ে আসে নারী উদ্যোক্তা রুহিকে রক্ষা করতে। হামলাকারীদের দেন গণধোলাই।

এরই মধ্যে আরএমপির রাজপাড়া থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে হামলাকারীদের কয়েকজনকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। পরে রুহি তার স্বামী উৎস ও শাশুড়িকে সাথে নিয়ে রাজপাড়া থানায় অভিযোগ করার উদ্দেশ্যে যান।

সেখানে গিয়ে থানার সেকেন্ড অফিসার কাজল নন্দীর সাথে কথা বলতে গেলে তাদের একটি কক্ষে বসিয়ে রাখা হয়। পরে মিথ্যা মামলায় রুহি ও তার স্বামী উৎসকে আটক করে রাজপাড়া থানা পুলিশ।

রোববার বিকেলে রাজশাহী প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে ভুক্তভোগী নারী উদ্যোক্তা সোহানা আক্তার রুহি উপস্থিত সাংবাদিকদের কান্না জড়িত কন্ঠে ঘটনার বর্ননা দেন।

এসময় তিনি আরও বলেন, গত বছরের ০৩ নভেম্বর উৎস নামের ওই যুবকের পারিবারিক ভাবে বিয়ে হয় রুহি’র সাথে। উৎসের মহানগরীর দড়িখরবোনা মোড়ে একটি জেন্স পার্লার রয়েছে।

বিয়ের পর থেকেই উৎসের তালাকপ্রাপ্ত প্রথম স্ত্রী শারমিন আক্তার স্মৃতি ফেসবুক ও টিকটকের মাধ্যমে আপত্তিকর ভিডিও এবং ষ্টাটাস দিয়ে রুহিকে নিয়ে নানা ধরনের বিভ্রান্তমূলক খারাপ মন্তব্য করে আসছিলো। এভাবেই রুহিকে সামাজিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন করে আসছিলো বিগত ২ বছর ধরে।

এসব ঘটনার জের ধরে গত বছরের মার্চ মাসের ৬ ফেব্রুয়ারী উৎস ও রুহি বিয়ের শপিং শেষ করে তাদের পরিবারের সদস্যদের সাথে নিয়ে মহানগরীর সিএনবি মোড়ে পৌঁছানো মাত্র উৎসের তালাকপ্রাপ্ত স্ত্রী স্মৃতি ও তার সহযোগী কিশোর গ্যাং এর সদস্য রাদ, পলাশ, বিথি, তৃষা, বর্ণাসহ অজ্ঞাত আরও কয়েকজন মিলে তাদের এলাপাথারি ভাবে কিল, ঘুষি ও থাপ্পর মারতে থাকে।

পরে স্থানীয় জনগণ এগিয়ে এসে তাদের উদ্ধার করে। ঘটনার পর পরই রাজপাড়া থানায় গেলে তাদের কাছে থেকে সাদা কাগজে সাক্ষর নিয়ে থানা থেকে চলে যেতে বলেন। এ সংবাদটি বিভিন্ন জাতীয় ও স্থানীয় দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত হয়।

সংবাদ সম্মেলনে রুহি আরও বলেন, বিয়ের পর তার স্বামী আমির ফয়সাল উৎসের তালাকপ্রাপ্ত স্ত্রী শারমিন আক্তার স্মৃতিসহ তার টিকটকার কিশোর গ্যাংদের দ্বারা তিনি বিভিন্ন ভাবে হয়রানি হয়ে আসছেন।

গত ২০ দিন আগে বিষয়গুলো নিয়ে অভিযুক্তদের নাম উল্লেখ করে রাজপাড়া থানায় অভিযোগ দায়ের করলেও থানা কর্তৃপক্ষ তাদের বিরুদ্ধে আইনগত কোন ব্যবস্থা নেয়নি।

ফলে সন্ত্রাসীরা আসকারা পেয়ে গত ১৭ অক্টোবর বিকেলে নগরীর তেরোখাদিয়া এলাকায় রুহি তার বাবার বাড়ি হতে শশুড় বাড়ি ফেরার পথে রাদ, পলাশসহ অজ্ঞাত কয়েকজন তার পথ রোধ করে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজসহ নানা রকমের হুমকি দিতে থাকে।

এক পর্যায়ে তারা রুহির উপর হামলা চালিয়ে শ্লীলতাহানি করে। বিষয়টি দেখে স্থানীয়রা সন্ত্রাসীদের গণধোলাই দেয়।

এসময় নিজেকে রক্ষায় ৯৯৯ ফোন দিলে রাজপাড়া থানা পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে এবং সন্ত্রাসীদের ধরে থানায় নিয়ে যায়। এ ব্যাপারে থানায় মামলা দায়েরের জন্য গেলে সেকেন্ড অফিসার দীর্ঘক্ষণ তাদের বাসিয়ে রাখে।

আর অভিযুক্তদের ছেড়ে দেয়া হয় থানা থেকে। রাতেই হামলার ঘটনায় অংশ নেয়া রাদ নামের একজন হাসপাতালে গিয়ে ভর্তি হয়।

পরবর্তীতে রাদের স্ত্রী ফারহানা বিথী বাদী হয়ে তার ও তার স্বামী উৎসসহ আরও দুজনের নাম উল্লেখ করে রাজপাড়া থানায় মামলা দায়ের করেন।

সেই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে পরদিন ১৮ অক্টোবর বেলা ১২টার দিকে তাদের আদালতে পাঠানো হয়। সেই দিনই মামলায় জামিন পান রুহি। বর্তমানে তার স্বামী উৎস কারাগারে রয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এই মামলার সুষ্ঠু তদন্ত করে প্রকৃত দোষীদের আইনের আওতায় আনার জন্য পুলিশের আইজিপি, স্বারাষ্ট্রমন্ত্রী, পুলিশ কমিশনারসহ সকলের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

এ বিষয়ে রাজপাড়া থানার সেকেন্ড অফিসার কাজল নন্দী জানান, তার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ তোলা হয়েছে, তা সঠিক নয়। রুহি বেশ কয়েকদিন আগে থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছিলো।

তবে সেই অভিযোগের তদন্তকারী অফিসার তিনি ছিলেন না। এ বিষয়ে থানার অফিসার ইনচার্জ রফিকুল হকের সাথে কথা বলার পরামর্শ দেন তিনি।

এ ব্যাপারে রোববার সন্ধ্যায় রাজপাড়া থানার অফিসার ইনচার্জ রফিকুল হকের ব্যবহৃত সেল ফোনে যোগাযোগ করা হলে একজন ফোন রিসিভ করে বলেন, স্যার এখন ব্যাডমিন্টন খেলায় ব্যস্ত আছেন।

 

 

পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে