ফের সিসিইউতে খালেদা জিয়া

প্রকাশিত: অক্টোবর ২৪, ২০২৩; সময়: ১১:৩৬ পূর্বাহ্ণ |
ফের সিসিইউতে খালেদা জিয়া

পদ্মাটাইমস ডেস্ক : বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে সোমবার (২৩ অক্টোবর) রাতে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালের করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) নেওয়া হয়েছে।

শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাকে সেখানে নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক। এর আগেও খালেদা জিয়াকে একাধিকবার সিসিইউতে নেওয়া হয়।

এদিকে গতকাল রাতে খালেদা জিয়ার হাসপাতালে গিয়ে দেখে তার খোঁজখবর নিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

খালেদা জিয়ার চিকিৎসক বোর্ডের সদস্য অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন আজ মঙ্গলবার জানিয়েছেন, গতকাল দিবাগত রাত সাড়ে তিনটার দিকে খালেদা জিয়াকে সিসিইউতে নেয়া হয়।

প্রসঙ্গত, গত ৯ আগস্ট থেকে দুই মাসের বেশি সময় ধরে ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন খালেদা জিয়া।

বিএনপি নেত্রীর চিকিৎসার জন্য গঠিত মেডিকেল বোর্ডের সদস্যরা এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন, খালেদা জিয়ার জীবন ঝুঁকির মধ্যে আছে।

বেগম খালেদা জিয়ার মেডিকেল বোর্ড অনেক দিন ধরে তার লিভার প্রতিস্থাপনের জন্য বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার পরামর্শ দিয়ে আসছে।

ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেন, লিভার সিরোসিসের কারণে খালেদা জিয়ার হৃদ্‌যন্ত্র ও কিডনির জটিলতা বেড়েছে। তিনি হাসপাতালে কখনো কিছুটা ভালো থাকছেন, পরক্ষণেই তার স্বাস্থ্যের পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। এ কারণে তাকে কখনো কখনো সিসিইউতে নিতে হচ্ছে।

২৫ সেপ্টেম্বর খালেদা জিয়াকে স্থায়ীভাবে মুক্তি দিয়ে বিদেশে চিকিৎসা দেওয়ার অনুমতি চেয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছিলেন বিএনপির চেয়ারপারসনের ছোট ভাই শামীম ইস্কান্দার। কিন্তু সরকার সে আবেদন নাকচ করে দিয়েছে।

৭৮ বছর বয়সী খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে আর্থরাইটিস, ডায়াবেটিস, কিডনি, লিভার ও হৃদ্‌রোগে ভুগছেন।

দুর্নীতির দুই মামলায় সাজাপ্রাপ্ত খালেদা জিয়া ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি কারাবন্দি হন। দুই বছরের বেশি সময় কারাবন্দি ছিলেন সাবেক তিনি।

২০২০ সালের ২৫ মার্চ সরকার নির্বাহী আদেশে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় সাজাপ্রাপ্ত খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিত করে শর্ত সাপেক্ষে মুক্তি দিয়েছিল। এরপর থেকে ছয় মাস পরপর তার সাজা স্থগিত করে মুক্তির মেয়াদ বাড়াচ্ছে সরকার।

সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের একদফা দাবিতে আগামী ৩০ অক্টোবর সচিবালয় ঘেরাওয়ের প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি ও তার মিত্র দলগুলো। আগামী ২৮ অক্টোবর অনুষ্ঠেয় ঢাকার মহাসমাবেশ থেকে এই কর্মসূচির ঘোষণা দেওয়া হতে পারে।

সোমবার (২৩ অক্টোবর) রাতে রাজধানীর গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে গণতন্ত্র মঞ্চের সঙ্গে বিএনপির বৈঠকে ওই কর্মসূচির ব্যাপারে নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। মঙ্গলবার (২৪ অক্টোবর) রাতে অনুষ্ঠেয় বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এই কর্মসূচির বিষয়টি চূড়ান্ত করা হবে।

বৈঠক সূত্রে জানা যায়, বিএনপি ও তার মিত্ররা শান্তিপূর্ণভাবে ঢাকায় ২৮ অক্টোবরের মহাসমাবেশ করতে চায়। তবে আগামী ২৫ থেকে ২৭ অক্টোবর পর্যন্ত পরিস্থিতি কী হয় তার ওপরও কর্মসূচির ধরণ কী হবে তা নির্ভর করবে।

স্বাভাবিকভাবে মহাসমাবেশ করতে পারলে সেখান থেকে ঘেরাওয়ের ওই কর্মসূচির ঘোষণা আসবে। যদি তা না হয়, তাহলে তখন পরিস্থিতি অনুযায়ী আরও কঠোর কর্মসূচি আসতে পারে।

বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং সরকারি দল যদি মহাসমাবেশে বাধা দেয়, তাহলে প্রতিরোধ গড়ে তোলা হবে। বৈঠকে একদফার চূড়ান্ত আন্দোলনের কর্মসূচি হিসেবে ঘেরাও, বিক্ষোভ, অবস্থান, অবরোধ এমনকি হরতালের বিষয়েও আলোচনা হয়েছে।

বৈঠকে অংশ নেওয়া একজন নেতা জানান, আগামী ৩০ অক্টোবর যুগপৎ আন্দোলনের শরিক দলগুলো যার যার অবস্থান থেকে পদযাত্রা সহকারে সচিবালয় অভিমুখে রওনা হবে।

বিএনপি তাদের নয়াপল্টনস্থ দলীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে পদযাত্রা শুরু করবে। তাদের পদযাত্রার সম্মুখভাগে থাকবে ফ্যাসিবাদ বিরোধী ছাত্র ঐক্য, নারী ও শ্রমিক এবং সব শেষে বিএনপি।

বৈঠকে বিএনপির পক্ষে উপস্থিত ছিলেন, দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু ও যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল।

অন্যদিকে গণতন্ত্র মঞ্চ নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাইফুল হক, গণসংহতি আন্দোলনের জোনায়েদ সাকি, ভাসানী অনুসারী পরিষদের শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের হাসনাত কাইয়ূম ও জেএসডির শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন।

এর আগে একই স্থানে গণতন্ত্র মঞ্চের সঙ্গে বিএনপির হাইকমান্ডের ভার্চুয়ালি বৈঠক হয়। ওই বৈঠক সূত্রে জানা যায়, বৈঠকে হাইকমান্ডের পক্ষ থেকে গণতন্ত্র মঞ্চের উদ্দেশ্যে বলা হয়, বিএনপি কোনোভাবেই বর্তমান সরকারের অধীনে আগামী নির্বাচনে যাবে না।

আমাদের প্রত্যাশা, গণতন্ত্র মঞ্চও তাদের অধীনে ভোটে যাবে না। এসময় মঞ্চের নেতারা বিএনপির হাইকমান্ডকে আশ্বস্ত করেন, তারাও বর্তমান সরকারের অধীনে ভোটে যাবেন না।

এসময় গণতন্ত্র মঞ্চকে বিএনপির হাইকমান্ডের পক্ষ থেকে আশ্বস্ত করে বলা হয়, গণতন্ত্র মঞ্চ চলমান সরকারবিরোধী আন্দোলনে রাজপথে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। নির্দলীয় সরকারের অধীনে আগামী নির্বাচনে বিজয়ী হলে জাতীয় সরকারে গণতন্ত্র মঞ্চকে যথাযথ মূল্যায়ন করা হবে।

বৈঠক প্রসঙ্গে গণতন্ত্র মঞ্চের শীর্ষ নেতা ও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক এবং ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু কালবেলাকে বলেন, ‘আমরা শান্তিপূর্ণভাবে মহাসমাবেশ করতে চাই।

মহাসমাবেশে জনতার স্রোত নামাতে চাই। দাবি আদায়ে লক্ষ লক্ষ মানুষকে কর্মসূচিতে সম্পৃক্ত করে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে চাই।

তারা আরও বলেন, সরকারের আচরণ ও পরিস্থিতিই বলে দেবে তাদের কর্মসূচির ধরন কী হবে। তবে তারা শেষ পর্যন্ত কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ রাখতে চান।

পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে