যুদ্ধ-সহিংসতায় বিশ্বব্যাপী বাস্তুচ্যুত ১১৪ মিলিয়ন মানুষ
পদ্মাটাইমস ডেস্ক : বিশ্বব্যাপী ১১৪ মিলিয়নেরও বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ। যুদ্ধ, সংঘাত ও সহিংসতাসহ নানা কারণে গত সেপ্টেম্বর মাস নাগাদ ইউক্রেন, গাজা ও সুদানসহ বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের এতো বিপুল সংখ্যক মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন।
এদিকে রেকর্ড সংখ্যক মানুষের বাস্তুচ্যুত হওয়ার এই বিষয়টি ‘সংঘাত সমাধানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ব্যর্থতার’ কথাই সামনে এনেছে বলে জাতিসংঘ বলেছে। বৃহস্পতিবার (২৬ অক্টোবর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বব্যাপী যুদ্ধ, নিপীড়ন, সহিংসতা এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের কারণে বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা সেপ্টেম্বরের শেষে ১১৪ মিলিয়ন ছাড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে বুধবার জানিয়েছে জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআর।
বাস্তুচ্যুত মানুষের এই সংখ্যা গত বছরের শেষের তুলনায় ৫৬ লাখ বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়া ১৯৭৫ সালে পরিসংখ্যান রাখা ও ডেটা নিবন্ধন শুরু করার পর থেকে জাতিসংঘের এই এজেন্সির রেকর্ড করা বাস্তুচ্যুত মানুষের এই সংখ্যাটিই সর্বোচ্চ।
এক বিবৃতিতে ইউএনএইচসিআর বলেছে, চলতি বছরের প্রথমার্ধে বাস্তুচ্যুতির প্রধান কারণগুলো ছিল- ইউক্রেন, সুদান, মিয়ানমার ও ডেমোক্র্যাটিক রিপাবলিক অব কঙ্গোতে সংঘাত, আফগানিস্তানে মানবিক সংকট এবং সোমালিয়ায় বন্যা ও খরাসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং অস্থিতিশীলতা। এছাড়া ২০২৩ সালের মাঝামাঝি যারা নতুন করে বাস্তুচ্যুত হয়েছেন তাদের মধ্যে ১১ মিলিয়ন ইউক্রেনীয় রয়েছেন।
তারা রাশিয়ার আগ্রাসন থেকে বাঁচতে ঘরবাড়ি ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছেন এবং ৩ মিলিয়ন সুদানি নাগরিক আধাসামরিক র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সের বিরুদ্ধে দেশটির সেনাবাহিনীর সংঘাতে ঘরবাড়ি হারিয়েছেন। এদিকে ক্রমবর্ধমান এই বাস্তুচ্যুতির সংখ্যার সঙ্গে চলতি মাসে বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিদের সংখ্যাও নতুন করে যোগ হয়েছে।
শুধুমাত্র অক্টোবরেই অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের সর্বাত্মক বোমা হামলার মাধ্যমে ১৪ লাখ ফিলিস্তিনিকে তাদের বাড়িঘর থেকে পালাতে বাধ্য করা হয়েছে। জাতিসংঘের মানবিক সংস্থা ওসিএইচএ অনুসারে, ইসরায়েলি নির্বিচার এই হামলায় অনেক অঞ্চল ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।
জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার প্রধান ফিলিপ্পো গ্র্যান্ডি বাস্তুচ্যুত মানুষের দুর্দশাময় পরিস্থিতির সমাধানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ব্যর্থতার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছেন এবং সংকট সমাধানে নতুন করে চাপ দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
গ্র্যান্ডি এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘আমরা গাজা, সুদান এবং তার বাইরের ঘটনাগুলো যখন দেখছি, তখন শরণার্থী এবং অন্যান্য বাস্তুচ্যুত মানুষের জন্য শান্তি নিশ্চিত করা ও সংকট সমাধানের সম্ভাবনা বেশ কঠিন বলেই মনে হতে পারে।
কিন্তু আমরা হাল ছেড়ে দিতে পারি না। অংশীদারদের সাথে নিয়ে শরণার্থীদের সমস্যা সমাধানে পথ খুঁজে বের করার জন্য আমরা চাপ দিতে থাকব।
ইউএনএইচসিআরের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতদের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ লোকই আফগানিস্তান, সিরিয়া এবং ইউক্রেনের। মূলত বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যার দিক থেকে সিরিয়ার অবস্থান বরাবরের মতো শীর্ষে রয়েছে।
মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধবিধ্বস্ত এই দেশটির ৬৫ লাখ মানুষ বিশ্বের ১৩০টি দেশে ছড়িয়ে রয়েছে। এছাড়া সিরিয়ায় অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা আরও ৬৭ লাখ।