পাইপলাইন অটোমেশনে যাচ্ছে পেট্রোবাংলা
পদ্মাটাইমস ডেস্ক : প্রথমবারের মতো গ্যাস পাইপলাইন অটোমেশন করার উদ্যোগ নিয়েছে পেট্রোবাংলা। মূলত পাইপলাইন থেকে চুরি ও সিস্টেম লস ঠেকাতেই এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এজন্য নিয়োগ করা পরামর্শক প্রতিষ্ঠান এরই মধ্যে অটোমেশনের প্রস্তুতিমূলক কাজ প্রায় শেষ করেছে। গ্যাস নেটওয়ার্ক অটোমেশনে ঠিকাদার নিয়োগে সংস্থাটি আগামী বছর দরপত্র আহ্বান করবে বলে জানা গেছে।
পেট্রোবাংলার সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানান, আর্থিক ও কারিগরি প্রস্তুতি নির্ধারণ করতে সংযুক্ত আরব আমিরাতের মেসার্স আইএলএফ কনসাল্টিং ইঞ্জিনিয়ার্সকে পরামর্শক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। বিদেশি ওই প্রতিষ্ঠান অটোমেশনের কাজে প্রয়োজনীয় স্পেসিফিকেশন নির্ধারণ, ব্যয় প্রাক্কলন প্রণয়ন ও প্রকল্প বাস্তবায়নে ঠিকাদার নিয়োগের প্রকিউরমেন্ট ডকুমেন্ট প্রস্তুতের কাজ করবে। পরামর্শক প্রতিষ্ঠান তাদের কাজ প্রায় শেষ করে এনেছে। চলতি নভেম্বরে তারা রিপোর্ট জমা দেবে বলে জানিয়েছে। এ ছাড়া আইএলএফের বিল পরিশোধে ডলারের মূল্যহার নিয়ে একটি জটিলতা থাকলেও গত বৃহস্পতিবার এ-সংক্রান্ত অনুষ্ঠিত এক সভায় তা সমাধান করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, দেশে বর্তমানে বছরে প্রায় এক ট্রিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস ব্যবহৃত হয়। স্থানীয় খনিগুলো থেকে উত্তোলিত গ্যাসের সঙ্গে আমদানিকৃত এলএনজি মিশিয়ে গ্রাহক পর্যায়ে সরবরাহ করা হয়। আমদানিকৃত এ ব্যয়বহুল গ্যাস আনার পর জ্বালানি খাতে সার্বিক ব্যয় অনেক বেড়েছে। এই ব্যয় মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে সরকার। অথচ সাম্প্রতিক বছরগুলোতে গ্যাসে সিস্টেম লস বেড়ে গেছে। বছরে প্রায় ৭-৮ শতাংশ সিস্টেম লস হচ্ছে। এ সিস্টেম লসের ৫-৬ শতাংশই চুরি, যার পরিমাণ বছরে ৫০ বিলিয়ন ঘনফুটের বেশি। কিন্তু নানা উদ্যোগের পরও কোনো অবস্থাতেই চুরি ও অপচয় কমানো যাচ্ছে না। এ অবস্থায় চুরি ও অপচয় ঠেকাতে দৃশ্যমান উদ্যোগ নিয়েছে পেট্রোবাংলা।
এদিকে গত বৃহস্পতিবার পেট্রোবাংলার প্রজেক্ট ইমপ্লিমেন্টেশন কমিটির অনুষ্ঠিত সভায় লিখিতভাবে জানানো হয়, পরামর্শক প্রতিষ্ঠান গ্যাস বিতরণ কোম্পানিগুলো থেকে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহের কাজ শেষ করেছে। বিতরণ কোম্পানিগুলো হলো তিতাস, বাখরাবাদ, জালালাবাদ, কর্ণফুলী, পশ্চিমাঞ্চল এবং সিলেট গ্যাস ফিল্ড। ওই তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে তারা বেশ কয়েকটি রিপোর্ট তৈরি করে পেট্রোবাংলায় পাঠিয়েছে। সেই রিপোর্টগুলো আবার পেট্রোবাংলা সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলোতে পাঠায়। বর্তমানে কোম্পানিগুলোর পর্যালোচনার ভিত্তিতে রিপোর্টগুলো চূড়ান্ত করছে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান আইএলএফ কনসাল্টিং ইঞ্জিনিয়ার্স। বর্তমানে প্রকিউরমেন্ট ডকুমেন্ট, ব্যয় প্রাক্কলন রিপোর্ট প্রণয়ন এবং সিস্টেম নির্ধারণ বাকি রয়েছে।
জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, গ্যাসের সিস্টেম লসের বেশিরভাগই চুরি। এই চুরি নানা
প্রচেষ্টার পরও ঠেকানো যাচ্ছে না। কেননা চুরির সঙ্গে গ্যাস কোম্পানির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পাশাপাশি রাজনৈতিক ও বাণিজ্যিকভাবে প্রভাবশালী ব্যক্তিরাও জড়িত। অবৈধ গ্যাসলাইন বিচ্ছিন্ন করতে গিয়ে বিতরণ কোম্পানির কর্মীদের মার খাওয়ার ঘটনাও কম নয়। সঞ্চালন ও বিতরণ সিস্টেমকে অটোমেটেড করা হলে উৎস ও গ্রাহক পর্যন্ত গ্যাসের ট্র্যাক রাখা যাবে। এর ফলে কোনো প্রান্তে ও স্থানে কতটুকু গ্যাস ব্যবহার হয়েছে বা বেরিয়ে গেছে, তা শনাক্ত করা যাবে এবং সে অনুযায়ী গ্যাস বিল তৈরি করে গ্রাহকের কাছে পাঠানো যাবে। এ ছাড়া অটোমেশন নিশ্চিত হলে অবৈধ গ্রাহকদেরও চিহ্নিত করা যাবে এবং গ্যাস উত্তোলন-আমদানি-বিতরণ-বিল আদায়ের প্রকৃত চিত্র তাৎক্ষণিকভাবে জানা যাবে। এর ফলে গ্যাস বিল বকেয়ার পরিমাণও কমবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এ বিষয়ে কথা বলতে একাধিকবার পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যানের সঙ্গে যোগাযোগ করেও তাকে পাওয়া যায়নি।