তফসিল ঘোষণা হলে যা করতে চায় বিএনপি

প্রকাশিত: নভেম্বর ১১, ২০২৩; সময়: ৪:৫৭ অপরাহ্ণ |
তফসিল ঘোষণা হলে যা করতে চায় বিএনপি

পদ্মাটাইমস ডেস্ক : দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সকল প্রস্তুতি চুড়ান্ত করেছে নির্বাচন কমিশন। যে কোন সময় ঘোষণা হবে নির্বাচনের তফসিল। নির্বাচন কমিশন এমন ঘোষণা দেয়ার পর বিএনপি তাদের চলমান আন্দোলন কর্মসূচি কীভাবে আরও জোরদার করা যায় তা নিয়ে চিন্তাভাবনা শুরু করেছে।

এর অংশ হিসেবে বিএনপির সাথে এতদিন যুগপৎ আন্দোলনে থাকা দলগুলো ছাড়াও সরকার বিরোধী অবস্থানে আছে- এমন সব দলকে আনুষ্ঠানিক কিংবা অনানুষ্ঠানিক যেভাবেই হোক আন্দোলনের ‘এক ছাতার নীচে’ আনার জন্য চেষ্টা শুরু করেছেন দলের শীর্ষ নেতারা।

দলগুলোর মধ্যে সমঝোতা হলে নির্বাচন কমিশন তফসিল ঘোষণার সাথে সাথে বিএনপিসহ এসব দল যার যার অবস্থান থেকে একযোগে একই কর্মসূচি দিয়ে ‘আরও বড় ধরনের’ আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ার চেষ্টা করবে বলে বিএনপির একাধিক নেতা ইঙ্গিত দিয়েছেন। তবে সেই ‘বড় ধরনের’ কর্মসূচি বলতে কী বোঝানো হচ্ছে তার কোন ব্যাখ্যা দলটির নেতারা কেউ এখনি দিতে রাজী হননি।

বিএনপির মুখপাত্র এবং সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, তফসিল ঘোষণাকে কেন্দ্র করে আলাদা কোন কর্মসূচি দেয়া হবে কি না বা চলমান কর্মসূচির সাথে আরও কিছু যোগ করা হবে কি না- এসব বিষয়ে দলের নীতিনির্ধারকরা এখনো কিছু জানাননি।

তিনি বলেন, আমি শুধু এটুকু বলতে পারি এ সরকার ক্ষমতায় থাকলে নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষ হবে না। তাই সরকারের পদত্যাগের জন্য আমাদের এক দফার আন্দোলন চলছে এবং চূড়ান্ত দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তা অব্যাহত থাকবে বলেন বিএনপির এই নেতা।

গত ২৮ অক্টোবর ঢাকায় সমাবেশ পণ্ড হওয়ার পর থেকে ধারাবাহিকভাবে হরতাল ও অবরোধের কর্মসূচি পালন করে আসছে বিএনপি। রোববার সকাল ছয়টা থেকে মঙ্গলবার সকাল ছয়টা পর্যন্ত তারা চতুর্থ দফার অবরোধ কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছে। ওই দিনই আবার নতুন কর্মসূচি দেয়া হবে বলে দলের নেতারা জানিয়েছেন।

সে কারণেই এখন আলোচনায় আসছে যে নির্বাচন কমিশন সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করলে বিএনপি এখনকার মতো করে কর্মসূচি পালন করে যাবে, না কি বাড়তি কোন কর্মসূচির দিকেও তারা অগ্রসর হবে। আর অগ্রসর হলেও সেটি কীভাবে বাস্তবায়ন করা হবে তা নিয়েও নানা মত তৈরি হয়েছে দলের মধ্যে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপির এক নেতা জানান, নির্বাচন কমিশন তফসিল ঘোষণা করলেই বিএনপির সাথে এতদিন ধরে আন্দোলনে থাকা এবং এর বাইরেও সরকার বিরোধী যেসব দল আছে সবাইকে নিয়ে একযোগে ‘প্রতিবাদের ঝড়’ তোলাই হবে তাদের লক্ষ্য।

বিএনপি গত দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে বেশ কিছু দলের সাথে আন্দোলন কর্মসূচি পালন করে আসছিলো। গত ২৮ অক্টোবরের পর থেকে জামায়াতে ইসলামীও বিএনপির কর্মসূচির দিনে একই কর্মসূচি পালন করছে।

আবার চরমোনাই পীরের নেতৃত্বাধীন ইসলামী আন্দোলনসহ নির্বাচনী রাজনীতিতে সক্রিয় থাকে- এমন কিছু ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলও সরকারের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নিয়েছে। যদিও তারা বিএনপির সঙ্গে মিলে আন্দোলন করবে কি না এমন কোন তথ্য এখনো পাওয়া যায়নি।

বিএনপি নেতারা মনে করছেন, বিএনপির সঙ্গে একযোগে আন্দোলন না করলেও এসব দল নির্বাচন ইস্যুতে যে অবস্থান নিয়েছে, বিএনপিও সেই একই দাবিতে আন্দোলন করছে। ফলে কর্মসূচিগুলো একই ধরনের করা গেলে সেটি সরকারের ওপর বড় চাপ তৈরি করবে বলে দলটি মনে করে।

বিএনপির কেউ কেউ ধারণা দিয়েছেন অবরোধ বহাল রেখে ঘেরাও বা অবস্থান কর্মসূচির পালন করা যায় কি না তা নিয়েও আলোচনা আছে। যদিও এসব কিছুই নির্ভর করবে লন্ডনে অবস্থানরত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এবং আন্দোলনরত অন্য দলগুলোর শীর্ষ নেতাদের ওপর। ফলে সঙ্গত কারণেই এসব বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোন মন্তব্য করতে রাজী হননি বিএনপির নেতারা।

বিএনপি নেতাদের ধারণা, বিরোধী দলগুলো যখন নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন করে যাচ্ছে, তার মধ্যেই নির্বাচন কমিশন তফসিল ঘোষণা করলে তা নিয়ে প্রতিক্রিয়া আসবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দিক থেকেও।

তাদের এ ধারণার কারণ হলো, নির্বাচন নিয়ে গত এক বছরেরও বেশী সময় ধরে সক্রিয় যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্ব। বেশ কিছুদিন ধরেই যুক্তরাষ্ট্র নির্বাচন ইস্যুতে সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগ করে আসছে। এমনকি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন ব্যাহত করছে, এমন ব্যক্তিদের ওপর ভিসা নীতি প্রয়োগেরও ঘোষণা দিয়ে রেখেছে দেশটি।

এছাড়া ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও জাতিসংঘের দিক থেকেও নির্বাচন নিয়ে প্রতিনিয়ত বক্তব্য বিবৃতি আসছে। ইউরোপীয় পার্লামেন্ট ইতোমধ্যেই এ নিয়ে বেশ শক্ত ভাষায় একটি প্রস্তাবও গৃহীত হয়েছে।

একাদশ জাতীয় সংসদের মেয়াদ শেষ হবে আগামী ১৯ জানুয়ারি। ফলে ওই দিনের আগের নব্বই দিনের মধ্যে সংসদ নির্বাচন করার বাধ্যবাধকতার কথা উল্লেখ করে সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, দ্রুতই তারা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করবেন। নির্বাচন কমিশনের একটি তথ্যমতে, আগামী ১৪ নভেম্বর তফসিল ও আগামী বছরের ৬ জানুয়ারি নির্বাচন হতে পারে। এমনই টার্গেট নিয়ে কমিশন ভোট গ্রহনের সকল প্রস্তুতি চুড়ান্ত করছে।

পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে